কক্সবাংলা ডটকম(২৮ মে) :: ‘সরকার পতনে গণ-আন্দোলন করতে বেশি সময় লাগে না’-এই বাক্যে বিশ্বাস করে বিএনপি নেতারা সামনের দিনের পরিকল্পনা করছেন। তৃণমূল থেকে চাপ থাকলেও বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আরও সময় নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে যেতে চান।
শেষবারের মতো সব সাংগঠনিক ইউনিটকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পুরোদেশে প্রস্তুত হওয়ার পর সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যেতে চায় দলটি। এ জন্য জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বরকে টার্গেট করা হচ্ছে। সামনে ঈদ ও শোকের মাস মিলিয়ে কেটে যাবে সময়। এসবের মধ্যে বিএনপি সব অঙ্গ সংগঠনকে চাঙ্গা করবে।
বিএনপি সূত্র বলছে, ঈদের পর বিএনপি তাদের চলমান যুগপৎ আন্দোলনকে চাঙ্গা করবে। ঢাকার রাজপথে কর্মসূচি বাড়ানো হবে। আন্দোলন সব ঢাকামুখী করা হবে। তৃণমূল থেকে ঢাকা অভিমুখী কর্মসূচি দেওয়া হবে। সমাবেশ কিংবা মানববন্ধনের বদলে দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি কিংবা ঘেরাওয়ের ডাকা আসতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, আমাদের সময় কম। অক্টোবরের দিকে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হবে- এসব মাথায় রেখেই আমরা কর্মপরিকল্পনা করছি। মাসখানেক পর ঈদ। পরে আগস্ট মাস। সবকিছু বিবেচনা করেই আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি।
তিনি বলেন, দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা আসবে সব পরিস্থিতি বিবেচনা করে। তখন হয়তো কর্মসূচির ধরন পরিবর্তন হবে। কারণ আন্দোলনের চাহিদা বেড়ে যাবে। সরকার দাবি না মানলে বাধ্য হয়েই নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন করতে হবে। আর আগে থেকে আন্দোলনের কৌশল বলে দিলে দমন করতে সরকারের সুবিধা হয়।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ মনে করেন, এবার বিএনপির আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি একেবারে ভিন্ন। তারা সঠিক পক্রিয়াতেই আছেন।
এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো উসকানিতে পা দেয়নি। সরকারের পাতানো খেলায় অংশ না নেওয়াই তাদের বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থান কিংবা সরকারের পতন কখনো বলেকয়ে আসে না। সময় নির্ধারণ করে বর্তমানে আন্দোলন হয় না। বর্তমানে সবকিছু পরিবর্তনশীল। আর সরকারও অনেক চতুর। তাই সর্বাত্মক প্রস্তুতি থাকলে পতন আন্দোলন বেশি সময় লাগবে না।
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, আসলে চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে সবখানে আন্দোলনের ঢেউ তুলতে হবে। আমরা জানি, সরকার ঈদের পর আরও হিংস্র হয়ে উঠবে। তাই তাদেরকে বেশি সময় দেওয়া যাবে না।
বিএনপি এখন তাদের সাংগঠনিক জেলাগুলোয় সমাবেশ করছে। সমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হামলা, মামলা ব্যাপকহারে বেড়েছে।
এসব চাপ বিএনপিকে কতটা ভোগাচ্ছে, জবাবে স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সরকারের দমনপীড়নের মাত্রা আরও বাড়বে। কিন্তু বিএনপি রাজপথ ছাড়বে না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। পিছু হটার সময় নেই। গেল বছর বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে বিএনপি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়। এরপর যুগপৎ আন্দোলন শুরু করলেও সেভাবে আর মাঠে আন্দোলনের পূর্ণতা পায়নি।
সর্বশেষ বিএনপি এককভাবে দেশজুড়ে সমাবেশ করছে, যা শেষ হবে ২৭ মে। তবে বিএনপির এবারে জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি নিয়ে কিছুটা বেজার তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, এই সরকারকে বাধ্য করতে হলে মাঠের আন্দোলন আরও জোরালো করতে হবে। এসব হাজারো সমাবেশ কিংবা অনশন দিয়ে কোনো কাজ হবে না। সরকারকে সরাতে হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট, ঘেরাওয়ের কোনো বিকল্প নেই।
মাঠ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, সরকার পতনে বড় আন্দোলনের জন্য তারা প্রস্তুত আছেন। এখন আর ছোট ছোট সমাবেশ কিংবা মানববন্ধনে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না। তাদের প্রত্যাশা কেন্দ্র থেকে দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, আর আমরা সময়ক্ষেপণ করতে চাই না। এক দফার আন্দোলন চাই। আমার মনে হচ্ছে বিএনপি এবার তার নিজস্ব শক্তি নিয়ে আন্দোলন করবে। আশা করি, কেন্দ্র খুব দ্রুতই কংক্রিট একটি চূড়ান্ত আন্দোলনের রোডম্যাপ দেবে।
এদিকে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে উকিল সাত্তারের মতো মডেলও তাড়া করছে। বিএনপি সম্প্রতি নির্বাচন ইস্যুতে কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। জাতীয় নির্বাচনে যাতে কেউ সরকারের প্রলোভনে পা না দেয় সে দিকে সতর্ক থাকতে হচ্ছে। এমনকি সরকারের টোপ থেকে সমমনা শরিকদেরকেও বাইরে রাখতে হচ্ছে। আন্দোলনের পাশাপাশি বিএনপি এখন এটিকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে।
Posted ৩:১৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৮ মে ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta