কক্সবাংলা ডটকম(১৮ মে) :: হঠাৎ করেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরেই চলে গেল ডলারের বাজার। নিত্যপণ্যের পর এবার সিন্ডিকেটের কারসাজির অভিযোগ উঠল মুদ্রাবাজারেও। দেশের খুচরা বাজারে (কার্ব মার্কেট) গতকাল আকস্মিকভাবেই ডলারের বিনিময় হার ১০০ টাকা পার হয়ে যায়। কার্ব মার্কেটে গতকাল দিনভর প্রতি ডলার বেচাকেনা হয়েছে ১০২ টাকায়। সন্ধ্যার পর তা ১০৪ টাকাও হাঁকিয়েছে মানি এক্সচেঞ্জগুলো।
এর আগে সোমবার দেশের খুচরা বাজারে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল সর্বোচ্চ ৯৬ টাকা। কিন্তু একদিনের মধ্যেই তা ৭-৮ টাকা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে এক প্রকার অস্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ব্যাংকার ও ট্রেডারদের যোগসাজশে ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মুদ্রাটির এমন কোনো চাহিদা তৈরি হয়নি, যার পরিপ্রেক্ষিতে এর বিনিময় হার ১০০ টাকা পার হয়ে যাবে। প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এমন বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতিনির্ধারকরা এখনই হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। এমনকি হুন্ডিতে অবৈধ লেনদেন বাড়ারও শঙ্কা রয়েছে।
কার্ব মার্কেটে ডলার নিয়ে হুড়োহুড়ি চললেও দেশের আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার ছিল স্থিতিশীল। গতকাল ব্যাংক খাতে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ৯৪ থেকে ৯৬ টাকা। ব্যাংকগুলোয় সোমবারও প্রায় একই দামে ডলার বেচাকেনা হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, ডলারের নির্ধারিত বিনিময় হার এখন ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। সোমবার একসঙ্গে ৮০ পয়সা বাড়িয়ে ডলারের এ মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে ডলারের বিনিময় হারে বড় ধরনের তারতম্য হলে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরফান আলী। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক। দেশে এমন কোনো বিশেষ ঘটনা ঘটেনি বা চাহিদা তৈরি হয়নি, যার পরিপ্রেক্ষিতে ডলারের বিনিময় হার এতটা বাড়বে। খুচরা বাজারে ডলারের বিনিময় হার বাড়লে অবৈধ হুন্ডির তত্পরতা বাড়বে। এতে রেমিট্যান্সের বড় অংশ ব্যাংকিং চ্যানেলে না এসে হুন্ডিতে চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
রাজধানীর মতিঝিল, গুলশান, কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জের তথ্য বলছে, গতকাল সকাল থেকেই খুচরা বাজারে ডলারের সরবরাহ কমে যায়। একই সঙ্গে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ডলারের দামে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়। প্রতি ডলারের বিনিময় হার উঠে যায় ১০১ থেকে ১০৪ টাকায়। মানি এক্সচেঞ্জগুলো গ্রাহকদের যেভাবে সম্ভব ডলারের বিপরীতে দাম আদায় করেছে। তবে বিকালের দিকে বিনিময় হারে কিছুটা নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু সন্ধ্যার পর তা আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যায়। ডলারের বিনিময় হারের এ আকস্মিক উল্লম্ফনকে সিন্ডিকেটের কারসাজি হিসেবে দেখছেন ব্যাংক ও মুদ্রাবাজার-সংশ্লিষ্টরা।
তবে খুচরা বাজারে ডলারের বিনিময় হারের এ অস্বাভাবিক উল্লম্ফনে বিচলিত নয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, চাহিদার নিরিখে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বিনিময় হার বাড়াচ্ছে। সোমবার এক ধাক্কায় তা ৮০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে। প্রয়োজন হলে টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার আবারো সমন্বয় করা হবে। খুচরা বাজারে বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে ব্যাংক খাতের তেমন সম্পর্ক নেই।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। রেকর্ড আমদানির এলসি দায় পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে দেশের বেশির ভাগ ব্যাংক। এতে ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ফলে দেশের বাজারে শক্তিশালী প্রতিটি বৈদেশিক মুদ্রারই দাম বেড়েছে।
টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকাতে প্রায় প্রতিদিনই বাজারে ডলার বিক্রি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এরই মধ্যে রিজার্ভ থেকে প্রায় ৫১০ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর পরও বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গতকাল ডলারের ঘোষিত বিনিময় হার ছিল ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা করে। যদিও এ হারে দেশের কোথাও ডলার মিলছে না। এর আগে গত বছরের জুনে প্রতি ডলারের ঘোষিত বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, যেসব ব্যাংকের রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় ভালো, তারা অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় আছে। যে অংকের আমদানি এলসি এরই মধ্যে খোলা হয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ ব্যাংক বিলাসপণ্য আমদানির লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে দেখতে হবে, মোট আমদানি পণ্যের মধ্যে এ ধরনের পণ্যের অংশ কতটুকু। আগামী দিনগুলোয় আমদানি দায় ও বিদেশী ঋণ পরিশোধে বড় ধরনের চাপ তৈরি হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের এ অস্থিরতার বিরূপ প্রভাব পড়ছে আমদানি বাণিজ্যে। যার কারণে মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দর আরও বাড়বে। এখনই বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে। রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহের পরামর্শও করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সেটা হবে সাময়িক সমাধান। স্থায়ী ও কার্যকর সমাধানের জন্য নীতির জায়গাটা আগে ঠিক করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও অধিক কার্যকর ও বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাজারে তদারকি বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশে করোনা সংকট কেটে যাওয়ার পর আমদানিতে বড় ধরনের চাপ পড়ে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দর বৃদ্ধি পায়। দাম বাড়ে খাদ্যপণ্যের। ফলে বাংলাদেশে আমদানি হওয়া জ্বালানি, খাদ্যপণ্য, ভোজ্য তেল কিনতে ডলারের ঘাটতি তৈরি হয়। করোনার পর রেমিট্যান্সে প্রবাহ কমে যায় বাংলাদেশে। আমদানির চাপ, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় চাহিদামতো ডলার সরবরাহ কঠিন চাপের মুখে পড়েছে।
একদিকে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, অন্যদিকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক কম হওয়ায় সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে। ফলে বাংলাদেশের রেকর্ড বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও টান পড়ে। মাত্র মাসখানেকের ব্যবধানে ৪৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে এসেছে ৪১ বিলিয়ন ডলারে। যা প্রতিদিনই কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলাবাজারে ও ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য (অথরাইজ ডিলার-এডি) শাখায় ডলার বিক্রি করেও কোনো নিয়ন্ত্রণ আনতে পারেনি। প্রায় প্রতিদিনই ডলার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ ছাড়া গত কয়েক মাসে দফায় দফায় ডলারের দর (ব্যাংক রেট) সমন্বয় করা হয়েছে। অবমূল্যায়ন করা হয়েছে টাকার মান।এরপরও নিয়ন্ত্রণ আসেনি ডলারের বাজার। খোলাবাজারে ডলারের দাম আবারও বেড়েছে।
১৭মে দেশে প্রথমবারের মতো ডলারের দর ওঠে ১০১ থেকে ১০২ টাকায়। আগের দিনও খোলাবাজারে ৯৭-৯৮ টাকা দরে ডলার বিক্রি হয়। বাংলাদেশে এর আগে কখনো ডলারের দর ১০০ টাকা অতিক্রম করেনি। আমদানিতে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধির পর থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকালও ১০ কোটি ৮০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। সব মিলে চলতি অর্থবছরের ১৬ মে পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করা হয়েছে ৫২১ কোটি ৬০ লাখ।
করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার পর মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল, খাদ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেলসহ সব পণ্যের আমদানি বেড়েছে। চাহিদা বাড়ায় চলতি অর্থবছরে পণ্য আমদানি বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী বিভিন্ন পণ্যের এলসি বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। ফলে আমদানিতে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। ডলারের যে পরিমাণ চাহিদা, বিপরীতে ডলার আহরণের উৎস সে অনুযায়ী হয়নি।
যেখানে আমদানি বেড়েছে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি, রপ্তানি সেখানে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে প্রতি বছর প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স হিসেবে প্রবাসীরা পাঠালেও এ বছর সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। ঈদ উপলক্ষে কিছুটা বাড়লেও সাত-আট মাস ধরে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। ফলে চাহিদা অনুযায়ী ডলার পাচ্ছে না বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের আগস্টে আন্তব্যাংক বাজারে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। গতকাল দাম ওঠে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সায়। ফলে নয় মাসের কম সময়ে আন্তব্যাংকেই ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ২ টাকা ৭০ পয়সা। এর মধ্যে ১ টাকা ৩০ পয়সাই বেড়েছে গত ২০ দিনের ব্যবধানে। বাংলাদেশ ব্যাংক ১৬ মে মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান আবারও ৮০ পয়সা কমিয়ে দেয়।
অর্থাৎ প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা আর ৯ মে ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডলারের বিনিময়মূল্য ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা করা হয়েছিল। ২৩ মার্চ ২০ পয়সা বাড়িয়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা করা হয়। ২৭ এপ্রিল বাড়ানো হয় ২৫ পয়সা। ডলারের দর সমন্বয় করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে খোলাবাজার পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।
ডলারের বাজারে এ আগুনের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে। কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা বাজারে পণ্যের দর আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দর দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। জ্বালানি সংকট তৈরি হলে দাম বাড়বে অন্যান্য পণ্যের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ডলার সংকট বা অস্থিরতা ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর ভূমিকা রাখছে। আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতিদিনই খোলাবাজারে ডলার সরবরাহ করছি। টাকার সঙ্গে ডলার সমন্বয় করতে রেট বাড়ানো হয়েছে। অতিপ্রয়োজনীয় ছাড়া অন্য কোনো পণ্য আমদানির এলসির ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।’ তিনি আশা করেন, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ‘ডলারের একটি সংকট চলছে এটা ঠিক। তবে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি না। সংকটের চেয়ে প্যানিক (আতঙ্ক) বেশি তৈরি হয়েছে। তাই কেউ হয়তো সুবিধা নিচ্ছে। কোনো একটি খোলাবাজারের প্রতিষ্ঠান কাউকে ১০০ টাকার বেশি দরে ডলার কিনতে বাধ্য করেছে সেটা বাস্তবতা নয়। কোথাও এমন ঘটনা হতে পারে। আমদানি পেমেন্টে কিছুটা সংকটের মধ্যে যাচ্ছে। দুই বছরের যে চাপ সেটা হঠাৎ করে বেড়েছে। ফলে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি বেড়েছে। এ ছাড়া জ্বালানির দর বৃদ্ধি, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির চাপ পড়েছে। দ্রুত এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এজন্য ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) ৩ হাজার ৬৬১ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি। বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে দেশে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৯০ কোটি ডলারে। এতদিন বাণিজ্য ঘাটতি পূরণে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থ। কিন্তু চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি কমেছে ১৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এ সময়ে দেশে ১ হাজার ৫২৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। সব মিলিয়ে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাবদ নয় মাসে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা এসেছে ৫ হাজার ১৯২ কোটি ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে গড়ে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৬৮৩ কোটি ডলার। অর্থবছরের বাকি তিন মাসে একই হারে আমদানি হলে বছর শেষে দেশের আমদানি ব্যয় ৮২ বিলিয়ন ডলার ছাড়াবে। রেকর্ড সর্বোচ্চ এ আমদানি প্রবৃদ্ধি চলতি হিসাবের ঘাটতিকে ২০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় আমদানিতে লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যক্তিগত গাড়ি, হোম অ্যাপ্লায়েন্স হিসেবে ব্যবহূত ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর আমদানি ঋণপত্রের ন্যূনতম নগদ মার্জিন ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর নিত্যপ্রয়োজনীয় নয়, এমন পণ্যের নগদ মার্জিন নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ৫০ শতাংশ। এর পরেও ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
Posted ২:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৮ মে ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta