কক্সবাংলা ডটকম(২ এপ্রিল) :: সামনের আগস্টে পাকিস্তানের বয়স হবে ৭৫। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করা দেশটির প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল পাঁচ বছর। এখন ২২তম সময়কাল চলছে, এর আগের কোনো প্রধানমন্ত্রীই তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। এসব নেতা সামরিক অভ্যুত্থান, হত্যা, বরখাস্ত, সেনাবাহিনীর চাপসহ নানা কারণে চেয়ার ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে গদি হারান নওয়াজ শরিফ। আবারও জটিল রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে দেশটি। এর মধ্যে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও পূর্বসূরিদের ভাগ্যবরণ করতে যাচ্ছেন। সংবাদমাধ্যম জিও টিভির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটির শাসন ক্ষমতায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে সেনাবাহিনী। তাদের কারণে বেশিবার সরকারের পতন হয়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে তখন থেকে দেশটিতে অন্তত চারটি বেসামরিক সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট নির্বাচিত হন। মেয়াদ পূর্ণ করার আগে ১৯৫১ সালে হত্যার শিকার হন। এর পরদিন দায়িত্ব গ্রহণ করেন খাজা নাজিমুদ্দিন। বিরোধের কারণে গভর্নর জেনারেল গুলাম মুহাম্মদ তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানান। যদিও তিনি সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন গভর্নর।
ওইদিনই মুহাম্মদ আলী বগুড়াকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন গভর্নর। দুই বছরের মাথায় ১৯৫৫ সালের ১২ আগস্ট তাকে সরিয়ে দেন ভারপ্রাপ্ত গভর্নর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা। ওইদিনই চৌধুরী মুহাম্মদ আলীকে চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন দেন গভর্নর। নিজ দলের সঙ্গে বিরোধ এবং স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সোচ্চার এ নেতা ১৯৫৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন। সেদিন দায়িত্ব নেন আওয়ামী লীগ নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তবে গভর্নর ইস্কান্দারের সঙ্গে বিরোধের জেরে ১৯৫৭ সালের ১৭ অক্টোবর পদত্যাগে বাধ্য হন সোহরাওয়ার্দী।
সেদিনই দায়িত্ব পান ইব্রাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগার। মাত্র দুই মাসের মধ্যে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। ১৯৫৭ সালে ফিরোজ খান নূনকে প্রধানমন্ত্রী পদে উন্নীত করেন ইস্কান্দার। ১৯৫৮ সালে নূনকে পদ থেকে সরিয়ে দেন জেনারেল আইয়ুব খান। ১৩ বছরের সামরিক শাসনের পর স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খান সরকারের প্রধানমন্ত্রী হন নুরুল আমিন। মাত্র ১৩ দিন পর ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর তাকে হটিয়ে দেয় প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জুলফিকার আলী ভুট্টো। ১৯৭৩ সালে সংবিধান পাসের পর তিনি প্রেসিডেন্টের পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী হন।
১৯৭৭ সালে নির্বাচনে জয় পান ভুট্টো। একই বছর জেনারেল জিয়াউল হকের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন ভুট্টো। ১৯৮৫ সালের ২৩ মার্চ সামরিক শাসনের অধীন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন মুহাম্মদ খান জুনেজো। ১৯৮৮ সালে বিমান বিধ্বস্তে মারা যান জিয়া। ওই বছরের ২৮ মে জুনেজোর সরকার ভেঙে যায়। এরপরই দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টো। তিন বছরের মাথায় তার সরকারকে হটিয়ে দেন প্রেসিডেন্ট গুলাম ইসহাক খান। দুর্নীতি উচ্ছেদ ও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ শরিফ। সামরিক বাহিনীর চাপের মুখে ১৯৯৩ সালে ইস্তফা দিতে হয় তাকেও। ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে বেনজির ভুট্টো জয়ী হতে পারেননি। তবে তার দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় আবারও দেশ শাসনের সুযোগ পান তিনি।
১৯৯৬ সালে বেনজির ভুট্টোকে আবারও ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়। ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে নওয়াজের দল জয়ী হয়। এর দুই বছরের মধ্যে ১৯৯৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।
মোশাররফের শাসনামলে পাকিস্তানে তিনজন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করেন। মীর জাফরুল্লাহ খান জামালি মাত্র ১৯ মাস দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। চৌধুরী সুজাত দুই মাসের বেশি টিকতে পারেননি। এরপর প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শওকত আজিজ। তিনি ২০০৪ সালের ২৮ আগস্ট থেকে ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী, যিনি পাকিস্তানের সংসদীয় সময়কাল পূর্ণ করেছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন ইউসুফ রাজা গিলানি। ২০১২ সালে আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে বিদায় নেন তিনি। ক্ষমতার বাকি মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন রাজা পারভেজ আশরাফ। ২০১৩ সালে ফের প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ। আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকায় ক্ষমতাচ্যুত হন তিনি। মেয়াদের বাকি সময় দায়িত্ব পালন শহীদ খোকন আব্বাসী।
২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসেন ইমরান খান। পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাবের মুখে পড়েছেন তিনি। এরই মধ্যে মিত্ররা বিরোধীদের সঙ্গে হাত মেলানোয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাচ্ছেন তিনি। তবে এটিকে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ উল্লেখ করে তা প্রতিহত করতে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এতে সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে ইসলামাবাদ। তবে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
Posted ৩:০০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০২ এপ্রিল ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta