কক্সবাংলা সম্পাদকীয়(৪ নভেম্বর) :: দেশের বাজারে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ টাকা কার্যকর হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে। তবে অকটেনের দাম ৮৯ টাকা ও পেট্রলের দাম আগের মতোই প্রতি লিটার ৮৬ টাকা থাকছে। দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকার বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান।
বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে পাশের দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে। গত ১ নভেম্বর ভারতে ডিজেলের বাজারমূল্য প্রতি লিটার ১০১.৫৬ রুপি বা ১২৪ টাকা ৪১ পয়সা ছিল, অথচ বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য গতকাল পর্যন্ত প্রতি লিটার ৬৫ টাকা ছিল, অর্থাৎ ভারতের তুলনায় লিটারপ্রতি ৫৯ টাকা ৪১ পয়সা কমে বিক্রি হচ্ছিল।
দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান ক্রয়মূল্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ডিজেল লিটারপ্রতি ১৩.০১ এবং ফার্নেস অয়েল লিটারপ্রতি ৬.২১ টাকা কমে বিক্রি করায় প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছে। চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন বিভিন্ন গ্রেডের পেট্রোলিয়াম পণ্য বর্তমান মূল্যে সরবরাহ করায় সংস্থার মোট ৭২৬.৭১ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়েছিল। সেই সময় ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা, কেরোসিনের দাম ৬৫ টাকা, অকটেনের দাম ৮৯ টাকা ও পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর আগে ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের সময় বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছিল। তখন প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা এবং পেট্রল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে, তেলের এই দাম ঊর্ধ্বমুখীও থাকবে না। সরকারের উচিত হয়নি এর মধ্যে দাম বাড়ানোর। কারণ দেশের পরিবহনের বড় অংশই চলে ডিজেলে। পরিবহন খরচ এখন বাড়বে, এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে। দেশে ট্রাক, বাসসহ পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে ডিজেল ব্যবহার করা হয়। এর দাম বাড়ায় পরিবহনভাড়া বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ট্রাকভাড়া বাড়লে সব পণ্যের পরিবহন খরচ বাড়বে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। এ কারণে প্রতিবেশী দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে জ্বালানি তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয় করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক কমে গেলেও দেশে তা কমানো হয় না। এতে করে প্রতিষ্ঠান হিসেবে হয়তো বিপি লাভবান হতে পারে, কিন্তু তা দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
করোনা মহামারী মোকাবিলায় লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন দেশের গণপরিবহন বন্ধ ছিল। পরিবহন মালিকরা লোকসান গুনেছেন। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছিল। এই মুহূর্তে পরিবহনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে অস্থিরতা দেখা দেবে। ইতিমধ্যে গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন এই খাতের মালিক-শ্রমিকরা।
তারা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিদ্যমান ভাড়ায় চালিয়ে পোষাতে পারছেন না। পরিবহন সূত্রগুলো বলছে, জ্বালানি তেলের নতুন মূল্যহার কার্যকর হওয়ার পর পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠক থেকেই ভাড়া বৃদ্ধি না করার ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি হলে গণপরিবহনের ভাড়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা মনে করি, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি না হলে লাভবান হবে দেশের অর্থনীতি ও জনগণ। কেননা শিল্পের উৎপাদন খরচ কমলে বাজারে তার প্রভাব পড়বে, জীবনযাত্রার ব্যয়ও হ্রাস পাবে। অপরদিকে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে শিল্পের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি হবে; এর প্রভাব বাজারে পড়বে এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। যাতে জনসাধারণের মধ্যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতাও দেখা দিতে পারে।
Posted ১১:২৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ নভেম্বর ২০২১
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta