কক্সবাংলা ডটকম(৪ নভেম্বর) :: সংসদের বাইরে থাকা অন্যতম বড় দল বিএনপিসহ ইসি সংলাপে এ পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ দলের দাবিকৃত নির্বাচনকালীন ‘সহায়ক সরকার’ সংবিধানের মধ্যে থেকেও গঠন করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন দেশের আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশ্লেষকরা। তবে এক্ষেত্রে বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে নমনীয় হতে হবে।
এক্ষেত্রে নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছোট্ট একটি মন্ত্রিসভা গঠন করে উপনির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপির ৩-৪ জনকে বিজয়ী করে নিয়ে এসে এই মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেয়া যেতে পারে। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন এই সরকারই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার হিসেবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে।
তাদের মতে, এ পদ্ধতিতে গেলে বিএনপির দাবি পূরণ করে সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করা সম্ভবপর হবে। ফলে একদিকে যেমন নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে অন্যদিকে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশও তৈরি হবে। বিরোধী দলগুলো আন্দোলনমুখীও হবে না।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে এ পর্যন্ত অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ দল ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার’ গঠনের দাবি জানিয়েছে। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সঙ্গে এখনো মতবিনিময় হয়নি।
৩১ জুলাই সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধির সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ইসি। আর ২৪ আগস্ট থেকে শুরু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শেষ হয়েছে।
সহায়ক সরকার গঠন বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান বলেন, সংবিধানের মধ্য থেকেই বিএনপিসহ সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব। সরকার, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী চাইলে সংবিধান সংশোধন না করেই নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব থাকার সুযোগ করে দিতে পারেন।
তিনি বলেন, এ জন্য বিএনপিকেও নমনীয় হতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকেও কিছুটা ছাড় দিতে হবে। যেহেতু বিএনপি সংসদে নেই, সেহেতু ৩ থেকে ৪টি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সেই উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে এমপি হিসেবে মন্ত্রিসভায় যোগ দিতে পারেন। সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকবেন।
১০ সদস্যের ছোট মন্ত্রিসভা করে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলো থেকেই মন্ত্রিসভার সদস্যদের নেয়া যেতে পারে। তবে নিরপেক্ষতার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া ওই সরকারের কাউকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেয়া যাবে না বলেও মত দেন তিনি।
সংবিধানের উদ্ধৃতি দিয়ে তারেক শামসুর রেহমান বলেন, সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচনকালে সরকার নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক সহায়তা করবে। তফসিল ঘোষণার পর সরকার কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ না করে বদলি পদায়নসহ কোনো কাজ করতে পারবে না।
বরং ওই সময় নির্বাচনের স্বার্থে কমিশন যা চাইবে, তা দিতে বাধ্য থাকবে সরকার। যা ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে রয়েছে। এসব বিষয় কিতাবে লিপিবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ করা উচিত বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর।
সংবিধানে দেয়া নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে সহায়ক সরকার ছাড়াও সাংবিধানিক সুবিধা আপনা-আপনিই ঘরে আসবে বিএনপির। তাতে আওয়ামী লীগের ওপরই উল্টো চাপ সৃষ্টি হবে।
এদিকে সংবিধানের বিধান বাস্তবায়ন করার পক্ষে আন্দোলন করলেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির জন্য সুযোগ তৈরি হবে বলে মনে করছেন আইন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, সহায়ক সরকারের দাবিতে না গিয়ে বরং ইসির স্বাধীনতাবিষয়ক সংবিধানের ১১৮ (৪) অনুচ্ছেদটি হুবহু নিশ্চিত করার আন্দোলন করলে বিএনপির জন্য তা সুফল বয়ে আনতে পারে।
সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকিবে এবং কেবল এই সংবিধান ও আইনের অধীন হইবে।’ ইসির স্বাধীনতাবিষয়ক এই অনুচ্ছেদটি বাস্তবায়নে বিএনপিকে জনমত গড়ে তুলতে হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে গেলে সংবিধানের ভেতরে থেকে বিএনপির লাভবান হওয়ার মতো আরো একাধিক ধারা সংবিধানে রয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে তারা সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
সংবিধানের ১২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হইবে।’
এই অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভাগ ও দফতরগুলো কার্যত ইসির অধীনে চলে যাবে। এক্ষেত্রে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা ইসির নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকাংশে নিরপেক্ষ থাকতে বাধ্য হবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি প্রায় সমান অবস্থানে থাকবে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা নির্বাচনী রোডম্যাপ প্রকাশকালে বলেন, ‘ইসির জন্য যেসব আইন-কানুন রয়েছে, সেগুলো আমাদের জন্য যথেষ্ট। তবে দেখার বিষয় হচ্ছে, আমরা এটার প্রয়োগ করতে পারছি কি না। তার জন্য আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। আবার সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদেরও দায়িত্ব রয়েছে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা। তারা এগিয়ে এলে আমাদের নির্বাচনী আইন-কানুন প্রয়োগ করতে সুবিধা হয়।’
Posted ৫:৪৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৪ নভেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta