কক্সবাংলা ডটকম(১৫ মার্চ) :: অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে সাজা দেয়ার ঘটনায় কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার কথা জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।
রোববার দুপুরে সচিবালয়ে তিনি বলেন: এই ঘটনায় খসড়া তদন্ত রিপোর্ট পেয়েছি। ডিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে এসে মোবাইল কোর্টে ১ বছরের জেল দেয় জেলা প্রশাসন।
শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার পর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট আনসার সদস্যদের নিয়ে তার শহরের চড়য়া পাড়ার বাড়িতে যায়। একপর্যায়ে দরজা ভেঙে তার ঘরে প্রবেশ করে তার স্ত্রী-সন্তানের সামনেই তাকে মারধর করে ধরে নিয়ে আসে বলে জানায় তার পরিবার।
পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা রাখার অভিযোগে তাকে ১ বছরের কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
আরিফুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন: জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে অনিয়মের সংবাদ পরিবেশন ও ফেসবুকে লেখার কারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। রোববার সকালে আরিফুল ইসলামকে জামিন দেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
এদিকে জামিনে মুক্ত বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে রবিবার কারাগার থেকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। তখন পরিবারের সদস্যরা তাকে দেখতে যান। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন দেখে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রবিবার (১৫ মার্চ) দুপুর দেড়টায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আরিফুল ইসলামকে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে দেখতে আসেন স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতুসহ তার স্বজনেরা। এসময় আরিফের হাতে-পায়ে, শরীরে ও মাথায় অসংখ্য লাঠির আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে কান্না ভেঙে পড়েন তারা।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (অর্থোপেডিক) উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘আমরা তার শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। বিস্তারিত লিখিত আকারে তত্ত্বাবধায়ক আবু মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলামের কাছে জমা দেওয়া হবে।’
তত্ত্বাবধায়ক আবু মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি ও জানি। আমরা শুনেছি একটি মোবাইল কোর্ট তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, একজনক ভদ্র ব্যক্তিকে এভাবে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়, জখম করা হয়। ইতোপূর্বে আমরা কখনও শুনিনি। হাসপাতালের সব চিকিৎসক ও নার্সকে তার সুচিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ দেওয়া আছে।’
হাসপাতালে আরিফুল ইসলামকে দেখতে আসা ঢাকা ট্রিবিউনের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর মো. শাহ আলম বলেন, ‘তার শরীরে এত আঘাতের চিহ্ন কেন? মোবাইল কোর্টে কি কাউকে আঘাত করা যায়? আমরা সুবিচার চাই। জেলা প্রশাসকের শাস্তি চাই।’
.কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বিপ্লব বলেন, ‘অসংখ্য ভ্রাম্যমাণ আদালত দেখেছি। কিন্তু, এভাবে কাউকে পেটানো হয়, তা দেখিনি, শুনিওনি। সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম একজন কলেজ শিক্ষকও। তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্দয়ভাবে পেটানো হয়েছে। এটি কেমন ভ্রাম্যমাণ আদালত? তার বিরুদ্ধে করা মামলাও প্রত্যাহার চাই। জেলা প্রশাসকের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে ধরে নিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট। এসময় তার বিরুদ্ধে আধা বোতল মদ ও দেড়শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। যদিও আরিফ অধূমপায়ী।
Posted ৪:৩৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৫ মার্চ ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta