মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সিনহা হত্যার ১ বছর : টেকনাফে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ভয় কাটলেও অপ্রতিরোধ্য ইয়াবা ব্যবসা

শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১
329 ভিউ
সিনহা হত্যার ১ বছর : টেকনাফে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ভয় কাটলেও অপ্রতিরোধ্য ইয়াবা ব্যবসা

বিশেষ প্রতিবেদক :: ভৌগোলিক অবস্থান, পর্যটনসহ নানা কারণে কক্সবাজারের টেকনাফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। আবার মিয়ানমার থেকে মাদক প্রবেশের রুট হিসেবেও এলাকাটি পরিচিত। গত বছরের ৩১ জুলাই সেখানকার শামলাপুর মেরিন ড্রাইভের পুলিশ চেকপোস্টে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ।

এই মৃত্যুর পর টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাসের নানা অপকর্ম এবং ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতির বিষয়টি সামনে আসে। সিনহার মৃত্যুর পর ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা কমেছে। টেকনাফে গত ১২ মাসে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাতজন নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনার আগে প্রদীপের জমানায় মাদকবিরোধী অভিযানে ২২ মাসে ওই এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা গেছেন ১২৩ জন।

এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, সিনহার ইস্যুতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ভয় কাটলেও মাদক কারবারিরা সেখানে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নতুন নতুন কৌশলে দেশে ঢুকছে মাদক। এর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের একটি অংশও জড়িয়ে পড়েছে।

সিনহা হত্যার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে ৩১ জুলাই। মামলাটি এখন বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রদীপসহ ১৫ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিলের পর আদালত অভিযোগ গঠন করেছেন। সাক্ষীদের বক্তব্য শোনার তিনটি তারিখ ধার্য থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। সিনহার স্বজনদের আশা, এ মামলায় ন্যায়বিচার তারা পাবেন।

জানতে চাইলে সিনহার বড় বোন ও মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, অভিযোগ গঠনের পর ২৬ থেকে ২৮ জুলাই সাক্ষীর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। সংশ্নিষ্ট সবার সদিচ্ছা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে শুনানি শুরু হতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। মহামারির এই সময়ে স্বাভাবিকভাবে সব কিছু চালিয়ে নেওয়া একটা চ্যালেঞ্জ। এই পর্যায়ে সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট কোনোটাই বলব না। রায়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা নিশ্চিত হলেই স্বস্তি পাব।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারে এক সময় ত্রাসের রাজত্ব ছিল। আমার ভাইয়ের মৃত্যুর পর অনেক কিছু বদলেছে। আমাদের এক বোন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসার পর ঘটনাস্থল দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানকার পুরোনো সব পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। ভীতির যে দেয়াল ছিল সেটা কিছুটা হলেও ভেঙেছে। কক্সবাজারের মানুষ নির্ভয়ে জীবন-যাপন করুক, এটাই চাই। এমন যুক্তিবাদী, উদার, আলোকিত এক তরুণকে এভাবে চেলে যেতে হবে, এটা পরিবারের জন্য সত্যি বেদনার। সিনহা ছিল আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, ‘আমরা চাই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ হোক। তবে এলাকাকে মাদকের অভিশাপ থেকে রক্ষা করতে হলে আইনের স্বাভাবিক প্রয়োগ বহাল রাখতে হবে। এখন দেখা যাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ কেউ হাত গুটিয়ে বসে আছেন। তারা দেখাতে চাচ্ছেন মাদক দমনে আগের কৌশলই ভালো ছিল। এতে এলাকার সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। বীর দর্পে ঘুরছে মাদক কারবারিরা। দীর্ঘ দিন বিদেশে পালিয়ে থাকা মাদক কারবারিরাও এখন এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছে।

সিনহা নিহত হওয়ার পর পাঁচ মাসে টেকনাফে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। সর্বশেষ ২০২১ সালে ৬ জানুয়ারি টেকনাফের রাজারছড়া এলাকায় পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ খোরশেদ আলম নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। তবে পুলিশ দাবি করছিল, টেকনাফের রাজারছড়া এলাকায় মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি শামসুল আলমকে পুলিশ আটক করে। তাকে নিয়ে থানায় ফেরার পথে একদল দুর্বৃত্ত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সড়ক অবরোধ করে আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পুলিশের ওপর হামলা করে। এই সময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। দুই পক্ষের গোলাগুলিতে পুলিশের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। সেই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে অর্থ পাচার ও মাদক মামলার আসামি খোরশেদ আলম মারা গেছেন। কিন্তু খোরশেদ আলম কার গুলিতে মারা গেছেন, সেটা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।

এ ছাড়া গত এক বছরে টেকনাফে র‌্যাব ও বিজিবির সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরও ছয়জন মারা যান। সিনহা হত্যার আগে ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৫ জুলাই পর্যন্ত প্রদীপের আমলে মাদকবিরোধী অভিযানে ২২ মাসে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১২৩ জন নিহত হয়েছিলেন। পুলিশ নিহতদের ডাকাত ও মাদক কারবারি হিসেবে দাবি করেছিল। এ ছাড়া ওই সময় বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের পৃথক অভিযানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আরও ৭৪ জন নিহত হন।

পুলিশ জানায়, সিনহা হত্যার পর মাদকবিরোধী অভিযানে পাঁচ লাখ ১৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে পুলিশ। এসব অভিযানে মাদক কারবারিসহ ৮৭৬ পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

স্থানীয় প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক সময় মনে করা হতো মাদক কারবার রুখতে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ বিকল্প নেই। তবে এখন মাদক রুখতে নতুন পথ বের করতে হবে। মাদক কারবারিদের কেউ কেউ এটাও মনে করছে, কারবার চালিয়ে গেলেও জীবন তো যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে না। এ কারণে অনেকে বেপরোয়া। মাদক কারবারে জড়ালে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ভোগ করতে হবে এটা বোঝানোর পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় কর্মসংস্থানের জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, সিনহার হত্যার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি ১৩ দফা সুপারিশ করা হয়। তার মধ্যে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আত্মরক্ষার অধিকার নিয়ে যে আইন আছে তা প্রয়োগের ব্যাপারে কার্যকরী নির্দেশনা দেওয়া। যাতে এর অপব্যবহার না হয়। এ ছাড়া সরকারি অস্ত্র না নিয়ে খালি হাতে বা ব্যক্তিগত অস্ত্র নিয়ে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা। তল্লাশি চৌকিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন। ওসিদের নিজ জেলায় পদায়ন বন্ধ করা। ওসি প্রদীপের সীমাহীন ঔদ্ধত্যের বিষয়ও প্রতিবেদনে উঠে আসে।

প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব বলে অনেকে মনে করছেন। সিনহা হত্যার পর পুলিশ কক্সবাজারে জেলা প্রশাসনে নজিরবিহীন রদবদল আনে। জেলার দেড় হাজার পুলিশ সদস্যকে বদলি করে নতুনদের পদায়ন করা হয়। সিনহার হত্যার পর ওসিসহ ১০৩ জন পুলিশ কর্মকর্তা টেকনাফ মডেল থানায় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। শামলাপুর চেকপোস্টে চারটি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, মানুষের আস্থা অর্জনে কাজ করছি। তবে মাদক ঠেকাতে যেসব কার্যক্রম দরকার, সেটিও অব্যাহত রেখেছি। গত এক বছর এখানে পুলিশের একটিসহ অন্যান্য বাহিনীর ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাতজন মারা গেছেন। থানা সব সময় সবার জন্য উন্মুক্ত। তবে শুধু পুলিশের একার পক্ষে মাদকমুক্ত করা সম্ভব না। সবার সহযোগিতা দরকার।

এলাকার বাসিন্দা মৌলভী ইমতিয়াজ বলেন, প্রদীপের সময়ে টেকনাফ থানার গেট কখনও খোলা ছিল না। শুধু প্রদীপ বের আর বাইরে হওয়া সময় সামান্য সময়ের জন্য খোলা হতো। মানুষ ভয়ের মধ্যে থাকত।

১৫ আসামি: সিনহা হত্যা মামলায় চার্জশিটভুক্ত ১৫ আসামি হলেন- ওসি প্রদীপ কুমার দাস, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ প্রদীপ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, সাবেক এএসআই সাগর দেব, সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা; এপিবিএনের তিন সদস্য- এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, আয়াজ উদ্দিন ও নিজাম উদ্দিন। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের ১২ জন দোষ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিদের মধ্যে প্রদীপ ও রুবেল শর্মা জবানবন্দি দেননি। তদন্ত কর্মকর্তা ৮৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন।

329 ভিউ

Posted ৩:৩৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ৩১ জুলাই ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com