কক্সবাংলা রিপোর্ট(২২ নভেম্বর) :: কক্সবাজারের মহেশখালীতে প্রস্তাবিত ১৭টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বছরে প্রায় ৭২ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গত হবে। কয়েক হাজার টন কয়লা-জাত ছাই, বিষাক্ত পারদ, নাইট্রোজেন অপাইড ও সালফার ডাই অপাইড নির্গতের পাশাপাশি অন্যান্য ধাতব ও রাসায়নিক দূষণও ঘটবে। এর ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হবে। দেশের প্রধান পর্যটন অঞ্চল কক্সবাজারের অস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে পড়বে।
মহেশখালীতে ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য খরচ পড়বে ১৫ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প হবে। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৩টি স্থাপন করা হবে বন্যাপ্রধান এলাকা মহেশখালীতে। চিংড়ি, পান ও লবণ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ওই এলাকা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকার ওপর প্রায় ১২ লাখ ৩৫ হাজার মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল। দেশে উৎপাদিত লবণের ৭০ শতাংশ আসে এই এলাকা থেকে। আর এখানে বছরে ৪ হাজার ৮৬৫ কোটি টাকার মিষ্টি পান হয়। কক্সবাজারের হাজার কোটি টাকার পর্যটন শিল্পসহ সবকিছু ধ্বংসের দিকে চলে যাবে।
২২ নভেম্বর শুক্রবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ওয়াটার্স কিপারস বাংলাদেশের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এসব আশঙ্কা করে বলেন সরকার কক্সবাজারের মহেশখালীতে ১৭টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প করতে যাচ্ছে। এগুলো হলে কক্সবাজার জুড়ে বড় ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয় নেমে আসবে। এখান থেকে যে দূষিত পদার্থ বের হবে, তা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
বক্তারা আরও বলেন, কক্সবাজারে ১৭টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প হলে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুচ্ছ প্রকল্প। একই সঙ্গে তা হবে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্প দেশের অর্থনীতিকে আরও চাপে ফেলবে। এ ধরনের প্রকল্প থেকে সরে আসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।
বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল বলেন, ধনী দেশগুলোর দূষণের কারণে যে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, বাংলাদেশ তার ভুক্তভোগী হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু যেভাবে সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে শুরু করে কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুচ্ছ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ দ্রুত দূষণকারী দেশের তালিকায় নাম লেখাবে। এ ধরনের আচরণ সংবিধানে পরিবেশ সুরক্ষার যে অঙ্গীকার রয়েছে, তার লঙ্ঘন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান পরিবেশ-প্রকৃতি ধ্বংস হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘এসব কথা দীর্ঘদিন ধরে আমরা বলে আসছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, আমরা দেয়ালের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা বলে যাচ্ছি, গণমাধ্যম লিখে যাচ্ছে। কিন্তু সরকার আমাদের কথায় কান দিচ্ছে না।’
সংবাদ সম্মেলনে ‘বিশ্বের বৃহত্তম গুচ্ছ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার বিপন্ন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।
তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলা শহর ও সমুদ্রসৈকতের ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৭টি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলো নির্মিত হলে সেখান থেকে ৭ কোটি ২০ লাখ টন কার্বন ডাই–অক্সাইড, কয়েক হাজার টন ছাই ও ৫ হাজার ৮০২ কেজি পারদ নির্গত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাপার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শারমিন মুর্শিদ বলেন, ‘আমরা যে কয়লা ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলছি, তার দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল হবে মারাত্মক। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্যারিস চুক্তিসহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় বাংলাদেশ যে স্বাক্ষর করেছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না।’
বাপার সহ সভাপতি ডা. আবদুল মতিনের সঞ্চালনায় বাপার কক্সবাজার শাখার সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারের স্থানীয় মানুষের আয়-রোজগার প্রায় বন্ধ। দিনমজুর কৃষক ও মৎস্যজীবীদের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। জমি অধিগ্রহণের টাকাও ঘুষ ছাড়া মিলছে না।
বাপার মহেশখালী শাখার সদস্য সচিব আবু বকর সিদ্দিক বলেন, যে উন্নয়নে সুফলের চেয়ে কুফল বেশি সে উন্নয়ন আমরা চাই না।