শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সঞ্চয়পত্রের জন্য মানুষ হাহাকার !

বুধবার, ০৭ জুন ২০১৭
550 ভিউ
সঞ্চয়পত্রের জন্য মানুষ হাহাকার !

কক্সবাংলা ডটকম(৭ জুন) :: আগামী অর্থবছর থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমবে। তাই সুদহার কমার আগেই বর্তমানে রেটে সুদহার পেতে সঞ্চয়পত্র কিনে রাখছেন মানুষ। একসঙ্গে সবাই সঞ্চয়পত্রের উপর যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাপক আকারে সঞ্চয়পত্রের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ব্যাংকে, পোস্ট অফিসে ধর্না দিয়েও চাহিদানুযায়ী সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছেন না মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংক কর্মকর্তারাও সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কারসাজি করছে।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হওয়ায় সঞ্চয়পত্র সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। একসঙ্গে এত চাহিদা তৈরি হওয়ায় সময়মত ছাপা হয়ে আসছে না।

দেশের মোট জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত। এই অর্থনৈতিক স্তরের মানুষের জীবনকে কিছুটা সাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা দিতেই সঞ্চয়পত্র নামে স্কিম সরকারের। আর এর বিপরীতে বাড়তি সুদের ভর্তুকিও দিচ্ছে সরকার। সাধারণত, সমাজের সুবিধা বঞ্চিত, অবসরপ্রাপ্তদের সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রির অন্যতম উদ্দেশ্য। জনগণের মাঝে সঞ্চয়ের মনোবৃত্তি গড়ে তোলাও সঞ্চয়পত্রের আরেকটি উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে জনসাধারণের কাছ থেকে সরাসরি ঋণ নেয় সরকার। বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য অভ্যন্তরীণ উেসর অন্যতম এই সঞ্চয়পত্র।

রামপুরার বাসিন্দা সাবিহা সুলতানা  সোনালী ব্যাংকের এক শাখায় এসেছিলেন পারিবারিক সঞ্চয়পত্র কিনতে। কিন্তু চাহিদা মাফিক পাননি তিনি। ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে, সরবরাহ নেই, তাই এখন দেওয়া যাচ্ছে না। সঞ্চয়পত্র কিনে জীবন ধারণ করা মানুষদের অনেকেই তার মত দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।

তিনি বলেন, একে তো প্রয়োজন মতো পাওয়া যাচ্ছে না সঞ্চয়পত্র, তার ওপর কমছে সুদের হার। শুধু সাবিহা সুলতানা নয়, তার মত অনেকেই সঞ্চয়পত্র কিনতে এসে খালি হাতে ফিরছেন।

সোনালী ব্যাংকের উপ মহা-ব্যবস্থাপক আশরাফ আলী পাটোয়ারী বলেন, প্রতিদিনই সঞ্চয়পত্র বিক্রি হচ্ছে গড়ে ২৫০ কোটি টাকার ওপরে। তাই চাহিদা অনুযায়ী, সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মানুষের সঞ্চয়যোগ্য অর্থ বিনিয়োগের জন্য খুব বেশি বিকল্প জায়গা নেই। পুঁজিবাজারে যাবার মতও পরিস্থিতি নেই। ফলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ দিন দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, উচ্চ আয়ের মানুষও অনেক ক্ষেত্রেই এ সুবিধা নিচ্ছে। কীভাবে এটি রোধ করা যায়—সংশ্লিষ্টদের সে বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার।

তিনি বলেন, বাড়তি বিক্রির কারণে সুদ পরিশোধ বাবদ রাজস্ব ব্যয় বাড়বে। তাই যারা সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য উপযোগী না তারা যেন সঞ্চয়ত্র কিনতে না পারে সে বিষয়টি সরকারকে সঠিকভাবে মনিটরিং করতে হবে এবং বন্ধ করতে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক কমালে মধ্যবিত্ত শ্রেণি সঞ্চয়ে উত্সাহ হারাবে। আর এখনই সঞ্চয়পত্রের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হচ্ছে। কালোবাজারিরা বেশি সঞ্চয়পত্র কিনে এ সঙ্কট আরো প্রকট করতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমদ বলেন, যারা ট্যাক্স রিটার্ন দেবেন কেবল তারাই সঞ্চয়পত্র কিনবেন এমন নিয়ম করলে সঞ্চয়পত্রের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব হবে। একটা বিশেষ শ্রেণির জন্য সঞ্চয়পত্র খোলা হয়েছিল। তবে এখন তা ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ম করতে পারলে ওই সুবিধাবঞ্চিত শ্রেণি সুবিধা পাবে। সঞ্চয়পত্র সুদের হার কমালে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন বলেও তিনি মনে করেন।

সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানোর ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন হলেই নতুন সুদহার কার্যকর হবে। তাই সুদের হার কমার আগেই সঞ্চয়পত্র কেনার হিড়িক লেগেছে। অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে মানুষ লাইনধরে সঞ্চয়পত্র কিনছেন।

সঞ্চয়পত্র বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার পর আগের যেকোন সময়ের চেয়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে গেছে।

নিয়মানুযায়ী যেদিন সঞ্চয়পত্র সুদের হার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয় সেদিন থেকেই নতুন সুদহার কার্যকর হয়ে থাকে। কবে নতুন প্রজ্ঞাপন হবে সে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত নয়। যদিও অর্থমন্ত্রী বলেছেন বাজেটের পর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হবে। তবে যেকোন সময় প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে আগেভাগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন অনেকেই।

এদিকে গতকাল অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ব্যাংকে আমানত রাখলে যে সুদ পাওয়া যায় তার চেয়ে মাত্র দুই শতাংশ বেশি সুদ থাকবে সঞ্চয়পত্রে। এতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক কমে যেতে পারে।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসেই (জুলাই-এপ্রিল) সঞ্চয়পত্র বিক্রির আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এ সময়ে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৪২ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের পুরো সময়ে নিট বিনিয়োগ এসেছিল ৩৩ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের পুরো সময়ের জন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। সে হিসাবে দেখা যাচ্ছে ১০ মাসেই লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণেরও বেশি সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে।

দেখা গেছে, দেশে কার্যরত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্থায়ী আমানত রাখলে গড়ে পাঁচ থেকে ৬ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাচ্ছে, যা সঞ্চয়পত্রের সুদের তুলনায় অনেক কম। ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ বা মুনাফা গড়ে ২ শতাংশ হারে কমানোর পরও সব স্কিমের বিপরীতে এখনো ১১ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে সঞ্চয়পত্রে একই সুদহার থাকলেও প্রতিনিয়ত কমছে ব্যাংকের আমানতের সুদের হার।

ফলে ব্যাংক থেকে আমানত তুলে সঞয়পত্রে বিনিয়োগ করছে মানুষ। একইভাবে অন্যান্য জায়গা থেকেও বিনিয়োগ তুলে নিয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ লাভজনক হওয়ার পরও সেখানে অনেক ঝুঁকিও আছে। তাই অনেকেই সেখানে না গিয়ে ঝুঁকিহীন ও নিশ্চিত লাভের ক্ষেত্র সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সঞ্চয়পত্র থেকে বিপুল পরিমাণে এ ঋণ সরকারের সুদ ব্যয় বাড়াচ্ছে। বর্তমানে ট্রেজারি বিলের বিপরীতে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ সুদে ৯১ দিন মেয়াদি ঋণ পাচ্ছে সরকার। পাঁচ বছর মেয়াদি ঋণ নিতে পারছে ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ সুদে। তবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ব্যাপক অর্থ আসায় কম সুদের এ সুফল নিতে পারছে না সরকার।

অন্যদিকে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে তার চেয়ে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছে। এতে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সরকারের ঋণের বোঝা বাড়ছে। অন্যদিকে যে টাকা দিয়ে মানুষ বিনিয়োগ করত এখন তা দিয়ে মানুষ সঞ্চয়ত্র কিনছে। ফলে সঞ্চয়পত্র কেনায় কমছে বিনিয়োগও।

দেখা গেছে, আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি মেটাতে, ৩০ হাজার কোটি টাকার ওপরে এ খাত থেকে ঋণ নিতে চায় সরকার। আর আগামী বছরে সুদের জন্য সরকারকে ৪১ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। তাই সঞ্চয়পত্রের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনার দাবি অর্থনীতিবিদদের। আর নির্ভরশীলতা থাকলেও সুদের হার বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করার দরকার।

550 ভিউ

Posted ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৭ জুন ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com