কক্সবাংলা ডটকম(১৭ অক্টোবর) :: দেশের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েক দিনের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের জন্য পুলিশ ও গোয়েন্দা ব্যর্থতাই দায়ী বলে মনে করছে নাগরিক সমাজের একটি অংশ। সরকারের শীর্ষ মহল ঘটনার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছে। সরকারের শরিক দলগুলোর ইঙ্গিতও বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির দিকে। তবে দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এ জন্য দোষারোপ করছে সরকারকেই। পাল্টাপাল্টি দোষারোপের মধ্যে গতকাল শনিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে সমাবেশ-বিক্ষোভ হয়েছে। এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াও ছিল সরগরম।
গত কয়েক দিনের সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনায় দেশের নাগরিক সমাজের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেছে । তাদের মধ্যে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন মনে করছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা দুটোই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলছেন, গত কয়েক দিনের ঘটনায় সাম্প্রদায়িকতার চেয়ে রাজনৈতিক সুবিধা লাভের চেষ্টা বেশি হয়েছে। তবে এ ধরনের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিচার সংখ্যালঘু ও সাক্ষী সুরক্ষা আইন ছাড়া সম্ভব নয় বলে অভিমত পোষণ করেছেন লেখক ও সংগঠক শাহরিয়ার কবির।
কুমিল্লার ঘটনার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রতিদিনই কথা বলছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। গতকালও এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির উসকানিদাতা হলো বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এ বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বলেছেন, সাম্প্রতিক হামলার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগই দায়ী। তবে সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাদের প্রতি আস্থা নেই বলে জানিয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সংগঠন হিন্দুু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
তবে এ পরিস্থিতির জন্য পুলিশের ব্যর্থতার কথা বলা হলেও তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঘটনার উসকানিদাতা, হামলাকারী ও গুজব সৃষ্টিকারীদের শনাক্তের কাজ ইতিমধ্যে তারা শুরু করেছে। একই সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সারা দেশে গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। এ পর্যন্ত ১৪টি মামলায় চার হাজারেরও বেশি ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে এবং অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কুমিল্লা থেকে সৃষ্ট ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর সহিংসতায় চাঁদপুরে চারজন ও নোয়াখালীতে দুজনের মৃত্যুর খবর এসেছে গণমাধ্যমে। গতকাল কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, হামলা ও উসকানির ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট একযোগে কাজ করছে। আশা করছি, শিগগিরই নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে। একই দিন নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘হঠাৎ করেই শান্তিপূর্ণ মিছিল থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার কারণে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। যদিও পরবর্তীকালে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি।’
এদিকে পূজামন্ডপে হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। সমাবেশ থেকে দলটির নেতারা এমন পরিস্থিতির জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপ্রস্তুত অবস্থা ও গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন।
গতকাল হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতে সারা দেশে সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেলে শাহবাগে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। এ সময় বক্তারা দ্রুত সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানান। সমাবেশে সরকারি দলের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ বলেন, মন্ডপে হামলায় জড়িতদের অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
একই সময়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নাগরিক সমাবেশ করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সমাবেশ থেকে আগামী ১৯ অক্টোবর ‘সম্প্রীতি রক্ষা দিবস’ পালনের ঘোষণা দেন জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি থাকলেও সমাজ হয়তো মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তির হাতে চলে গেছে। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে মৌলবাদী গোষ্ঠী। এ সময় রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, আবেদ খান সাম্প্রতিক ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।
এদিকে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে হিন্দুু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি আমাদের আর আস্থা নেই। অব্যাহতভাবে হামলার ঘটনা ঘটছে। হামলাকারীদের মধ্যে একাত্তরে পাকিস্তানি ভাবধারার প্রেতাত্মা যেমন আছে, তেমনি অন্যান্য দলের লোকও রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি দলের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা লোক হামলায় ছিল। মুজিব কোট গায়ে দিয়ে তারা হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। যেমন কর্ণফুলী থানায় ‘জয় বাংলা’ ক্লাবের পক্ষ থেকে হামলা হয়েছে। যেখানে দুই ভাই সদ্য বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী শনিবার সারা দেশে ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত গণঅনশন ও গণঅবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ঘোষণা দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক হামলা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের ভূমিকা দুটোই প্রশ্নবিদ্ধ আমার কাছে। সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাংলাদেশের কিনা সে নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। কারণ ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আদর্শ রাষ্ট্রের যারা কর্মকর্তা-কর্মচারী, তাদের যে আদর্শ আচরণবিধি থাকার কথা, তার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে; যা আমাকে যথেষ্ট আহত করেছে।’
ইতিহাসের প্রবীণ এই অধ্যাপক বলেন, ‘কুমিল্লার ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় যেসব ঘটনা ঘটেছে তার তদন্ত এখনো হয়নি। তদন্ত করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে কিনা তাও জানি না। কে করল কারা করল সেটা তদন্ত করেই বের করতে হবে। আমাদের দেশে সমস্যাটা হলো ঘটনা ঘটবার পরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দোষারোপের কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু করেছে। আমি কোনো পক্ষেই থাকতে পারছি না। আমি ইতিহাসের মানুষ। নগ্ন সত্যের মানুষ। আমি জানতে চাই, কে করেছে? কারা করেছে?’
তিনি বলেন, ‘চিলে কান নিয়েছে বলে চিলের পেছনে দৌড় দেবসে মানুষও আমি নই। বাংলাদেশে সংখ্যায় বেশি হচ্ছে মুসলমান। মুসলমানদের দায়দায়িত্ব হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু কে করেছে, কারা করেছে সেটা জানবার আগেই কুমিল্লাসহ সারা দেশে মুসলমানদের সহিংসতার যে চিত্র পেলাম, যে খবর পেলামতা আমাকে আহত করেছে।’
সৈয়দ আনোয়ার হোসেন পবিত্র কোরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন, ‘আনআমের ১০৮ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে, ওদের দেবদেবীকে গালি দিও না, তাহলে তোমার আল্লাহকেও তারা গালি দেবে। একইভাবে সুরা হজ, ২২ নম্বর সুরার ৪০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলছেন, আমি ইচ্ছে না করলে পৃথিবীতে মঠমন্দির মসজিদ গির্জা কিছুই থাকত না। অর্থাৎ ধর্মীয় বহুত্ব স্রষ্টার সৃষ্টি, আমি মানুষ হিসেবে তাকে অস্বীকার করতে পারব না। মানুষের ধর্মাচরণে ভিন্নতা আছে কিন্তু মূল লক্ষ্যে অভিন্ন। সবাই ভক্তি, শ্রদ্ধায় নত হয়। যেকোনো পদ্ধতিতেই হোক না কেন। সুতরাং, এই যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, যা বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য, তা বৈরী কর্মকা- যারা করছে এরা ঘৃণিত শক্তি। মূল দায়দায়িত্ব সরকারের। সরকারকেই বলতে হবে কে করেছে কারা করেছে। সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে, যাতে সারা দেশে ধর্মীয় সহিংসতা ছড়িয়ে না পড়ে।’
এই অধ্যাপক বলেন, ‘আমার কাছে যেটি আপত্তিকর, যে বর্তমান সরকারের আমলে গোবিন্দগঞ্জ, নাসিরনগর, রামুর মতো সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে, এসবের কোনোটির বিচার হয়নি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা আমাদের সুখকর নয়। যদি বিচার হতো, শাস্তি হতো, তাহলে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতো না। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি তখনই হয়, যখন সঠিক বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়। সুতরাং এবারে অন্তত চাইব, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন, আমরা চাইব বিচারের বাণী যাতে নিভৃতে না কাঁদে।’
সারা দেশে ঘটনা ছড়ানোর কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ধার্মিক বটে, তবে ধর্মান্ধ ও উসকানিদাতা কিছু আছে। এই ধর্মান্ধ ও উসকানিদাতা মিলে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চাচ্ছে, যাতে করে বাংলাদেশে স্থিতিশীল পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। সরকারিভাবে বলা হচ্ছে নির্বাচন সামনে, সেটা আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না। গুরুত্ব দিচ্ছি বাংলাদেশের ভাবমূর্তির অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে ইতিহাস-ঐতিহ্যের। পাকিস্তানিরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চেষ্টা করেছিল। এর আগে ইংরেজরা ঔপনিবেশিকভাবেই শাসন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ আমলে ওই যে বললাম, বঙ্গবন্ধু আদর্শ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন।
তবে একটি সমস্যাও হয়ে গেছে, বর্তমান সরকার ২০১১ সালে ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবৈধ সামরিক সরকার, ৮ম সংশোধনী ১১তম সংশোধনী করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করেছে। আবার একই সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতা রেখেছে। আমি মনে করি না, রাষ্ট্রধর্ম আর ধর্মনিরপেক্ষতা একসঙ্গে যায়। কিন্তু রাজনীতিবিদরা সেই যুক্তি দেখাচ্ছেন। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম করা হলে সেই রাষ্ট্র সাম্প্রদায়িক হয়ে যায় ক্রমাগতভাবে। সেজন্য আমার সংবিধান ঠিক করতে হবে। আইনও সঠিক পথে আনতে হবে। সরকারকে তার ঐকান্তিকতা প্রমাণ করতে হবে যে, তারা সত্যিই অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গড়তে চায়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সরকারকে সজাগ ও সক্রিয় হতে হবে। সরকারি উদ্যোগে সমাজের প্রগতিশীল সোসাইটিকে তৎপর হতে হবে। সংবাদমাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক দেশ গঠনে জোরালো ভূমিকা থাকতে হবে।’
মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘এবারের ঘটনাই প্রথম বা শেষ নয়। গত ৫০ বছর ধরেই ঘটে চলেছে। যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারের দুর্বলতা ছিল। ফলে হামলায় জড়িতদের কাছে দৃশ্যমান কোনো বার্তা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর, লামা, রামুর ঘটনাতে সরকারদলীয় নেতৃত্বস্থানীয় লোকজনের অংশগ্রহণের খবর পাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনায় গোয়েন্দা ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসার পরও পুলিশ বা রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে নিবৃত্ত করার যথেষ্ট সময় হাতে থাকার পরও তারা ব্যর্থ হয়েছে। গত তিন দফায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার কারণে রাজনীতি এখন দুর্বৃত্তদের কবলে চলে গেছে। দলের আদর্শ যখন অনুপস্থিত থাকে তখন দুর্বৃত্তদের দাপট শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এবারের ঘটনাটিকে যতটা না সাম্প্রদায়িকতার চেয়ে রাজনৈতিক সুবিধালাভের চেষ্টার ফসল।’
লেখক ও সংগঠক শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘এই ঘটনা কারা ঘটাচ্ছে সেটা পরিষ্কার। স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদীরা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। যারা দেশকে হিন্দুশূন্য করতে চায়, ভিন্ন ধর্মের মানুষের অবস্থান সহ্য করতে পারে না, তারাই এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। এটাই রাজনীতি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকেই এই রাজনীতি শুরু হয়েছে। ধর্মের নামে রাজনীতি যতদিন না বন্ধ হবেএই ঘটনা ঘটতে থাকবেই। ওয়াজের নামে খুতবার নামে যেভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানো হয়, এজন্যই তো কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুড়িগ্রামে পর্যন্ত হামলা হয়ে থাকে। যারা এই হামলা করছে তাদের তো শাস্তি হচ্ছে না। মামলা হয়, তবে সেই মামলায় সাক্ষ্য দেবে কে? যিনি সাক্ষ্য দেবেন তিনি আবার হামলার শিকার হবেন। এজন্যই ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে এই ধরনের ঘটনার বিচার করার জন্য প্রচলিত আইনের সংশোধন দাবি করা হয়েছে। সাক্ষ্য সুরক্ষা আইন ও সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ছাড়া এ ধরনের অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে না। যার কারণে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ধর্মের নামে রাজনীতি বন্ধ না করলে এই ঘটনা বন্ধ করা যাবে না।’
পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘পুলিশের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু চেষ্টা করেছে। মামলা করেছে গ্রেপ্তার করেছে। যদিও আমাদের কাছে মনে হয়েছে গ্রেপ্তার যথেষ্ট হয়নি।’
এদিকে গতকাল চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত হামলার তালিকা তুলে ধরা হয়। এ সময় লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিজয়া দশমীর দিন নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পূজামণ্ডপে যতন সাহাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। ইসকন মন্দিরের প্রভু মলয় কৃষ্ণ দাসকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। গতকাল সকালে ইসকন মন্দিরের পুকুরে জনৈক ভক্তের লাশ ভেসে ওঠে। একই দিনে চট্টগ্রাম মহানগরের জে এম সেন হলেও হামলা হয়েছে। এর আগে চাঁদপুরে হামলায় মানিক সাহা নামে একজন মারা যান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক হামলাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ আর নেই। আমরা মনে করি ও বিশ্বাস করি, সবটাই পরিকল্পিত। যার মূল লক্ষ্য, এক দিকে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক পরিসরে বিনষ্ট করা, অন্য দিকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে অগ্রসরমাণ উন্নতিকে ব্যাহত করা। এ ছাড়া বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিতাড়িত করে গোটা দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করা।’
Posted ৬:৫৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta