কক্সবাংলা ডটকম(২৬ আগস্ট) :: জাতিসংঘে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিতে চীন ভেটো দেওয়ায় বাংলাদেশে তীব্র প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়। কিন্তু একইসঙ্গে যে কারণে চীন এই অবস্থান নিলো, যুদ্ধবন্দিদের ফেরত না দেওয়াকে কারণ সাজিয়ে যে যুক্তি হাজির করলো, তার বিপরীতে বাংলাদেশ তার সিদ্ধান্ত মুহূর্তেই জানিয়ে দিয়েছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার হবে এবং এই বাংলাদেশেই হবে। এই নরপশুদের বিচারের হাত থেকে রক্ষার সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেওয়া হবে। এই সিদ্ধান্ত থেকে বাংলাদেশে কোনও অবস্থাতেই পিছপা হবে না। ১৯৭২ সালের ২৬ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আব্দুস সামাদ বলেন, পাকিস্তানের শাসকবর্গ একটা ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে এই উপমহাদেশের ব্যাপারে বিশ্ব রাজনীতিকে টেনে এনে জটপাকানো নানা রকম বিবৃতি দেওয়ার চেষ্টা করছে। যাতে করে যুদ্ধাপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত করা থেকে আমরা বিরত হই। কিন্তু আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করছি যেসব যুদ্ধবন্দি বাংলাদেশের নিরপরাধ নারী-পুরুষ ও শিশুর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে জঘন্যতম অপরাধ করেছে, এ দেশেই আমরা তাদের বিচার করবো।
ভেটো নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ মহলের অভিমত
জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আবেদনে ভেটো প্রয়োগ করে চীন এক মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ মহল জেনেভায় এ অভিমত ব্যক্ত করেন। সূত্রে বলা হয় সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সিমলা চুক্তি বানচাল করা এবং ভারতীয় উপমহাদেশে সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধানে বাধা সৃষ্টি করতেই চীন এই উদ্যোগ নেয়। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে উক্ত সূত্রে বলা হয় যে, ক্ষমতার রাজনীতিতে উপমহাদেশকে দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার অব্যাহত রাখতে খুবই আগ্রহী তারা। ভেটো প্রয়োগের মধ্য দিয়ে যে অশ্রদ্ধা প্রদর্শিত হয়েছে তাতে চীন একঘরে হয়ে পড়েছে। আরও বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্য দেশ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিতে সমর্থন দেওয়ায় বঙ্গবন্ধু সন্তোষ প্রকাশ করেন।
.
সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে শত্রুতা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ বলেন, বাংলাদেশের জাতিসংঘের ভুক্তির আবেদনে ভেটো দিয়ে চীন আমাদের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে শত্রুতা করেছে। এইদিন এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো প্রদান সম্পর্কে একটি বিবৃতি পাঠ করেন। তিনি অত্যন্ত কড়া ভাষায় চীনের ভূমিকা নিন্দা করেন এবং তাদের গণতন্ত্র ও শান্তির মুখোশ উন্মোচন করেন। তিনি বলেন, আমাদের আজকের দুঃখ-দুর্দশার মূলে রয়েছে চীন। তারা আমাদের শত্রু হিসেবে কাজ করেছে।
চীনা ভেটোয় বাংলাদেশ কিছুই হারায়নি
চীন নিরাপত্তা পরিষদের ভেটো প্রয়োগের ফলে জাতিসংঘে বাংলাদেশের আসন লাভের পথে অন্তরায় সৃষ্টি হয়। এতে সারা দেশের মানুষ চীনের কঠোর সমালোচনা ও ঘৃণা প্রকাশ করে। পত্রিকার খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় শক্তির প্রস্তাবে ভেটো প্রয়োগ করে চীন তার প্রকৃত রূপ উদঘাটন করেছে। চীনের বিরুদ্ধে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী সমাজ ও সর্বস্তরের জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানি বর্বর বাহিনীর গণহত্যা ও নির্যাতন সমর্থন করেছিল চীন। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর আশা করা গিয়েছিল যে চীন তার ভুল ধারণা ত্যাগ করবে। কিন্তু বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের প্রশ্নে বিরোধিতা করে জাতিসংঘে বাংলাদেশের আসন লাভের প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে চীন আবার প্রমাণ করলো যে তারা এখনও পাকিস্তানের সামন্ততান্ত্রিক ও জঙ্গি সরকারকে সমর্থন করে।
.
বাংলাদেশ এখন তার ন্যায্য আসন লাভের দাবি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের কাছে পেশ করবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের অধিকারের পক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন বাংলাদেশ লাভ করবে বলে আশা করা হচ্ছিলো। বাসস পরিবেশিত খবরে উল্লেখ করা হয় যে ঢাকার রাজনৈতিক মহল মনে করে, চীনের ভেটোর ফলে বাংলাদেশে কিছুই হারায়নি। এমনকি বাংলাদেশ যদি অদূর ভবিষ্যতে জাতিসংঘের সদস্য নাও হতে পারে তবু কিছু ভাবনার নেই। কারণ, বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য না হয়েও জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার সদস্য হিসেবে বিশ্ব সংস্থার প্রায় সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। অপরপক্ষে বাংলাদেশের আবেদনের ভেটো দিয়ে চীন সে সময় সারা দুনিয়া থেকে একঘরে হয়ে পড়েছে।
Posted ৪:৫১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta