কক্সবাংলা ডটকম(২৪ জুলাই) :: সাত দিন ধরে ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক থেকে ছিটকে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর। এই বন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
এ সময়ের মধ্যে কোনো ধরনের কাজ হয়নি দেশের বৃহত্তর এই শুল্ক স্টেশনে। এতে গত সাত দিনে চট্টগ্রাম বন্দর ও শুল্ক কর্তৃপক্ষ অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করতে পারেনি।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস প্রতিদিন ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করে। বন্দর কর্তৃপক্ষ অন্তত ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করে।
চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের গড়ে প্রতিদিন ৫০০ কোটি টাকা করে ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে গত ৭ দিনে (১৬ জুলাই থেকে ২২ জুলাই) অন্তত সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরীণ কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু কনটেইনার সরবরাহ হচ্ছে না। স্বল্প পরিসরে পচনশীল পণ্য চালান ম্যানুয়ালি সরবরাহ করছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
এ ছাড়া কিছু রপ্তানি পণ্যের ম্যানুয়ালি ডেলিভারি দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বিদেশি বায়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে না পারায় এই উদ্যোগ কাজে আসছে না।
এদিকে কনটেইনার সরবরাহের তথ্য বন্দরের সার্ভারে হালনাগাদ করতে না পারায় ম্যানুয়াল উদ্যোগও কাজে আসছে না।
জানা গেছে, দেশের জাতীয় রাজস্ব আয়ের ৯২ শতাংশ আমদানি-রপ্তানির কাজ হয় চট্টগ্রাম বন্দর কাস্টম দিয়ে। তাই এই স্টেশনের কাজ না হওয়ার অর্থ হলো জাতীয় অর্থনীতিতে এর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়া।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের চলমান সংকটের কারণে তৈরি পোশাক থেকে শুরু করে কোনো পণ্য এই বন্দরে জাহাজীকরণ হচ্ছে না। একই সঙ্গে শিল্প-কলকারখানার জন্য আমদানি করা কাঁচামালও সরবরাহ করা হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম বন্দরসচিব ওমর ফারুক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। বন্দরের অভ্যন্তরীণ কাজ চলছে কিন্তু কনটেইনার ডেলিভারি হচ্ছে না। সার্ভার সচল না থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না। তিনি এও বলেন, আজকে যে রাজস্ব আহরণ হচ্ছে না, তা হয়তো অন্য স্বাভাবিক দিনে পাওয়া যাবে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর কাজ চলমান রয়েছে। এতে বন্দরের ইয়ার্ডে বেড়ে যাচ্ছে কনটেইনারের সংখ্যা। বন্দরে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়। এতে ইয়ার্ডের জায়গা সংকুচিত হচ্ছে প্রতিদিন। চট্টগ্রাম বন্দরে ৫২ হাজার ৫০০টি কনটেইনার রাখা সম্ভব। সেখানে গতকাল পর্যন্ত ৪৫ হাজার কনটেইনার জমা পড়ে।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইসহাক ডিপোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুহুল আমিন সিকদার বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে চট্টগ্রাম বন্দর ও ডিপোতে কনটেইনার রাখার জায়গা থাকবে না।
চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এ কে এম আকতার হোসেন বলেন, বন্দর কাস্টমসের কর্মকর্তা, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের কোনো কাজ হচ্ছে না। আমদানি-রপ্তানি স্থবির হয়ে পড়েছে।
বন্দরের সার্ভারে ও কাস্টম হাউসের সার্ভারের পণ্য চালানের তথ্য পোস্টিং দেওয়া যাচ্ছে না। এতে সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার জন্য ইন্টারনেট সংযোগ জরুরি।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খায়রুল আলম সুজন বলেন, দেশে বন্দর-কাস্টমকেন্দ্রিক কোনো ধরনের কাজ হচ্ছে না। এতে বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
চট্টগ্রাম কাস্টম এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম ম্যান্যুয়ালি কাগজপত্র দেখে কনটেইনার ডেলিভারি দেওয়ার জন্য।
বিশেষ করে পচনশীল পণ্য ম্যানুয়ালি ডেলিভারি দিতে তিনিও সম্মত হয়েছেন। কিন্তু বন্দরে ম্যানুয়ালি তা করা যাচ্ছে না। বন্দরের সার্ভারের পোস্টিং দেওয়া লাগছে। আমাদের দাবি, দেশের পোশাকশিল্পসহ কারখানা চালু রাখতে বিকল্প হিসেবে ম্যানুয়াল পদ্ধতিও চালু রাখতে হবে।’
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গিয়ে দেখা যায়, সুনসান নীরবতা। দুয়েকজন কর্মকর্তা নিয়ে অফিস করছেন কমিশনার ফাইজুর রহমান।
তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে আমদানিকারকরা পণ্য পরিবহনে ভয় পাচ্ছেন। আবার সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা কাস্টম হাউসে আসতে পারছেন না। ব্যাংকের শাখাও খোলা নেই । সব মিলিয়ে এক সংকট সময় পার করতে হচ্ছে আমাদের। এ সমস্যা থেকে যত দ্রুত উত্তরণ করা যায় তত ভালো।’
তিনি বলেন, ‘ম্যানুয়ালি চারটি জাহাজের আইজিএম দিয়েছি। জাহাজ থেকে পণ্য চালান বন্দরের ইয়ার্ডে নামানো হচ্ছে। ম্যানুয়ালি কিছু রপ্তানি কনটেইনার ছাড় দেওয়া হয়েছে। কারণ সেগুলো আগে থেকে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ে কড়াকড়ির মধ্যেও শুল্ক ফাঁকি, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য চালান খালাসের চেষ্টা করা হয়। সেখানে ম্যানুয়ালি পণ্য চালান খালাস করা হলে অনিয়ম বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা কিছু শিল্প-কারখানার পণ্য ম্যানুয়ালি খালাস দিচ্ছি।’
Posted ১০:৫৫ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta