মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা টাকা নিয়ে লুকোচুরি

শুক্রবার, ১২ আগস্ট ২০২২
112 ভিউ
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা টাকা নিয়ে লুকোচুরি

কক্সবাংলা ডটকম(১২ আগস্ট) :: দুই দশক ধরে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংক বা সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমা হচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর শেষে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা (৯৫ টাকা ধরে) প্রায় ৮ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটসহ (বিএফআইইউ) সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বারবার বলছে, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে জানতে সুইস কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তারা কোনো সহযোগিতা করেনি।

এদিকে সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত টাকার বিষয়ে সুইস ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য চায়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত সুইস রাষ্ট্রদূত নাতালি চুয়ার্ড। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে হাইকোর্ট। কেন তথ্য চাওয়া হয়নি এ বিষয়ে আগামী রবিবারের মধ্যে জানাতে বলা হয়েছে।

সুইস ব্যাংকে রাখা টাকার তথ্য চাওয়া নিয়ে এমন বিভ্রান্তিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও। তাদের মতে, পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার অভিজ্ঞতা সরকারের আছে। তাহলে এখন কেন ব্যর্থ হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।

দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা জমা রয়েছে, তার বেশির ভাগই অবৈধভাবে অর্জিত এবং বিদেশে পাচার করা হয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সম্প্রতি বলেছেন, দেশে রেকর্ড বাণিজ্য ঘাটতির পেছনে ‘এলসির আড়ালে টাকা পাচার’ একটি কারণ হতে পারে বলে তার সন্দেহ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বিদেশ থেকে পাচার করা বা দুর্নীতির টাকা ফিরিয়ে আনার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের আছে। আমরা এর আগে সিঙ্গাপুর থেকে টাকা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। অর্থাৎ যদি জোরালোভাবে চাই, তবে আমরা এটা করতে পারি।

তিনি বলেন, সুইস রাষ্ট্রদূত বা বাংলাদেশ সরকার- কে সত্য বলছে আর কে মিথ্যা বলছে, এটা আমার বিচার্য বিষয় নয়। আমি মনে করি, যদি সরকার চায় তাহলে আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া রয়েছে এবং তার মাধ্যমে এসব টাকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বা চিহ্নিত করা সম্ভব। সেটা হয়নি বলেই আমরা হতাশ।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার যখন চেয়েছে, তখন এসব দুর্নীতির টাকা ফেরত আনতে সক্ষম হয়েছে এবং তাতে দেশের মানুষ খুশি হয়েছে। এ রকম অন্যদের ক্ষেত্রে কেন হলো না, সেটাই আশ্চর্যের বিষয়।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেদেশের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রথমবার ১০ কোটি সুইস ফ্রাঁ ছাড়িয়ে যায় ২০০৬ সালে, যেটি ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছর। ৯ কোটি ৭২ লাখ সুইস ফ্রাঁ থেকে বেড়ে ওই বছর জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ কোটি ৪৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ। এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম বছর ২০০৭ সালে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ হয়।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১১ সালে জমার পরিমাণ ছিল ১৫ কোটি ২৩ লাখ সুইস ফ্রাঁ, তা ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০১৬ সালে তা ৬৬ কোটি ১৯ লাখে দাঁড়ায়। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে তা কমে ৪৮ কোটি ১৩ লাখ সুইস ফ্রাঁতে নেমে এলেও ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের বছরে তা আবারো বেড়ে ৫১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়ায়।

২০২১ সালে বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী ভারতীয়দের নামেও সুইস ব্যাংকে থাকা অর্থের পরিমাণ ব্যাপক বেড়ে ৩৮৩ কোটি ফ্রাঁ হয়েছে, যা ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু। ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ২৫৫ কোটি ফ্রাঁ। গত বছর পাকিস্তানের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণও বেড়ে ৭১ কোটি ফ্রাঁ হয়েছে, যা ২০২০ সালে ছিল ৬৪ কোটি ২২ লাখ ফ্রাঁ। অপরদিকে অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কার সুইস ব্যাংকে রাখার অর্থের পরিমাণ কমে ৫ কোটি ৬০ লাখ ফ্রাঁ হয়েছে। ২০২০ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৩ কোটি ৩০ লাখ ফ্রাঁ।

বিশ্বজুড়ে তালিকার দিকে নজর দিলে দেখা যাবে সুইস ব্যাংকগুলোতে যুক্তরাজ্যের জমা রাখা অর্থের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি ৩৭৯ বিলিয়ন ফ্রাঁ। এরপরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নাম। তাদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ১৬৮ বিলিয়ন ফ্রাঁ। সুইস ব্যাংকে রাখা ১০০ বিলিয়নের উপরে অর্থ রয়েছে শুধু এ দুদেশের নাগরিকদের নামেই। তালিকার শীর্ষ ১০ এ থাকা অন্য দেশগুলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জার্মানি, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, হংকং, লুক্সেমবার্গ, বাহামাস, নেদারল্যান্ডস ও কেম্যান।

তথ্য অনুযায়ী, সুইস ব্যাংকের কাছে তথ্য চাওয়ার বিষয়টি ২০১৪ সালের ২৮ জুন জাতীয় সংসদেও আলোচিত হয়। আমানতকারীদের তালিকা চেয়ে সুইজারল্যান্ড সরকারকে অনুরোধপত্র পাঠানো হবে বলেও সেখানে জানানো হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ৩০০ ধারায় বিবৃতি দিয়ে বলেছিলেন, সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচারের সংবাদ আসলে অতিশয়োক্তি।

সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সুইস ব্যাংকের কাছে অর্থ পাচারের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) একাধিকবার বিভিন্ন দেশের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য চেয়েছে। তাদের কাছে একাধিকবার চিঠিও দেয়া হয়েছে। সেই সংগ্রহ করা তথ্য রিপোর্ট আকারেও প্রকাশ করেছে বিএফআইইউ।

তিনি আরো বলেন, সাধারণত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সব দেশের সঙ্গে বিএফআইইউ-এর একটি চুক্তি রয়েছে। তারা যে কোনো দেশ থেকে যে কোনো তথ্যই সংগ্রহ করতে পারে। তারা একাধিকবার বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছে। আমি বিশ্বাস করি, বিএফআইইউ তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছে। তিনি আরো বলেন, হয়তো তদন্তের স্বার্থে সব তথ্য প্রকাশ করছে না।

এদিকে গত ১৮ জুন রাজধানীতে অনুষ্ঠিত বিএফআইইউ-এর ‘বাংলাদেশে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসীকার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রমের ২০ বছর’ শীর্ষক সেমিনারে বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেন, বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ বিষয়ে জানতে সুইস অথরিটির কাছে প্রতিবারের মতো এবারো তথ্য চেয়ে আবেদন করেছে বিএফআইইউ। তিনি বলেন, বিএফআইইউ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ৬৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে। সেই তথ্য বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, দুদক ও তদন্তকারী সংস্থাকে দেয়া হয়েছে।

হাইকোর্টের ব্যাখ্যা তলব :

সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে অর্থ জমা করা বাংলাদেশিদের তথ্য কেন সরকার জানতে চায়নি, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, সরকার ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে আগামী রবিবারের মধ্যে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন আদালত। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের কতজনের কত টাকা আছে তার তালিকা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক আদেশে সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল হাইকোর্ট। পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকার কী পদক্ষেপ নিয়েছে তাও জানতে চায় আদালত। মন্ত্রীরা বরাবরই বলে এসেছেন, অর্থ পাচারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য সরকারের কাছে নেই।

112 ভিউ

Posted ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১২ আগস্ট ২০২২

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com