বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

৬ মাসে ৭৩৯১ আত্মহত্যা

মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১
270 ভিউ
৬ মাসে ৭৩৯১ আত্মহত্যা

কক্সবাংলা ডটকম(১৫ নভেম্বর) :: কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার মুদাফফরগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের শ্রীয়াং দাস পাড়ায় জয় চন্দ্র দাস (১৮) নামে এক কিশোর আত্মহত্যা করে ৬ জুন। কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পারে বাবার কাছে মোবাইল ফোন চায় সে; কিনে না দেওয়ায় আত্মহত্যা করে জয় চন্দ্র দাস। একইভাবে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়িতে মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে অটোভ্যান চালকের ছেলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আপন মিয়া (১০)।

মাদারীপুরের কালনিকিতে একই কারণে ৩১ আগস্ট আত্মহত্যা করে কলেজছাত্রী সাবিকুন্নাহার জেবিন (১৭)। আবার গত ২৯ সেপ্টেম্বর পড়ার জন্য মা বকা দেওয়ায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে আত্মহত্যা করে মাদরাসা ছাত্র তরিকুল (১৬)। মেয়ের অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তির কারণে মা বকা দেওয়ায় গত ২৯ মে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে এসএসসি পরীক্ষার্থী ফাতেমা আক্তার।

প্রতিনিয়ত এ রকম তুচ্ছ কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, মোবাইল কিনে না দেওয়া, সামান্য বকাঝকা করা এসব তুচ্ছ কারণে কিশোর, কিশোরী ও তরুণ তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে।

জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশে পুলিশ ৭ হাজার ৩৯১টি আত্মহত্যার ঘটনা রেকর্ড করেছে। একই সময় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে ১১ হাজার ১০৯টি। এসব অপমৃত্যুর মধ্যে ৭ হাজার ৩৯১টিই আত্মহত্যার ঘটনা। পুলিশ সদর দফতরের (অপরাধ) শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, তুচ্ছ কারণ ও পারিবারিক কলহ এবং পরকীয়াসহ নারী ঘটিত কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে।

পুলিশের পরিসংখ্যান মতে, জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত আত্মহত্যা করা ভিক্টিমদের মধ্যে ৫২ শতাংশ পুরুষ ও ৪৮ শতাংশ নারী। আত্মহত্যা করা এসব ভিক্টিমের ৬০ শতাংশই আত্মহত্যা করেছে গলায় ফাঁস দিয়ে। বিষপানে আত্মহত্যা করছে প্রায় ২৬ শতাংশ। গায়ে আগুন দিয়ে ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আত্মহত্যা করা এসব ব্যক্তির মধ্যে ২৫ শতাংশরই বয়স ১৮ বছরের নিচে। ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়সী প্রায় ৩৮ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪৫ বছর বয়সী প্রায় ২২ শতাংশ এবং ১০ শতাংশের বয়স ৪৬ থেকে ৬০ বছর।

৬০ বছরের বেশি বয়স্ক আছেন ৫ শতাংশ। পুলিশ সদর দফতর আত্মহত্যার প্রবণতা প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে কর্মশালা করার নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেক জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের (ক্রাইম) নেতৃত্বে মামলাগুলো পর্যালোচনা করে কারণ নির্ণয় ও প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে বলেছে।

পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি, অপারেশন, প্লানিং ও মিডিয়া) মো. হায়দার আলী খান আত্মহত্যার প্রবণতা রোধকল্পে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি  বলেন, ‘সমাজ পরিবর্তিত হচ্ছে।আগে দেখা গেছে, একজন স্কুলছাত্রকে শিক্ষকরা স্কুলে বেদম মারধর করত। অভিভাবকরা মারধরের জন্য শিক্ষককে সাধুবাদ জানাতেন। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই। এখন কোনো শিক্ষার্থীকে শিক্ষক মারধর করলে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করেন, অভিভাবকরাও ক্ষুব্ধ হন। এখন সমাজে আচরণের ধারা পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন আর বয়স কোনো আনুপাতিক বিষয় নয়।

আমরা দিনে দিনে অনলাইন ও মোবাইল ফোন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। অনলাইনকেন্দ্রিক লাইফস্টাইল গড়ে উঠেছে। আগে একজন কিশোর কিশোরীর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হতো। পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনের ভয় ছিল। কিন্তু এখন প্রযুক্তির কারণে সহজেই একে অপরের সান্নিধ্যে চলে আসছে। আমাদের আবেগ, হাসি, কান্না, সুখ, দুঃখগুলো সহজেই প্রযুক্তির মাধ্যমে অপরের কাছে প্রকাশ করতে পারছি।

এসব কারণে আবেগতাড়িত হয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকরা বুঝতেও পারছেন না। আবার অনেক গেমস আছে যেগুলো আত্মহত্যার প্রবণতাকে উদ্বুদ্ধ করে। অনেকে লাশ ও রক্ত দেখলে ভয় পায় আবার অনেকে সেটা দেখে স্বাভাবিকভাবেই। পুলিশর এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। আগে দেখা গেছে; মানুষ লবণ দিয়ে পেট ভরে ভাত খেয়ে খুশি থাকত।

কিন্তু এখন তারা চায় দামি জামা, জুতা, দামি মোবাইল ফোন। পণ্যকেন্দ্রিক আমাদের আবেগ অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, কোনো ক্লাসে তার বন্ধু দামি আইফোন বা দামি মোবাইল সেট নিয়ে আসছে। তখন অন্য বন্ধু যার হয়তো সামর্থ্য নেই তার মধ্যেও সেটি পাওয়ার আকাক্সক্ষা জাগে। মা বাবার কাছে চেয়ে না পেলে কেউ কেউ আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে। প্রযুক্তি বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহারও আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ানোর জন্য দায়ী। এখন কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু আপলোড করলেই কেউ হয়তো না জেনেই আপত্তিকর কমেন্টস ও শেয়ার করে দিচ্ছে।

এ ক্ষেত্রে আত্মহত্যার প্রবণতা উস্কে দেয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আত্মহত্যার প্রবণতা রোধে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বড় ভূমিকা রাখতে পারে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে আত্মহত্যার যথাযথ কারণগুলো চিহ্নিত করে প্রতিকারে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। মানুষকে নিরাপদ জীবন ও জীবনের জন্য জীবন, যতদিন বাঁচব স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচব, এই ধারণা দিতে হবে।’ হায়দার আলী খান আরও বলেন, ‘আত্মহত্যার কিছু ঘটনার জন্য দায়ী মাদক দ্রব্যের বিস্তার। আগের তুলনায় এখন মাদক সংগ্রহ কিছুটা সহজ। কেউ হয়তো ফোনে অর্ডার করেই হাতের নাগালে মাদকদ্রব্য পেয়ে যাচ্ছে। আত্মহত্যা প্রবণতা রোধ করার জন্য মাদকের বিস্তারও কঠোরভাবে রোধ করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ফারজানা রহমান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি থিউরি রয়েছে যাকে বলা হয় ‘ব্রোকেন উইন্ডো থিউরি।’ কোনো কিশোর আপনার বাসার জানালার কাচ ভেঙে ফেলল, আপনি যদি তার বিষয়ে কঠোর না হন, তাহলে দেখবেন এক সময় সে খুনও করে ফেলতে পারে। অর্থাৎ কোনো অপরাধই এক দিনে হয় না।

আত্মহত্যাপ্রবণ হওয়ার আগে তার আগে কিছু কর্মকান্ড আছে। যা দেখে আপনি বুঝতে পারবেন শিশুটির মধ্যে অপরাধ প্রবণতা আছে; সে আত্মহত্যা বা অন্য কোনো অপরাধ করতে পারে।তার মধ্যে বড় একটি বিষয় হচ্ছে আপনি যদি দেখেন, কোনো শিশু যদি অনিয়ন্ত্রিত আচরণ করে যা সমাজ স্বীকৃত নয়; যেমন বেয়াদবি করা, মা বাবার কথা না শোনা, সে যাদের সঙ্গে মিশে তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো না হওয়া, মা বাবার ওপর বিভিন্ন কারণে অতিমাত্রায় চাপ প্রয়োগ করা, তাহলে সে অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে। এমন আচরণ যা আমাদের সামাজিক প্রথায় মেনে নেয় না।

আমরা এখন সন্তানদের স্কুলে শারীরিক শাস্তি দিতে পারি না। উচ্চ আদালতেরও এক্ষেত্রে নির্দেশনা রয়েছে। আমি নিজেও মনে করি শারীরিক মারধর উচিত নয়, এটি শিশুর সামাজিক মর্যাদা খর্ব করে। কিন্তু আমাদের সমাজে দ্রুত পরিবর্তনের কারণে মা-বাবা হিসেবে সন্তানদের যেভাবে অভিভাবকত্বসুলভ শাসন করা উচিত; আমরা সেভাবে শাসন করতে পারি না। মা-বাবার যে দায়িত্ব সেটা আমাদের অনেকের মধ্যে এখনো হয়তো গড়ে ওঠেনি। আমরা মা-বাবা হচ্ছি ঠিকই কিন্তু সন্তানকে যে ধরনের পারিবারিক অনুশাসন দেওয়া উচিত, সেটি দিতে পারছি না।

মারধর বা নির্যাতন নয়; শিশুকে বিকল্প উপায়ে শাসন করা উচিত। শিশু কী চায় তার মধ্যে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা। কারণ শিশুরা মনে করে সে যা চাইবে সেটিই তার অধিকার। সে আমার কথা শুনছে না, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করছে না, তারপরও তাকে শাসন না করে বরং ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঘড়ি কিনে দিচ্ছি। ১ হাজার টাকা দিয়ে দিচ্ছি বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য।

তখন শিশু বুঝতে শিখে না, কোনটি তার অধিকার আর কোনটা অধিকার নয়।’ ফারজানা রহমান আরও বলেন, কোনো শিশু-কিশোর যদি তার পারিবারিক প্রথা বা সামাজিক প্রথা যেগুলো রয়েছে সেগুলো ভঙ্গ করে, তাহলে তার পরিবারের উচিত তাকে বোঝানো যে, তুমি এটা করলে এটা পাবা না, এটা করলে ওটা হবে না, তুমি পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ করেছ তুমি আগামী এক সপ্তাহ টিভি দেখতে পারবা না। শিশুকে শাসনের সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। সঠিক শাসন না করতে পারলে শিশু কিশোররা মনে করবে পাখি জামা পাওয়া তার অধিকার, আবার ২ লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল পাওয়া, কিংবা আইফোন বা ল্যাপটপ পাওয়াও অধিকার মনে করে। আর সে তার অধিকার না পেলে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে।

এ ছাড়া সামাজিক চাপ বেশি থাকলে, আয় ও সম্পদের বৈষম্য থাকলে তখনো আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ে। আত্মহত্যা প্রবণতা রোধে সন্তানকে তার অধিকার সম্পর্কে বোঝাতে হবে। তাকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। সন্তানকে বোঝাতে হবে অধিকার এবং দায়িত্ব একে অপরের পরিপূরক। শুধু তার অধিকার পেলেই হবে না তারও কিছু দায়দায়িত্ব আছে। কারণ আমরা শুধু সন্তানকে চাওয়া শিখাই, সন্তানের যে মা-বাবার প্রতি দায়িত্ব আছে সেটি বুঝতে শিখাই না। তাই আমাদের অভিভাবকদেরও দায়-দায়িত্ব নতুন করে শেখার বিষয় আছে। এই দায়িত্ব নিজেরা শিখতে পারলে সন্তানদের আত্মহত্যার মতো ভয়ানক অপরাধ প্রবণতা কমানো সম্ভব।

270 ভিউ

Posted ২:৩৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ নভেম্বর ২০২১

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com