কক্সবাংলা ডটকম(৩১ জুলাই) :: সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে লাগাম টানতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন সার্কুলার জারি করেছে। এছাড়া কিছু নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। তবে নতুন করে সুদের হারে পরিবর্তন আনা হয়নি। নতুন নিয়ম চালু করার উদ্দেশ্যের মধ্যে অন্যতম হলো সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে লাগাম টেনে ধরা ও নতুন করদাতা খুঁজে বের করা।
বাংলাদেশের অনেক মানুষ জমানো টাকা বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয়পত্রকে প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নেন। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা টাকা থেকে যে সুদ আসে সেটি দিয়ে অনেকে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। তাছাড়া অন্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা নিরাপদ এবং বেশি লাভ থাকায় মানুষ সেদিকেই আকৃষ্ট হয়। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি সরকারের জন্য ঋণ।
এই ঋণের সুদ মেটানোর জন্য প্রতি বছর সরকারকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়। এজন্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কিছু লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছে সরকার। ফলে এক বছর আগে সুদের হারে পরিবর্তন এনেছিল সরকার।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সর্বশেষ ২০২২ সালের জুন মাসে বাজেট ঘোষণার পর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে সঞ্চয়পত্র ক্রয় কিছুটা কঠিন করা হয়েছে।
জানা গেছে, সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তর ও সরকারি গেজেট অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক হিসেবে ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ আইন, ২০২২ এর ৪৮ ধারা যথাযথ পরিপালনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, এখন থেকে যদি কোনো ব্যক্তি সঞ্চয়পত্রে ৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ অথবা পোস্টাল সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট খুলতে চান, তবে সর্বশেষ বছরের আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। এতদিন ২ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক ছিল। সরকার মনে করছে, আপনার আয় করযোগ্য আয়ের সীমায় আছে। একইভাবে যদি কোনো গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থাকে, তাতে যেভাবেই হোক ক্রেডিট ব্যালান্স ১০ লাখ টাকা অতিক্রম করলে ব্যাংককে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র দিতে হবে।
একই ঘটনা ঘটবে ৫ লাখ টাকার বেশি ব্যাংক ঋণ আবেদনে বা ক্রেডিট কার্ড নেয়ার ক্ষেত্রে। অর্থাৎ আয়কর রিটার্ন জমা না দিয়ে এর কিছুই আপনি করতে পারবেন না। আয়কর আদায় বাড়াতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বেশকিছু ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। এগুলোর অনেক ক্ষেত্রে আগে শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন সনদ) জমা দিলেই হতো। এখন থেকে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে।
এর আগে অভিযোগ উঠে, সঞ্চয়পত্র কেনার সময় ব্যাংকগুলো নানাভাবে গ্রাহকদের হয়রানি করছে। অহেতুক হয়রানির কারণে গ্রাহক যথাসময়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারছে না। এতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছেন গ্রাহক। এটা বন্ধ করতে এর আগে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে হয়রানি বন্ধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নির্দেশনায় বলা হয়, যিনি সঞ্চয়পত্র কিনতে চান, তার আবেদন ইস্যু অফিস কর্তৃক গ্রহণের পর ওই তারিখ থেকে পরবর্তী এক কর্মদিবসের মধ্যেই ক্রেতার দাখিল করা চেক ক্লিয়ারিংয়ের জন্য উপস্থাপন করতে হবে। এছাড়া গ্রাহক কর্তৃক ডেবিট অথরিটির মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য আবেদন করা হলে গ্রাহকের হিসাব ডেবিট করার তারিখ এই গ্রাহকের অনুকূলের সংশ্লিষ্ট ইনস্ট্রুমেন্ট ইস্যু করতে হবে।
এছাড়া জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বিক্রিত সঞ্চয়পত্রের মুনাফা ও মেয়াদপূর্তিতে আসল বা মূল অর্থ প্রদেয় হওয়ার তারিখেই ইন্টিমেশন প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। গ্রাহকের সঞ্চয়পত্র ক্রয় পরবর্তী যে কোনো আবেদন (যেমন- নমিনি পরিবর্তন, হিসাব নম্বর পরিবর্তন, মোবাইল নম্বর পরিবর্তন, ইএফটি সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদি) গ্রহণের তারিখ থেকে সর্বোচ্চ তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
সরকার সুদ ব্যয় কমাতে ২০২০ সালে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নানা শর্ত আরোপ করেছিল। যেমন- দুই লাখ টাকার ওপরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে চাইলে গ্রাহককে বাধ্যতামূলকভাবে কর শনাক্তকারী নম্বর বা টিআইএন বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে। এসব শর্তের কারণে নতুন বিনিয়োগে অনেকেই নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন।
এরপর গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রে ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ থাকলে মুনাফা কমিয়ে আনার কথা বলা হয়।
ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এখন সঞ্চয়পত্রে যাদের ১৫ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ আছে, তাদের মুনাফার হার দুই শতাংশ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। তবে ১৫ লাখ টাকার নিচে মুনাফার হার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আগের নিয়মেই তারা মুনাফা পাবেন।
বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মের পর থেকে এ হার কার্যকর রয়েছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।
গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই- মে) পুরনো সঞ্চয়পত্রের মূল টাকা ও মুনাফা পরিশোধের পর নিট বিক্রি দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের (২০২০-২১ এর প্রথম ১১ মাস) চেয়ে ১৯ হাজার ২২৯ কোটি টাকা কম, যা শতকরা হিসেবে ৫১ শতাংশ। সেই হিসেবে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে অর্ধেকেরও বেশি। অর্থবছরে ১১ মাসে নিট বিক্রি ছিল ৩৭ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা।
Posted ৩:০৫ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ৩১ জুলাই ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta