বিশেষ প্রতিবেদক(১১ অক্টোবর) :: টেকনাফ উপজেলার জামাল হোসাইনের ছেলে শাহ আজম।বয়স মাত্র ২৬ বছর। এ তরুণ বয়সেই চট্রগ্রামের পাঁচলাইশের মোজাফ্ফর নগরে ও বায়েজিদের শীতল ঝর্ণায় দুই কোটি টাকা মূল্যের জায়গার মালিক, সাড়ে ২৬ কোটি টাকার ব্যাংক ডিপোজিট, ব্যাংকে জমা কোটি কোটি টাকা, প্রিমিও ব্রান্ডের গাড়িসহ বিপুল অর্থ-বিত্ত গড়ে তুলেছে।
তাও আবার দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে। এসব অর্থ-বিত্ত যখন গড়ে তোলা শুরু করে তখন তার বয়স একুশ।
২০১৬ সালে নগরীর বায়েজিদ এলাকায় ৩৬ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া একটি মামলার (নং-১, তাং-৩/৬/১৬) আসামী ওই যুবকের বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়ে তার এসব সম্পদের খোঁজ পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
বর্তমানে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের হওয়া একটি মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে চলা মামলাটির চার্জশিট শীঘ্রই আদালতে দাখিল করা হবে।
সিআইডি’র তদন্তে পাওয়া গেছে, ওই যুবকের অস্বাভাবিকভাবে অর্থ-বিত্ত বেড়ে উঠার পেছনে ইয়াবা থেকে আয়ের উৎস খুঁজে পেয়েছে। মূলত শুটকি ব্যবসায়ী পরিচয়ের আড়ালে সে ইয়াবা কারবারে জড়িত। বর্তমানে তার বয়স ২৬ বছর। সে টেকনাফ উপজেলার জামাল হোসাইনের ছেলে। নগরীর বায়েজিদে শীতলঝর্না আবাসিক এলাকায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পরিদর্শক মো. ফারুক হোসেন বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। তবে আমরা শাহ আজমের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পত্তি অর্জনের প্রমাণ পেয়েছি। মূলত ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে সে অবৈধভাবে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছে। সে টেকনাফে তালিকাভুক্ত একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে টেকনাফসহ বিভিন্ন থানায় ১০-১২টি মাদকের মামলা রয়েছে।
ফারুক বলেন, আজমের বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসার মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পত্তি অর্জনের চার্জশিট তৈরি করা হচ্ছে। এছাড়া মামলায় শাহ আজমের সাথে তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার শেলীকেও আসামী করা হতে পারে বলে জানান সিআইডি’র এই কর্মকর্তা। তার নামে কিছু সম্পদ থাকার তথ্য পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।
সিআইডি কর্মকর্তা ফারুক বলেন, তদন্তে আরও কিছু কাজ বাকী আছে। সেটা শেষ হলে শীঘ্রই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
সিআইডি’র সূত্র বলছে, মানি লন্ডারিং আইনে দায়ের হওয়া মামলায় শাহ আজম গ্রেপ্তার হওয়ার পর বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।
বায়েজিদে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনার মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি পরিদর্শক মুহাম্মদ শরীফ বলেন, মাত্র ২৫ বছর বয়সে শাহ আজম বিপুল সম্পদের মালিক। সে কয়েক কোটি টাকা মুল্যের জায়গা কেনার পাশাপাশি ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা লেনদেন করত। এছাড়া সে প্রাইভেট কার ও কাভার্ড ভ্যানেরও মালিক।
তিনি বলেন, শাহ আজম নিজেকে প্রথমে রিয়াজউদ্দিন বাজারে শুটকি ব্যবসায়ী পরিচয় দেয়। তবে ওই নামে রেয়াজউদ্দিন বাজারে কোনো শুটকী ব্যবসায়ীর খোঁজ আমরা পাইনি।
এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে তার নামে কোনো ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া যায়নি।
শরীফ বলেন, আজমের বাবাও ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত।সে টেকনাফের একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় থাকা প্রথম দশজনের মধ্যে তার নাম রয়েছে। শাহ আজমের শ্বশুরও একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী। সম্প্রতি তার শ্বশুর র্যাবের অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে।
তদন্ত সূত্র জানায়, শাহ আজমের নামে ও.আর.নিজাম রোডে প্রিমিয়ার ব্যাংকে , জুবিলী রোডে ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংক ও টেকনাফে ইসলামী ব্যাংকে তিনটি হিসাব পাওয়া যায়।
২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এসব হিসাব খোলা হয়। এরমধ্যে ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিন কোটির অধিক ও ইসলামী ব্যাংকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা লেনদেন করে শাহ আজম। তবে তুলনামূলক লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়নি প্রিমিয়ার ব্যাংকে।
এছাড়া আজমের নামে ইসলামী ব্যাংকে সাড়ে ২৬ কোটি টাকার ডিপোজিট থাকার প্রমাণ মেলে। এসব অর্থ-বিত্ত শাহ আজম ২০/২১ বছর বয়সেই গড়ে তোলা শুরু করে।
২০১৭ সালের আগস্টের পর ওই ঘটনায় মানি লন্ডারিং আইনে শাহ আজমের বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় একটি মামলা দায়ের করে সিআইডি কর্মকর্তা মুহাম্মদ শরীফ।
২০১৬ সালের জুনে ইয়াবা উদ্ধার মামলার বাদী তৎকালীন বায়েজিদ থানার উপ পরিদর্শক আব্দুর রব বলেন, ওই ঘটনায় শাহ আজম ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার মৌলভী আলমগীর পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও আমরা আজমের স্ত্রী সেলিনা আক্তার শেলী, বাসার কেয়ারটেকার ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই। পরে শুনেছি আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে সেলিনা আক্তার শেলী পলাতক রয়েছে।
Posted ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta