কক্সবাংলা ডটকম(৯ জুন) :: সৌদি আরবে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এরই মধ্যে দেশটিতে শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা এক লাখ পেরিয়ে গেছে। একই সঙ্গে অন্যান্য দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে দেশটির। এ অবস্থায় চলতি বছর দেশটিতে হজ পালনের জন্য নিবন্ধনকৃত বাংলাদেশীদের মধ্যে সেখানে যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, করোনার কারণে বিদেশীদের হজযাত্রা বাতিল করা হবে, নাকি সীমিত আকারে সুযোগ দেয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি সৌদি আরব। তবে যদি শেষ পর্যন্ত হজের সুযোগ মেলেও, সেক্ষেত্রে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে কঠোরভাবে। এতে করে তাদের খরচও বাড়বে। এ অবস্থায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এদিকে ৯জুন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এবার সীমিত পরিসরে হজ আয়োজন করতে পারে সৌদি আরব। সেক্ষেত্রে হজ পালনের জন্য প্রত্যেক দেশের নির্ধারিত কোটার ২০ শতাংশ এবার হজে যেতে পারবেন। সে হিসেবে এবার প্রতিবারের তুলনায় হজের পরিসর হতে পারে এক-পঞ্চমাংশ।
নিজস্ব সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স আরো জানিয়েছে, সৌদি আরবের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা করোনা মোকাবেলায় এবার হজ বাতিলের জন্য চাপ দিচ্ছেন। তবে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত প্রতীকীসংখ্যক মুসল্লিদের হজে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে দেশটি।
এ প্রসঙ্গে সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ অফিসের কাউন্সিলর (হজ) মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, বিদেশী একটি গণমাধ্যমে হজবিষয়ক খবরটি আমরা দেখেছি। পরবর্তী সময়ে সৌদি আরবের হজসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেননি। ফলে হজের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না।
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করতে বিদেশীদের ওমরাহ পালন স্থগিত করে সৌদি আরব। একই সঙ্গে পর্যটন ভিসা নিয়ে আসা বিদেশীদের সৌদি আরবে প্রবেশও বন্ধ করে দেয়া হয়। এর দুই মাসেরও বেশি সময় পর করোনা সংক্রমণের বিস্তার রোধে আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল করে সৌদি মসজিদগুলো খুলে দেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ৫ জুন সৌদি আরবের প্রবেশপথ বন্দরনগরী জেদ্দায় নতুন করে লকডাউন আরোপ করে সৌদি আরব।
প্রসঙ্গত, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এ বছর ৩০ জুলাই হজ হতে পারে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত হজ প্যাকেজে এবার বাংলাদেশ থেকে মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৮ যাত্রী হজে যেতে পারবেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ঘোষণা অনুযায়ী সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যেতে হলে প্যাকেজ-১-এ ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, প্যাকেজ-২-এ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও প্যাকেজে-৩-এ ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা করে মাথাপিছু ব্যয় ধরা হয়। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় দুটি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন (হাব)। এর মধ্যে সাধারণ প্যাকেজের আওতায় হজে যেতে মাথাপিছু খরচ পড়বে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৮০০ টাকা। ইকোনমি প্যাকেজের আওতায় যেতে খরচ পড়বে ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা।
অন্যদিকে চলমান পরিস্থিতিতে সৌদি আরব যদি সীমিত পরিসরে হজের অনুমতি দেয়ও, সেক্ষেত্রে হজযাত্রীদের নানা ধরনের বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। হজ কার্যক্রম পরিচালিত হবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের মাধ্যমে। এছাড়া যাত্রীদের আবাসন, যাতায়াত ও হজ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কার্যক্রমের ওপর আরোপ করা হবে কঠোর নজরদারি। এসব কারণে বাড়তে পারে হজ পালনের খরচ।
এ প্রসঙ্গে মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সৌদি আরবে হজযাত্রীদের পরিবহন, আবাসনসহ বিভিন্ন ব্যয়ে পরিবর্তন আসতে পারে, যার কারণে যাত্রীদের হজযাত্রার খরচও বাড়তে পারে। তবে সৌদি আরব সরকার কীভাবে কী করবে, তা এখনো চূড়ান্ত নয়। তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পরই সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জানা যাবে।
Posted ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১০ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta