কক্সবাংলা ডটকম(৮ জুন) :: ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্যে জাতীয় প্রস্তাবিত বাজেটকে বাস্তবায়নযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আজ (৮ জুন) আয়োজিত বাজেট-পেশ পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “যখন আমরা বাজেট প্রস্তাব দেই, তা বাস্তবায়ন করা যাবে কী যাবে না সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেই দেই।”
তাঁর মতে, প্রতি বছরই বাজেটে ঘাটতি থাকে। কিন্তু, আগের বছরগুলোর তুলনায় এ বছর ঘাটতির পরিমাণ কমেছে।
সম্মেলনে তাঁর পূর্ববর্তী বাজেটগুলোর সুফলের কথা তুলে ধরে মুহিত বলেন, বিগত বছরগুলোতে দেশের দারিদ্রের হার কমেছে, শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন বেড়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
প্রতিটি বাজেটই নির্বাচনের সঙ্গে সংযুক্ত উল্লেখ করে মুহিত বলেন, “শুধুমাত্র নির্বাচনের বছর হিসেবে এই বাজেট দেওয়া হয়নি। প্রতিবারের মতোই এই বাজেট দেওয়া হয়েছে।”
অর্থমন্ত্রীর মন্তব্য, “এক সময় বাংলাদেশের বাজেট করার জন্যে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হতো। এখন তা করতে হয় না। সেই অবস্থার পরিবর্তন করে আমরা উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।”
উল্লেখ্য, (৭ জুন) অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্যে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট প্রস্তাব করেন। এতে তিনি জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ৭.৮ শতাংশ।
এদিকে, অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘অবাস্তব’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি বাস্তবায়নে কাঠামো ও নীতিগত পরিবর্তনের অভাব রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ জুন) জাতীয় সংসদে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এরপর নানা মহল থেকেই বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করে। তবে, বাজেট প্রতিক্রিয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশিবার যে শব্দ দুটি উচ্চারিত হয়েছে সেগুলো হলো, ‘গরিব মারার ও ভোটার তুষ্টির বাজেট’। এছাড়া বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংগঠনও বাজেটের নানা সমালোচনা করেছেন। বাজেটে ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কর প্রস্তাব নিয়েও নানা মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়।
প্রতিক্রিয়ায় সিপিডি’র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আবাসন কেনার ক্ষেত্রে একটা বড় চাপ সৃষ্টি করা হলো। আর যারা সচ্ছল মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত আছে তাদের জন্য আবার ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এটা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে, বাংলাদেশে বাসস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একধরনের বৈপরীত্য।’
এই বিষয়টি নিয়ে আজ শুক্রবার (৮ জুন) সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেন এক সাংবাদিক।
তিনি বলেন, ‘আমার প্রশ্নটি এরই মধ্যে অনেকেই বলে ফেলেছেন, অনেকেই বলছেন এই বাজেট ধনী বান্ধব বাজেট এবং গরিব মারার বাজেট। ছোট ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে আপনি ট্যাক্স বাড়ালেও বড় ফ্ল্যাটে আপনি ট্যাক্স বাড়াননি। এটা কি আসলে গরিব মারার বাজেট কিনা?
এরপর অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে উত্তরের প্রত্যাশায় বসেন ওই সাংবাদিক। তবে, অর্থমন্ত্রী প্রশ্নটি আবারও শুনতে চান। এরপর তিনি পুনরায় প্রশ্নটি করতে থাকলে তার মাঝেই থামিয়ে দিয়ে অর্থমন্ত্রী তাকে বসতে বলেন।
এ সময় নড়চড়ে বসে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আপনারা যে প্রশ্ন করছেন এগুলো একেবারেই মিনিংলেস (অর্থহীন) হয়ে যাচ্ছে। এখানে কোনো কিছু জানতে চেয়ে কোনো প্রশ্ন করা হচ্ছে না।’
সাংবাদিকদের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি জানতে চান, ‘বাংলাদেশ এখন কী অবস্থায় আছে আপনারা জানেন? এদেশে দারিদ্র্য বাড়ছে?
তিনি আবারও বলেন, ‘কেউ এ প্রশ্নের উত্তর দেন। বাংলাদেশে দারিদ্র্য বাড়ছে?
এরপর রুদ্রমূর্তি ধারণ করে নিজেই উত্তর দেন। তিনি বলেন, ‘এদেশে দারিদ্র্য বাড়ছে না। যে বলে বাড়ছে হি ইজ জাস্ট লায়িং (তিনি মিথ্যা বলছেন), অফ কোর্স লায়িং (অবশ্যই মিথ্যা বলছেন)। বৈষম্য বাড়েনি। কয়জন দরিদ্র দেশে আছেন? আপনারা এমন সব প্রশ্ন করছেন যে এগুলো নিয়ে বলতেও আমার লজ্জা করে।’
এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রী আরও চটে যান। চোখ থেকে চশমা খুলে ফেলে তিনি বলেন, ‘একটা দেশের লোকজন এরকম কী করে হতে পারে? এই যে সাংবাদিকরা, এক একজন সাংবাদিক শিক্ষিত লোক, তারা দেশের পরিবর্তন স্বীকার করেন না। বাংলাদেশে এখন ২২ শতাংশ লোক গরিব। আপনাদের যখন জন্ম হয়েছে, আপনাদের জন্মের আগে এ সংখ্যা ছিল ৭০ শতাংশ। বোঝেন কোথায় ছিল বাংলাদেশ এবং কোথায় এসেছে। এই কিছুদিন আগে ৩০ শতাংশ লোক ছিল গরিব। ৭ বছর আগে সাড়ে ৩০ শতাংশ দরিদ্র ছিল, আজ ২২ দশমিক ৪ শতাংশ। যারা চূড়ান্ত গরিব, তাদের সংখ্যা ছিল ১৮ শতাংশ। এখন ১১ শতাংশ। কোন মুখে আপনারা বলেন, এই দেশে গরিব মারার বাজেট হচ্ছে, ধনীকে তেল দেওয়ার বাজেট হচ্ছে? বলেননি, কিন্তু বোঝাতে চাচ্ছেন দেশের উন্নয়ন কিছুই হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা বাজেট দেখেননি। আপনারা কোনোভাবেই এই বাজেটের সমালোচনা করতে আসেননি এখানে। আপনাদের কিছু গঁৎবাঁধা প্রশ্ন আছে। সেই প্রশ্ন করতেই আপনারা এখানে এসেছেন।’
এরপর পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সুপ্রিয় বন্ধুগণ আপনারা আস্তে আস্তে মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে প্রশ্ন করবেন। তিনি একটি একটি প্রশ্নের জবাব আপনাদের দেবেন। যতক্ষণ আপনারা সন্তুষ্ট না হবেন আমরা ততক্ষণ চেষ্টা করব আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার।
পরবর্তীতে অবশ্য অর্থমন্ত্রী ‘ঠান্ডা মেজাজেই’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।
Posted ৬:০৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ জুন ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta