মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

সেন্টমার্টিনে পর্যটকের অতিরিক্ত চাপ আর হোটেল-কটেজের বর্জ্যে দূষিত নীল জল : হুমকীতে জীববৈচিত্র

রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২০
330 ভিউ
সেন্টমার্টিনে পর্যটকের অতিরিক্ত চাপ আর হোটেল-কটেজের বর্জ্যে দূষিত নীল জল : হুমকীতে জীববৈচিত্র

কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৫ জানুয়ারী) :: কক্সবাজারের টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে প্রতিদিন সকালে নয়টি বড় জাহাজ ও ৩০টির বেশি কাঠের নৌকায় করে প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটক দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ কক্সবাজারের সেন্টমার্টিনে পা রাখে। বিকালে একইভাবে সমসংখ্যক পর্যটক যার যার গন্তব্যে ফিরে যায়।অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সমাগম চলবে ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাস পর্যন্ত।

পর্যটন মৌসুমে এই বিপুলসংখ্যক পর্যটক প্লাস্টিক, পলিথিনসহ হাজারো অজৈব বর্জ্য ফেলে যায় সেন্ট মার্টিনে। অপচনশীল এসব বর্জ্য, এখানকার ১০৬টি হোটেল-কটেজের বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে সমুদ্রের নীল জল। সৈকতে ডিম পাড়তে পারছে না মা কচ্ছপ।নিত্য দূষণে বিপন্ন হয়ে পড়েছে সেন্টমার্টিন।

এমনকি ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ খ্যাত এই দ্বীপের সুলভ ডাব এখন প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। তাই সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় পর্যটক নিয়ন্ত্রণ ও দূষণ রোধের দাবি পরিবেশ সংগঠনগুলোর।

উদ্বিগ্ন সরকার ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। তারপরও সেন্টমার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। সেন্টমার্টিনের পরিবেশ দেখতে পরিবেশ অধিদফতরের একটি দল গত বছর সেন্ট মার্টিনে তিন দিন অবস্থান করে।

এ সময় তাঁরা পর্যটকবাহী প্রমোদ তরী (জাহাজ) চলাচল, লোকজনের বিচরণ, দ্বীপের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সমুদ্রতলের প্রবাল, শামুক-ঝিনুক নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা সেন্ট মার্টিনের তিন দিকের প্রবাল আস্তর থেকে বিপুল পরিমাণ পলিথিন, নৌকার মাছ ধরার জাল, প্লাস্টিক বোতল, ক্যান ও সিগারেটের উচ্ছিষ্ট উদ্ধার করেছেন। দ্বীপের তিন দিকের কয়েক শ’ একর প্রবাল এলাকায় বালুর আস্তর জমে থাকতে দেখেছেন তাঁরা।

শনিবার সকালে টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনে এসেছে আটটি জাহাজ। এর মধ্যে কেয়ারি সিন্দাবাদ, কেয়ারি ক্রুজ, ফারহান ক্রুজ, গ্রীন লাইন, বে ক্রুজসহ সব কটি জাহাজেই পাঁচ শ’র বেশি যাত্রী ছিলেন। এ ছাড়া জাহাজের বাইরে কাঠের ট্রলারে করে সেন্ট মার্টিন এসেছেন আরও সহস্রাধিক যাত্রী।

বেলা ১২টার পর থেকে পর পর সব লঞ্চ, কাঠের বোট, স্পিডবোট সেন্টমার্টিনে ভিড়তে শুরু করে। তখন একে একে সবাই দ্বীপে নেমে আসে। এ সময় ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা এবং শামুক, ঝিনুক না ধরার অনুরোধ জানানো হয় পর্যটকদের। কিন্তু সে অনুরোধে সাড়া মিলছে কমই। বেড়াতে এসে মানুষ যেন কিছুটা বেসামাল হয়ে যায়।

সেন্টমার্টিনের সর্বত্রই নাইলন ও প্লাস্টিক জাত চিপস প্যাকেট, চায়ের কাপ, বোতল, পানির বোতল, পানির গ্লাস, প্লেট, ডাবের পানি খাওয়ার স্ট্র, খাবার প্যাকেট, ভাঙা চশমা বা কাঠি, মাছ ধরার জালের টুকরা, নাইলন দড়ির টুকরা ছাড়াও পোড়া মাটি ও ইটের ভাঙা টুকরা পড়ে থাকতে দেখা যায়। পর্যটকদের অবহেলা ও উদাসীনতার ছাপ প্রবাল দ্বীপের সর্বত্র।

এমনকি সৈকত থেকে লোকজনকে শামুক-ঝিনুক আহরণ করতে দেখা গেছে। লোক সমাগমের কারণে গভীর সমুদ্র থেকে ডিম পাড়তে আসা ক্লান্ত ও দুর্বল মা কচ্ছপগুলো সৈকতে উঠতে পারছে না।

চলতি জানুয়ারি মাসের শুরুতে সেন্ট মার্টিনের দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে মাত্র দেড় ঘণ্টায় ১২০ কেজি (৩ মণ) প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এসব প্লাস্টিক বর্জ্যরে বেশির ভাগই ছিল একবার ব্যবহারযোগ্য কাপ, প্লেট, চিপসের খালি প্যাকেট।

পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য মতে, ৫৯০ হেক্টর আয়তনের ৭ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটারের এই প্রবালদ্বীপে অতিরিক্ত মানুষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে দ্বীপের পরিবেশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

সেন্ট মার্টিন হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, দ্বীপ ভ্রমণে আসা পর্যটকদের দ্বীপের পরিবেশ রক্ষায় আমরা সচেতন করছি। এখানে পর্যটকদের চাপ খুব বেশি। তাই পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি উদ্যোগ দরকার।

অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে সরকার। দ্বীপটিতে ১৫৪ প্রজাতির শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৬৮ প্রজাতির প্রবাল, ১৯১ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৬ প্রজাতির প্রজাপতি, ২৩৪ প্রজাতির মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ২৯ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। দ্বীপে ৭৭ প্রজাতির স্থানীয় পাখি, ৩৩ প্রজাতির পরিযায়ী পাখিসহ মোট ১১০ প্রজাতির পাখি ও ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল। এখন অনেক বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, দ্বীপের প্রবাল, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। হোটেল বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জল। আর সৈকতে কোলাহল বৃদ্ধি পাওয়ায় গভীর সমুদ্র থেকে ছুটে আসা মা কচ্ছপও ডিম দিতে পারছে না। ৫৯০ হেক্টর আয়তনের ৭ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটারের এই প্রবালদ্বীপে অতিরিক্ত মানুষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে দ্বীপের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নিচে নেমে গেছে। এ কারণে শতাধিক নলকূপে লবণ পানি ঢুকে গেছে। বিশেষ করে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত দ্বীপের ৭ হাজার মানুষ পানীয়জল সংকটে পড়ে। নলকূপ ও পুকুরের লবণযুক্ত পানি খেয়ে অনেকে ডায়রিয়াসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

330 ভিউ

Posted ২:১৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com