কক্সবাংলা রিপোর্ট(৩০ জুলাই) :: কক্সবাজার সদর হাসপাতালে বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। একদিনের ব্যবধানে কক্সবাজার সরকারি সদর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে।
জানা গেছে,কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ও প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত ২৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১জন নারী কক্সবাজার থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্রগ্রাম নেয়ার পথে মারা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার বেলা দুইটায় কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদে একইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী কক্সবাজারের মেয়ে উখিনো নুশাং শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরপর ২৮ জুলাই ডেঙ্গু মনিটিরিং টিম গঠন করা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শহরের ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ১১ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এর মধ্যে হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে ৯ জন ও নারী ওয়ার্ডে ২ জন ভর্তি হয়েছেন। সরকারি হাসপাতালটিতে এখনও পর্যন্ত কেউ মারা যায়নি। আর ডেঙ্গু আতঙ্কে বিকেল ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত রোগীরা মশারি ব্যবহার করছে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) নোবেল কুমার বড়ুয়া জানান, গত ২০ দিনে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৫জন চিকিৎসা নিয়েছে। তবে কেউ গুরুতর রোগী ছিল না।বেশিরভাগই একদিন কিংবা দুইদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে চলে গেছে।বর্তমানে ১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন।
তিনি আরও বলেন,হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের কিভাবে চিকিৎসা দেয়া হবে এবং তাদের করণীয় কি এসব বিষয়ে ডাক্তার ও নার্সদের ট্রেনিং দেয়া হয়েছে।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, কক্সবাজারে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কম।তবে সদর হাসপাতালে মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্ত ১১ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন হচ্ছেন কক্সবাজারে বসবাসকারী। একজন উখিয়া থেকে আরেকজন রামু থেকে এসেছেন। এই প্রথম কক্সবাজারে বসবাসকারী দুইজন ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেল। এতে বুঝা যাচ্ছে ডেঙ্গু জীবাণু কক্সবাজারেও আস্তে আস্তে বিস্তার শুরু করেছে।
তিনি বলেন, কক্সবাজার এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তে মৃত্যুর খবর পাইনি। তাছাড়া ডেঙ্গু নয় যেকোন মশার কামড় থেকে বাঁচতে হাসপাতালের জানালায় নেট ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও ডেঙ্গু আতঙ্কে সকল রোগীদের মশারি দেয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. আবদুল মতিন জানান,সদর হাসপাতালে ১১ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী এসেছে। তাছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কোন রোগী নেই। যারাও আক্রান্ত হয়েছে তাঁরা কক্সবাজারে বসবাস করে ঠিকই কিন্তু তারা সবাই ঢাকায় চাকরি করে কিংবা বেড়াতে গিয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। কক্সবাজারে ডেঙ্গুর প্রবণতা নেই।
তিনি আরও বলেন, মশক নিধন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ-২০১৯ এর কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়াও স্বাস্থ্য বিভাগের যেসকল কর্মীরা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেয় এমন কর্মীরা মানুষদের সচেতন করতে ডেঙ্গু বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, ৩০ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে ১৪ জন মারা গেছে। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ঢাকায় বসবাসকারীরা। শুধু ঢাকা নয় বিভিন্ন জেলায় এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী প্রতি ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১৪শ থেকে ১৬শ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এমনকি হবিগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। মারা যায় আরো দুইজন ডাক্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও মারা যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপসচিবের স্ত্রী মারা গেছে।