মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমাল সরকার

বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১
287 ভিউ
সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমাল সরকার

কক্সবাংলা ডটকম :: শিল্প উদ্যোগ ও পুঁজিবাজারে বড় বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে  প্রায় ৬ বছর পর সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে সুদহার কমিয়েয়েছে সরকার। এখন থেকে ১৫ লাখ টাকার বেশি এবং নতুন করে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে মুনাফা কম পাবেন গ্রাহকরা।

নতুন সুদহারের আওতায়, যেকোনো সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমানো হয়েছে। বিনিয়োগ ৩০ লাখ টাকা অতিক্রম করলে, সুদহার প্রায় ২ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগে সর্বোচ্চ ১০.৭৫ শতাংশ এবং ৩০ লাখ টাকায় সর্বোচ্চ ৯.৭৫ শতাংশ সুদ পাওয়া যাবে।

এর আগে, ২০১৫ সালে ১৩ শতাংশ থেকে ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমিয়ে সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদহার ১১.৭৬ শতাংশ করা হয়েছিল।

মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) অর্থমন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র, পরিবার পেনশনার সঞ্চয়পত্র, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক-সাধারণ হিসাব, ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক-মেয়াদি হিসাবসহ সবক্ষেত্রেই সুদহার কমেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (সঞ্চয়) যুগ্মসচিব সুরাইয়া পারভীন শেলী বলেন, সঞ্চয়পত্রের টাকা ঋণ হিসাবে নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করে সরকার। পরবর্তীতে তার সুদ প্রদাণ করতে হয়। অন্যান্য ঋণ থেকে এর সুদহার অনেক বেশি হওয়ায়, তা কমানোর প্রস্তাব বহু আগে থেকেই এসেছে। সরকারের সুদের দায়বদ্ধতা কমাতে নতুন সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সঞ্চয়পত্রের একটা উদ্দেশ্য হলো- বৃদ্ধ, নারী, পঙ্গুসহ বিশেষ শ্রেণির মানুষের স্বল্প পুঁজি থেকে একটা মুনাফা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের স্বচ্ছল রাখা। অথচ দেশের সম্পদশালীদের একটি বড় অংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে রাখছেন। এই চক্রটি ভেঙ্গে শিল্প ও শেয়ারবাজারের মতো জায়গায় বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

নতুন নিয়মের আওতায়, যারা পাঁচ বছর মেয়াদি  সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছেন, তারা মেয়াদ শেষে ১০.৩০ শতাংশ হারে সুদ পাবেন।

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন অনুসারে, বিনিয়োগ ৩০ লাখের বেশি হলে প্রদত্ত মুনাফা ৯.৫ শতাংশ হবে।

অন্যদিকে, ৩ বছর মেয়াদি  সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকা বেশি বিনিয়োগকারীদের প্রদত্ত সুদ কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর এতে ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারীদের দেওয়া হবে ৯ শতাংশ হারে।

তবে অবসরপ্রাপ্তরা পেনশনার সেভিংসে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারী হলে, তাদের ১০.৭৫ শতাংশ সুদ দেওয়া হবে, আর তাদের বিনিয়োগ ৩০ লাখের বেশি হলে, সুদহার হবে ৯.৭৫ শতাংশ।

পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগকারী ১০.৫০ শতাংশ সুদ পাবেন, অন্যদিকে এতে ৩০ লাখের বেশি বিনিয়োগকারীকে ৯.৫০ শতাংশ হারে সুদ দেওয়া হবে।

প্রজ্ঞাপন অনুসারে, যারা এখন থেকে সঞ্চয়পত্র কিনবেন, তাদের ক্ষেত্রেই পরিবর্তিত এসব সুদহার কার্যকর হবে।

তাছাড়া, আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর, একই অঙ্কের পুনঃবিনিয়োগের ওপর নতুন সুদহার আরোপিত হবে।

ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক উভয় ধরনের বিনিয়োগকারীর ক্ষেত্রেই কার্যকর হচ্ছে নতুন নিয়ম।

বর্তমানে তিন বছর মেয়াদি  সঞ্চয়পত্রে প্রদত্ত সুদহার ১১.০৪ শতাংশ, পাঁচ বছর মেয়াদি তে ১১.২৮ শতাংশ, একই মেয়াদি  পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ১১.৭৬ শতাংশ এবং পাঁচ বছর মেয়াদি  পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১১.৫২ শতাংশ।

অন্যদিকে, ডাকঘর সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে প্রদত্ত ৭.৫ শতাংশ সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

প্রায় দুই বছর আগে ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে ডিপোজিটে সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার। তখন থেকেই সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানোর আলোচনা আসে। তবে তখন অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর, উৎসে আয়কর কর্তনের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছিল।

এখন সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানো যৌক্তিক এবং বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে বাকী ছিল বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, “২০১৫ সালের পর সম্ভবত আর সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমেনি। এই বিশাল সময়ের মধ্যে দেশ-বিদেশের সব ইনস্ট্রুমেন্টের সুদহার কমেছে। বিনিয়োগ সহজতর হয়েছে। ফলে সরকারের ওপর বোঝা হয়ে থাকা, এই সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোটা যৌক্তিক। দেশ-বিদেশের অন্যান্য বিনিয়োগ কাঠামোগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রেখেই সঞ্চয়পত্রে সুদের হার নির্ধারিত হওয়া উচিত।”

ড. জাহিদ আরও বলেন, “সঞ্চয়পত্রকে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের সামাজিক নিরাপত্তার জন্য একটা ইনস্ট্রুমেন্ট বলা হলেও এখানে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নেই। মূলত সরকারি চাকরিজীবিরা অবসরের পর বিপুল পরিমাণ টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেন। কেউ আবার অলস টাকায় সঞ্চয়পত্র কিনে সরকারের ঋণ বাড়ান।”

গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার, যা মূল বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণেরও বেশি। সব মিলিয়ে গত জুন পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪৪ হাজার ৯৪ কোটি টাকা।

মূলত সঞ্চয়পত্রের বাইরে বিনিয়োগ করে তেমন সুদ না পাওয়ায়, এখানেই এখন বেশি ঝোঁক বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের। গত অর্থবছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে নিট ২০ হাজার কোটি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, আর চলতি অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।

তবে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার কমানোর সমালোচনা করছেন সাধারণ গ্রাহকরা। পেনশনার ও পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার অপরিবর্তীত রেখে ৭০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মত দিয়েছেন সরকারের একজন সাবেক যুগ্মসচিব আনোয়ার পারভেজ।

তিনি বলেন, “পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফা অপরিবর্তিত রেখে, সর্বোচ্চ বিনিয়োগসীমা ৭০ লাখ টাকা করা উচিত ছিল। তা নাহলে, অবসরভোগীদের টাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এবং শেয়ার বাজারে যাবে। যেখানে প্রতারিত হওয়ার ভয় রয়েছে। ফলে বৃদ্ধ, নারী, পঙ্গু যারা সঞ্চয়পত্র দিয়ে চলেন, তারাও বিপদে পড়বেন।”

প্রবাসীদের বন্ডের মুনাফাও কমল:

সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি প্রবাসীদের বিভিন্ন বন্ডের মুনাফা হার কমানো হয়েছে। ফলে দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশিরা ডলারে যেসব বিনিয়োগ করেন, তাঁদেরও মুনাফা কমবে। তবে নতুন করে বিনিয়োগ করা বন্ড থেকে শুধু মুনাফা কমবে। আগের কেনা বন্ডে মেয়াদ পূর্তি না হওয়া পর্যন্ত, আগের মুনাফাই দেয়া হবে।

প্রবাসীদের তিনটি বন্ড হলো- ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড ও ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড। এসব বন্ড পাওয়া যায় বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস, দেশী ব্যাংকের বিদেশি কোনো শাখা ও বাংলাদেশের ব্যাংক শাখায়। আবার এসব বন্ডের বিপরীতে দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণও পাওয়া যায়। বিনিয়োগ করা অর্থ চাইলে আবার বিদেশেও ফেরত নেওয়া যায়।

ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড পাঁচ বছর মেয়াদি। এতে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ২০ শতাংশ পর্যন্ত। এখন ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার হবে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ। ৩০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার হবে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর ৫০ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মেয়াদ শেষে মুনাফা হবে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ হারে। প্রবাসীরা মূলত এই বন্ডে বিনিয়োগ করেন।

ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড তিন বছর মেয়াদি। এই বন্ডে বিনিয়োগে মুনাফার হার পরিবর্তন করা হয়নি। বর্তমানে এই বন্ডে মেয়াদ শেষে মুনাফার হার সাড়ে ৭ শতাংশ।

জাহিদ হোসেন বলেন, “ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডের ক্ষেত্রে যে সুদহার ছিল সেটিও এতদিন অনেক বেশি ছিল। এর সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কিনা- তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে সুদহার কম হওয়ায়, অনেকেই ইউএস ডলারে বিনিয়োগ করে তা মুনাফাসহ ফেরত নিয়ে যেতে পারেন। ফলে এর সুদহার কমানো যৌক্তিক।”

287 ভিউ

Posted ২:৫১ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com