কক্সবাংলা ডটকম(৭ এপ্রিল) :: এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য নিজেদের ঘোষিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে (কৌশল) বাংলাদেশকে পাশে চায় যুক্তরাষ্ট্র। গত মাসে বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউজের সিনিয়র কর্মকর্তা লিজা কার্টিস আলোচনা করে গেছেন বাংলাদেশের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনও কোনও মন্তব্য না করে বিস্তারিত জানতে চেয়েছে সরকার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, লিজা কার্টিস ঢাকায় মূল বৈঠক করেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক।
এছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দীকির সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। তার প্রায় প্রতিটি বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন লিজা কার্টিস।
একজন কর্মকর্তা বলেন, পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বিষয়টি উত্থাপন করা হলে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের এখনও এ বিষয়ে কোনও কনসেপ্ট নোট বা এই ধরনের লিখিত কিছু দেয়নি।
ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিকে চীন বিরোধী একটি উদ্যোগ কিনা, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, এর মাধ্যমে মূলত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে যুক্তরাষ্ট্র কী প্রত্যাশা করে, তা বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় আকাশ বা সুমদ্রপথে পণ্য পরিবহনে অবাধ স্বাধীনতা ও আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্থলসীমান্ত বা সুমদ্রসীমা সংক্রান্ত সব বিরোধের নিষ্পত্তি। এছাড়া স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অবকাঠামো উন্নয়ন করে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক যোগাযাগ বৃদ্ধিকে তারা উৎসাহিত করে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, এর প্রতিটি বিষয় কোনও না কোনোভাবে চীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সাউথ চায়না সি নিয়ে চীন ও এর সঙ্গে লাগোয়া দেশগুলো বিবাদ আছে। চীন এই অঞ্চলে অনেক বৃহৎ প্রকল্প করছে এবং অভিযোগ আছে, এইসব প্রকল্প কাজ পাওয়ার জন্য অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়ে থাকে এবং চীনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে মিল নেই পশ্চিমা গণতন্ত্রের।
আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় এশিয়া অঞ্চলের জন্য ‘এশিয়া রিব্যালান্সিং’ কৌশল ছিল কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরে তিনি ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি’ ঘোষণা করেন।
দু’টির মধ্যে পার্থক্য কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওবামা চীনের সঙ্গে শত্রুভাবাপন্ন আচরণ করেননি কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফায়েজ আহমেদ বলেন, ‘অন্য কোনও রাষ্ট্রের বিরোধের সঙ্গে বাংলাদেশের জড়ানো ঠিক হবে না।’
তিনি বলেন, ‘একদিকে যেমন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ক আছে, তেমনি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার চীন। বৃহৎ অনেক প্রকল্প সরাসরি চীনের সহায়তায় তৈরি হচ্ছে। এ রকম পরিস্থিতিতে কোনও একটি রাষ্ট্রের পক্ষ নেওয়া হলে অন্যপক্ষ রুষ্ট হতে পারে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
একইমত পোষণ করে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে চীনবিরোধী নীতিসহ আরও অনেক কমপোনেন্ট আছে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষে কোনও বিশেষ ক্যাম্পে যোগ দেওয়াটা যুক্তিসঙ্গত হবে না।’
এখানে প্রতিযোগিতার সম্পর্ক থেকে সহযোগিতার সম্পর্কের ওপর জোর দিলে সব পক্ষ লাভবান হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
Posted ১২:৫৯ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৮ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta