আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ :: লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে আজ সোমবার বিকালে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রতিমাগুলো বিসর্জন দেওয়া হয়। এতে কোথাও কোন ধরনের বিশংখলা বা গোলযোগ দেখা দেয়নি। প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্টানে যারা উপস্থিত ছিলেন-তাদের বেশির বেশিরভাগের মুখে মাস্ক পরা ছিল। আগের মত এবার প্রতিমাগুলো একসঙ্গে সমুদ্রে বিসর্জন দেওয়া হয়নি। এবার বিসর্জন দেওয়া হয়েছে একটার পর একটা করে।
সনাতন ধর্মের নেতারা বলেন, গত বছর লাবনী পয়েন্টের বিজয়া মঞ্চে প্রতিমা বিসর্জন উৎসবে যোগ দিয়েছিল আড়াই লাখ মানুষ। এরমধ্যে দেশিবিদেশি পর্যটকও ছিল চোখে পড়ার মত। কিন্তু করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে লোকসমাগম সীমিত করার উদ্যোগ নেয় জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে, এবার জেলার আটটি উপজেলার ২৯৯ টি পূজামন্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে।এরমধ্যে চকরিয়া উপজেলায় ৮৮টি, কক্সবাজার সদরে ৭৪টি, রামুতে ৩০টি, মহেশখালীতে ৩১টি, কুতুবদিয়ায় ৪২টি, উখিয়ায় ১৪টি, পেকুয়ায় ১৩টি, টেকনাফে ৬টি এবং উখিয়ার পশ্চিম কুতুপালং হিন্দু শরণার্থী শিবিরে একটি।
করোনা সংক্রমণরোধে এবার শুধুমাত্র কক্সবাজার সদর, কক্সবাজার পৌরসভা, রামু ও উখিয়া উপজেলার শতাধিক মন্ডপের প্রায় ৩০০ প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সৈকতের লাবনী পয়েন্টে আনা হয়। চকরিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া উপজেলার প্রতিমাসমূহ সেখানকার নদী, পুকুর ও দিঘিতে বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। সেখানেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হয়।
বিকাল তিনটার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার বিভিন্ন মন্ডপ থেকে ট্রাকযোগে প্রতিমাগুলো সৈকতের লাবনী পয়েন্টে আনা হয়। এরপর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী ও ভক্তরা মিলে প্রতিমাগুলো সাগরের কাছাকাছি নিয়ে যান। তারপর পূজোর কর্ম শেষ করে ভক্তরা মা দুর্গা প্রতিমাকে বিসর্জন দেন বঙ্গোপসাগরে। সন্ধ্যা পর্যন্ত এভাবে চলে প্রতিমা বিসর্জন।
গত বছর সৈকতের লাবনী পয়েন্টে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে তৈরি হয় বিশাল বিজয়ামঞ্চ। সেখানে অনুষ্টিত হয় মুক্ত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টান। বিকাল পাঁচটায় মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে একে একে ৫০০ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় সাগরে। তখন সময় লেগেছিল মাত্র ২০-২৫ মিনিট। করোনা সংক্রমণরোধে এবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিমাগুলো বিসর্জন দেওয়া হয়েছে।
বিকালে লাবনী পয়েন্টের অনুষ্টিত হয় সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভা। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সভাপতি অ্যাডভোকেট রনজিত দাশের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মার সঞ্চালনায় অনুষ্টিত এসভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, কক্সবাজার-৩ ( সদর-রামু) আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা সন্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উজ্জল কর প্রমুখ। করোনা সংক্রমণরোধে সীমিত আকারে শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তারা। তারা যেকোনো মূল্যে কক্সবাজারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধরে রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
নানা প্রতিকুলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এবারও প্রকাশিত হয়েছে শারদীয় দুর্গোসব ২০২০ সালের ‘প্রতিমা’র ১৭তম সংখ্যা। প্রতিমার সম্পাদক চঞ্চল দাশগুপ্ত অতীতের মত এবারও প্রতিমা প্রকাশের মাধ্যমে কঠিন চ্যালেঞ্জের দায়িত্বটি সম্পন্ন করেছেন। দেশের বিশিষ্টজনদের গুরুত্বপূর্ন লেখায় সাজিয়েছে প্রতিমার প্রতিটা পৃষ্টা। যা সনাতন ধর্মাবম্বীদের কাছে ইতিহাস হয়ে থাকবে।
Posted ৬:৪৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta