কক্সবাংলা ডটকম(১৪ এপ্রিল) :: সংকটে বিপর্যস্ত হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে চায়। এই সমঝোতায় আসার লক্ষ্যে সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন হেফাজতের আমির। যা হবার হয়ে গেছে, ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আবার আগের মত একটি সমঝোতায় আসতে চাইছেন হেফাজতের এই উগ্রবাদী নেতা।
কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখন বাবুনগরীর জন্য দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তাঁরা সকলেই বলেছেন এটি এখন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এটি সম্ভব নয়।
গত ২৬ এবং ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে বিরোধিতা করে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায় হেফাজত। এই তাণ্ডবের পর সরকার কঠোর অবস্থানে চলে যায়। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে হেফাজতের কঠিন সমালোচনা করেন। এরপর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে সরকার হেফাজতের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে গেছেন এবং হেফাজতকে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের ঢাকা তাণ্ডবের পর থেকে আস্তে আস্তে হেফাজতের সাথে সরকারের একটি ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিলো এবং হেফাজতের বিভিন্ন দাবি সরকার মেনে নিচ্ছিলো। বিশেষ করে পাঠ্যপুস্তক সংশোধন, বিভিন্ন স্থানে ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়ার মতো দাবিগুলো সরকার মেনে নিয়ে হেফাজতকে এক ধরনের স্বীকৃতি প্রদান করেছিলো। আর সেই সময় হেফাজতের আমির ছিলেন আল্লামা শফী।
আল্লামা শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতের আমির নির্বাচিত হয়েছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। গত নভেম্বর মাসে হেফাজতের আমির হওয়ার পর থেকে তিনি একের পর এক উগ্রবাদী নীতি এবং কৌশল গ্রহণ করছেন এবং সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে কাজ করছিলেন। কিন্তু এই ধারাবাহিকতায় জুনায়েদ বাবুনগরী বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করেছিলেন। সে সময় সরকারের একটি অংশও হেফাজতের সঙ্গে আপোষ, সমঝোতা করেছিলো।
এরপর জুনায়েদ বাবুনগরী মনে করেন যে, সরকার বোধহয় দুর্বল এবং সরকারকে যা বলা যাবে সেটি সরকার শুনতে বাধ্য হবে। অর্থাৎ সরকারকেই চাপে ফেলে সব কিছু করাতে বাধ্য করার এক কৌশল গ্রহণ করেছিলেন বাবুনগরী। সেই ধারাতেই নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করেছিলো। হেফাজত এটাতে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছিলো জুনায়েদ বাবুনগরী। তারা মনে করেছিলো যে, প্রথমত এর ফলে সরকার ভয় পাবে এবং হেফাজতকে আরো সমীহ করে চলবে। হেফাজতই হবে সবচেয়ে ক্ষমতাবান।
আর দ্বিতীয়ত ভারত বুঝবে যে বাংলাদেশে হেফাজত একটি শক্তিশালী সংগঠন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেফাজতের এই বিষয়টি মোটেও হজম করেননি বরং হেফাজতকে পাল্টা কৌশলে এখন প্রায় ঘায়েল করে ফেলেছেন। হেফাজত এখন দম আটকে ছটফট করছে, পালাবার কোনো পথ পাচ্ছে না।
এই পরিস্থিতিতে বাবুনগরী তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাদের সঙ্গে একটু বসতে চেয়েছেন। অন্তত সরকার যেনো আনুষ্ঠানিকভাবে হেফাজতের সাথে একটি বৈঠকের আয়োজন করেন এমন প্রস্তাব জুনায়েদ বাবুনগরী দিয়েছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যারা জুনায়েদ বাবুনগরীর সঙ্গে আগে প্রকাশ্যে বৈঠক করতো, বাবুনগরীর সঙ্গে একটি সমঝোতা করে চলতো তারাই এখন বলছেন যে, এটি সম্ভব নয় এবং বিষয়টি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
ফলে জুনায়েদ বাবুনগরী এখন একটি অনিশ্চয়তায় ভরা ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। হেফাজত এবং মাদ্রাসাগুলো নিয়ে কি হবে এ নিয়ে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা উদ্বিগ্ন। এজন্য তারা দায়ী করছেন জুনায়েদ বাবুনগরীকে।
Posted ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta