বুধবার ২৭শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ২৭শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

রামুর জাংছড়ি মহালে চলছে বালু বাণিজ্য : সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

রবিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২০
629 ভিউ
রামুর জাংছড়ি মহালে চলছে বালু বাণিজ্য : সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব

বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজারের রামু উপজেলার জাংছড়ি বালু মহালে অবৈধভাবে চলছে লাখ লাখ টাকার বালু বাণিজ্য। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে তোয়াক্কা না করে স্থানীয় কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে চলছে বালু বেচাকেনা। গত ৩ মাসে জাংছড়ি মহাল থেকে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ২ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ এর বিপরীতে সরকার কোন রাজস্ব পায়নি।

স্থানীয় লোকজন বলছেন, দিন রাত সমানে এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এলাকা বিলীন হতে পারে। তখন ফসলি জমি, বসতভিটা হুমকিতে পড়বে। এখন প্রতিদিন অন্তত ১০০টি ডাম্পারে বালু বিক্রি হচ্ছে। জাংছড়ির কয়েকটি স্থানে মজুদ আছে ৫০ হাজার ঘনফুট বালু।প্রতি ডাম্পার বালু বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকায়। নানা অবকাঠামো নির্মাণ কাজে এই বালু ব্যবহার হচ্ছে।

দুই বছর আগে জাংছড়ি বালু মহালটি ইজারা পান স্থানীয় ব্যবসায়ী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। ইজারার বিপরীতে তিনি সরকারকে বছরে রাজস্ব দিতেন ৩ লাখ টাকার বেশি।কিন্তু ইজারাদারকে বালু মহালের দখলস্বত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। তাই এর প্রতিকার চেয়ে তিনি উচ্চ আদালত রীট মামলা করেন। উচ্চ আদালত ওই মহাল থেকে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারী করেন। কিন্তু স্থানীয় কচ্ছপিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবু ইসমাইল মো. নোমানের নেতৃত্বে প্রভাবশালী মহল আদালতের নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে দৈনিক অন্তত ১০০ ট্রাক বালু উত্তোলণ করে বেচাবিক্রি করে চলেছেন।

শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, জাংছড়ি খালের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন হচ্ছে। সেই বালু মজুদ হচ্ছে পাশের বিভিন্ন এলাকায়। সেখান থেকে ট্রাক বোঝাই করে সেই বালু কক্সবাজার শহর, ঈদগাঁহ, রামু, চকরিয়া উপজেলায় সরবরাহ হচ্ছে।

কচ্ছপিয়া এলাকার বাসিন্দা সাকের আহমদ বলেন, দিন রাত সমানে বালু উত্তোলন করছে শ্রমিকেরা। কেউ বাঁধা দিচ্ছেনা। মাঝে মধ্যে ভুমি অফিসের লোকজন এসে কিছু বালু জব্দ দেখিয়ে চলে যান। রাত দিন ট্রাকে বালু পরিবহণ করায় এলাকায় রাস্তাঘাট ও খালের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলের তোড়ে অসংখ্য ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি বিলীন হতে পারে। এনিয়ে এলাকার স্থানীয় দরিদ্র মানুষজনেরা চিন্তিত।

কচ্ছপিয়ার একটি পয়েন্টে মেশিন দিয়ে বালু তুলছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। তাদের একজন নজরুল ইসলাম বলেন, তারা দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে বালু উত্তোলনের কাজ চালাচ্ছেন। বালু তুলছেন ইউপি চেয়ারম্যান। গত ৩ মাসে খালের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে প্রায় ২ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন হয়েছে। এখনো কয়েকটি পয়েন্টে মজুদ আছে প্রায় ৫০ হাজার ঘনফুট বালু।

স্থানীয়রা বলেন, প্রতি ঘনফুট বালু বিক্রি হয় ২৫ টাকা দরে। সে হিসাবে ২ লাখ ঘণফুট বালুর দাম আসে ৫০ লাখ টাকা। অথচ এর বিপরীতে সরকার কোনো রাজস্ব পায়নি। স্থানীয় প্রভাবশালী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কতিপয় অসাদু কর্মচারীরা মিলেমিশে বালু বাণিজ্যের টাকার লুটপুটে খাচ্ছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর । মধ্যখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার অসহায় গরীব শ্রেণির মানুষ।

আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু উত্তোলণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু ইসমাইল মো. নোমান বলেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা যেখানে আছে, আমরা সেখান থেকে বালু উত্তোলন করছিনা। যেখানে নিষেধাজ্ঞা নেই, সেখান থেকে বালু তুলছি। তাও এলাকার স্বার্থে। চেয়ারম্যান নোমান আরও বলেন, বর্তমানে তাঁর ইউনিয়নে বিভিন্ন রাস্তাঘাটসহ নানা উন্নয়ন কাজ চলছে। এর জন্য বালুর দরকার হচ্ছে। তাই জাংছড়ি খাল থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এর বিপরীতে সরকারকে দফায় দফায় ২০-৩০ হাজার টাকা করে রাজস্ব দিতে হচ্ছে। আর বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশেরও তেমন ক্ষতি হচ্ছেনা।

তবে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে জাংছড়ি মহাল থেকে বালু উত্তোলনের জন্য কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপরও এলাকার কতিপয় ব্যক্তি উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বালু উত্তোলন করে চলেছেন। ইতিমধ্যে তিনি কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনের একাধিক মেশিনসহ বিপুল পরিমান বালু জব্দ করেছেন। পরে সেই বালু নিলামে বিক্রি করে টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করেছেন। কিন্তু এলাকাটি অতিদুর্গম হওয়ায় ঠিকমত দেখভাল করা সম্ভব হচ্ছেনা। বালু উত্তোলনও বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। বালু উত্তোলনের খবর কানে এনে তখন অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিতে নিতে ওই দিকে উত্তোলিত বালু ট্রাকে পাচার হয়ে যায়। তখন আর করার কিছু থাকেনা। বালু উত্তোলন বন্ধ করার বিষয়ে প্রশাসন আরও কঠোর হবে।

দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জাংছড়ি বালু মহালের ইজারা নিচ্ছেন গর্জনিয়ার ব্যবসায়ী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। ইজারার বিপরীতে তিনি সরকারকে প্রতি বছর ৩ লাখ টাকা করে রাজস্ব দিয়ে আসছেন।

শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, অন্যান্য বছরের ন্যায় বাংলা ১৪২৫ সালেও জাংছড়ি বালু মহালের ইজারা পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু জেলা প্রশাসন তাকে সেই মহালের জায়গা বুঝিয়ে দিতে পারেননি। এলাকায় কতিপয় প্রভাবশালী তখনও মহাল থেকে বালু উত্তোলন করে চলেছেন। মহালের দখলস্বত্ব বুঝিয়ে দিতে তিনি হাইকোর্টে রীট মামলা করেন। হাইকোর্ট ২০১৯ সালের ১ অক্টোবর পযর্ন্ত (এক বছরের জন্য) বালু উত্তোলন স্থগিত রাখার আদেশ দেন। গত ১ অক্টোবর ওই এক বছরের মেয়াদ শেষ হলে হাইকোর্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। ১১ আগস্ট জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যে সকল মামলায় নির্দিষ্ঠ সময়ের জন্য অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, স্থিতাবস্থা, স্থগিতাদেশ প্রদান করা হয়েছে-সে সকল মামলার আদেশের কাযর্কারিতা উচ্চ আদালত পূর্নাঙ্গরূপে খোলার তারিখ পযর্ন্ত বর্ধিত হয়েছে মর্মে গণ্য করা হবে। আদেশটি বাস্তবায়নের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। অথচ এখনও বালু উত্তোলন বন্ধ হয়নি। শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাকে বালু মহালের দখল স্বত্বও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

629 ভিউ

Posted ১১:০৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com