কক্সবাংলা ডটকম(১ মার্চ) :: কক্সবাজারের উখিয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্তের ওপারে হঠাৎ ভারী অস্ত্র ও অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে মিয়ানমার।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) পোশাক পরে তাদের সেনাসদস্যরা সীমান্ত আইন ভেঙে সীমান্তের আশপাশ এলাকায় কৌশলে অবস্থান নিয়েছে।
মিয়ানমারের এ ধরনের হঠকারী ও উস্কানিমূলক আচরণে তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করা প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা ও সীমান্তের এপারের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
সীমান্তে মিয়ানমারের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রতি গভীরভাবে নজর রাখছে বাংলাদেশ। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) শক্ত ও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। মিয়ানমার কিছু করলে তার সমুচিত জবাব দেবে বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার বিজিবি সদর দপ্তরে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড ট্রেনিং) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের ৩৪ ও ৩৫ নম্বর পোস্টের মাঝামাঝি এলাকায় সীমান্তের ১৫০ গজ অভ্যন্তরে সৈন্য সংখ্যা বাড়িয়েছে মিয়ানমার। পাশাপাশি ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ করেছে তারা। বেশ কয়েক দিন ধরেই সীমান্তের শূন্য রেখায় অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের দেশটিতে না ঢুকে অন্য কোথাও চলে যেতে বলছে মিয়ানমারের সেনারা। এটি এক ধরনের পুশ ইন।
মুজিবুর রহমান বলেন, সীমান্তে ভারী অস্ত্র মোতায়েন ও সেনা সমাবেশ সীমান্তনীতির বরখেলাপ। তাই আমরাও বাড়তি সদস্য মোতায়েন করে সতর্ক অবস্থায় থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি হলে বিজিবি সবসময়ই দেশমাতৃকার প্রতি নিবেদিতপ্রাণ থেকে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবে।
বিজিবির পক্ষ থেকে মিয়ানমারের বিজিপিকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা মিয়ানমারকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছি। আশা করছি, তারা পতাকা বৈঠকের জবাব দেবে এবং পরিস্থিতির সমাধান হবে।
সীমান্তে সেনা সমাবেশ ও ভারী অস্ত্র মজুদের মধ্য দিয়ে মিয়ানমার কোনো ধরনের উসকানি দিচ্ছে কিনা— এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠকে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। তাই এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়ার কথা নয় তাদের। এটি কোনো উসকানির পর্যায়ে পড়ে না। তাদের নিশ্চয়ই কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের কৌশলগত পরিকল্পনা কী, সেটা জানার জন্যই পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।
সীমান্তের এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য অন্য কোনো বাহিনীকে জানানো হয়েছে কিনা— এমন প্রশ্নের উত্তরে বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, এখনো এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে, অন্য কোনো বাহিনীর সদস্যদের জানাতে হবে। তবে মিয়ানমার স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত সেনাসদস্য মোতায়েন করেছে বলেই আমরাও বিজিবির জনবল বৃদ্ধি করেছি। কিন্তু পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পতাকা বৈঠকের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। মিয়ানমার কেন অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করল, সেটা বৈঠকের পরই বিস্তারিত জানাতে পারব।
গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হামলার মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এর মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তমব্রু কোনারপাড়ার শূন্য রেখায় অবস্থান নেয় সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গা। এসব রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সম্মতিও দিয়েছিল মিয়ানমার। কিন্তু এর মধ্যে দেশটি সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা ও অস্ত্র জড়ো করার ফলে ফিরে যেতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে তারা।
মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব:
সীমান্তে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনের এ ঘটনায় ঢাকায় নবনিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উকে তলব করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।বৃহস্পতিবার বিকালে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) এম খোরশেদ আলম তাকে তলব করেন। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয় তাকে।
সীমান্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে এ ধরনের কার্যক্রম দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য ভালো নয় বলেও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়।
Posted ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ মার্চ ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta