কক্সবাংলা ডটকম(১৬ জুন) :: ১৯৯০ সালের এপ্রিলে টুইন পিকসের শুরুর পর্বে যখন পামারের মরদের উদ্ধার হলো, তখন তার চেহারা টেলিভিশনের পর্দায় একেবারে নতুন। এই এক পামারই পুরো সিরিজে আকর্ষণ হয়ে থাকে। পেরি ম্যাসন, মার্ডার শি রোট বা কলাম্বোর মতো ক্রাইম ড্রামা সিরিজগুলোও একটি মৃত চরিত্র ঘিরে আবর্তিত হয়েছে, কিন্তু সেগুলো ছিল কেবল ৬০ মিনিটের প্যাকেজ।
এগুলো হত্যাকাণ্ডের শিকারকে দেখানো হয়েছে শুধু সিনেমার মূল গল্প এগিয়ে নিতে, মূল চরিত্রকে আরো সক্ষম করে তুলতে। একবার হত্যারহস্য উন্মোচিত হয়ে যাওয়ার পর সেই মৃত চরিত্র দর্শকদের আর মনে থাকে না। কিন্তু লরা পামার আজো দর্শকদের স্মৃতিতাড়িত করে।
লরা পামার খুনের তদন্ত করেন স্পেশাল এজেন্ট ডেল কুপার। তদন্ত শুরুর সময়ও আমরা লরা সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। শুধু এটুকই জানা ছিল যে, লরা সেবামূলক সংস্থা মিল অন হুইলসের একজন স্বেচ্ছাসেবক, পরিবারের অত্যন্ত প্রিয় ছিল সে। তবে টুইন পিকসের জাদু এসব জানা তথ্যে নেই, বরং যা জানা যায় না তা জানার যে আকুতি তৈরি করে, সেটাই এ সিরিজের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ।
কুপারের মাধ্যমে আমরা জানাতে পারি লরার কোকেনের নেশা, তার যৌনতা, নিজের সামাজিক চলাচলের বাইরে ভিন্ন একজনের সঙ্গে সম্পর্ক, যৌন নিগ্রহের শিকার হওয়া এবং তার বাবার অতিপ্রাকৃত শক্তি নিয়ে চর্চা, যা তাকে মেয়ে হত্যায় প্রলুব্ধ করে।
ডায়েরি, ফ্লাশব্যাক, স্মৃতিচারণ, স্বপ্ন দেখে দেখে আমরা বুঝতে পারি নিজের জীবনের ওপর লরার তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আমরা লরাকে দেখি প্লাস্টিকের মরদেহ হিসেবে, যাকে পচে গলে যাওয়ার জন্য ফেলে রাখা হয়েছে। লরার জীবনকে তাই দর্শক সেভাবেই দেখেন, যেভাবে তদন্ত কর্মকর্তারা দেখান। আমরা লরাকে দেখে লরাকে জানতে পারি না। বরং লরার রেখে যাওয়া টুকরো টুকরো স্মৃতি গেঁথে গেঁথে আমাদের লরাকে চিনতে হয়। এভাবে টিভি সিরিজের একটা নতুন শাখার জন্ম হয়।
মৃত তরুণী এবার পপকালচারের মুদ্রা হয়ে উঠল। তবে টুইন পিকসের উত্তরসূরিরা কেউই তার মতো গল্পের জাদু দেখাতে পারেনি। সিএসআই এবং ’ল অ্যান্ড অর্ডারের মতো সিরিজগুলো অপরাধের শিকার নারীর জীবনের চেয়ে অপরাধের বয়ান নিয়েই বেশি মনোযোগী। ক্রিমিনাল মাইন্ডসও অপরাধকে দেখাতে গিয়ে পেছনের গল্প বাদ রেখেছে।
২০০৭ সালে ড্যানিশ ডিটেক্টিভ সিরিজ দ্য কিলিংয়ে ভিক্টিমের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। টুইন পিকসের সূত্র তারা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে। ভেরোনিকা মারস সিরিজটিও টুইন পিকসের সূত্র কাজে লাগাতে পেরেছে। ধর্ষণ থেকে বর্ণবাদ— সব ধরনের সমস্যাই এ ধারাবাহিকে দেখা গেছে। দ্য কিলিং সিরিজে আমেরিকান গোয়েন্দারা খুঁজেছেন ‘রোজি লারসনকে কে খুন করল?’ লরার মতো রোজির মরদেহও পাওয়া যায় আবর্জনার ব্যাগে। শুরুতে ধারণা করা হয় তার জীবন ছিল একেবারে সরল সাধারণ। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তারা ধীরে ধীরে রোজির জীবনের নানা রহস্য উন্মোচন করেন, ঠিক যেভাবে লরার রহস্য উন্মোচিত হয়েছিল।
মৃত তরুণীদের টুইন পিকসে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, সে রকমভাবে করতে গিয়ে আবার অনেকে পুরুষের গল্প তুলে ধরেছে। যেমন ভেরোনিকা মারস।
২০১০ সালে চালু হয়েছিল প্রিটি লিটল লায়ারস সিরিজটি। একটি বই অবলম্বন করে তৈরি সিরিজে একজন তরুণীর গায়েব হওয়া নিয়ে গল্প এগিয়েছে।
টুইন পিকস নিয়ে দর্শকদের আগ্রহ ছিল, কারণ এটা ভিন্ন রকম, এটা মানুষকে চমকে দিয়েছে, তরুণদের নিজস্ব জগত্ তৈরি করেছে। এ ধরনের সিরিজে খুন হওয়া মানুষের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ না গড়ে উঠলে সিরিজটি সফল হতে পারে না। টুইন পিকসে লরা পামার তার প্রতি দর্শকদের আকর্ষণ, মনোযোগ দুই-ই টানতে পেরেছিল। ভিক্টিমের যে গল্প থাকে, সেটা লরা পামারই শিখিয়েছে। তাই লরা আর টুইন পিকসকে ধন্যবাদ।
সূত্র: এসকয়ার ম্যাগাজিন
Posted ২:২৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৬ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta