কক্সবাংলা ডটকম(১৭ জুন) :: প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা— সব স্তরেই শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ছে। প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ প্রায় শতভাগে পৌঁছেছে। যদিও মাদ্রাসা শিক্ষায় দাখিল পর্যায়ে (মাধ্যমিক সমমান) শিক্ষার্থী সংখ্যা কমছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৭-এর তথ্য বলছে, মাদ্রাসা শিক্ষার এ স্তরে গত সাত বছরে শিক্ষার্থী কমেছে প্রায় দুই লাখ।
শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত সংখ্যক মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ না দেয়া ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার অভাবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী দাখিল শেষ না করেই ঝরে পড়ছে। ফলে কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থী সংখ্যা।
অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে মাদ্রাসা শিক্ষায় দাখিল পর্যায়ে শিক্ষার্থী ছিল ২৪ লাখ ৪৪ হাজার ৫৬৮ জন। ২০১৬ সালে এসে এ পর্যায়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ২২ লাখ ৫১ হাজার ১৯৩। এ হিসাবে গত সাত বছরে দাখিল পর্যায়ে শিক্ষার্থী কমেছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৫ জন।
জানতে চাইলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একেএম সাইফ উল্যাহ বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষায় সার্বিকভাবে অংশগ্রহণের হার সন্তোষজনক। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষক, পর্যাপ্ত অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারায় এসব শিক্ষার্থী ধরে রাখা যাচ্ছে না।
মাদ্রাসা শিক্ষায় মানসম্মত শিক্ষক সংকটের বিষয়টি উঠে এসেছে বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) প্রতিবেদনেও। বাংলাদেশ এডুকেশন স্ট্যাটিসটিকস-২০১৫-এর তথ্য বলছে, দেশে মাদ্রাসা শিক্ষায় পাঠদানরত শিক্ষক রয়েছেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৩৩ জন।
আর দাখিল পর্যায়ে শিক্ষকের সংখ্যা ৬৬ হাজার ৮০১। এর মধ্যে প্রশিক্ষিত শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ২৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। আলিম পর্যায়ে ২২ হাজার ৮৮৪ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২০ দশমিক ৭২ শতাংশ। এছাড়া ফাজিল পর্যায়ে ১৯ হাজার ৩৭৬ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রশিক্ষিত ১৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। কামিল পর্যায়ে শিক্ষক রয়েছেন ৪ হাজার ৯৭২ জন, যাদের মধ্যে প্রশিক্ষিত মাত্র ১৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ হিসাবে মাদ্রাসা শিক্ষায় পাঠদানরত শিক্ষকদের ৮০ শতাংশই অপ্রশিক্ষিত।
সংশ্লিষ্টদের মতে, যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষকের অভাবের প্রভাব পড়ছে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে। চলতি বছর খারাপ ফল করায় ৫০৮টি মাদ্রাসাকে কারণ দর্শাতে বলেছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদ্রাসার একজন অধ্যক্ষ বলেন, সাধারণ শিক্ষার মতো মাদ্রাসায়ও সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। অথচ বেশির ভাগ শিক্ষকই এ বিষয়ে কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ পাননি। প্রশিক্ষণ ছাড়াই নতুন একটি পদ্ধতিতে পাঠদান ও প্রশ্ন প্রণয়নের কাজ করতে হচ্ছে শিক্ষকদের। নতুন এ পদ্ধতি শিক্ষকরা না বুঝলে শিক্ষার্থীদের কীভাবে বোঝাবেন? সবমিলে মাদ্রাসা শিক্ষায় এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সুবিধা না থাকার কারণেও শিক্ষার্থীদের মানসম্মত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যমান এসব সমস্যার কারণে মাদ্রাসা শিক্ষায় ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি। ব্যানবেইসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মাদ্রাসার ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী দাখিল পর্যায় শেষ করার আগেই ঝরে পড়ছে। তবে আলিম (উচ্চ মাধ্যমিক) পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার তুলনামূলক কম। এ পর্যায়ের শিক্ষা শেষ না করেই মাদ্রাসা ছাড়ছে প্রায় ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী।
এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তার অগ্রগতি নেই। বিজ্ঞানশিক্ষায় বেশ পিছিয়ে মাদ্রাসা বোর্ডের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশের ৭৫ শতাংশ মাদ্রাসায় কোনো বিজ্ঞানাগার নেই। এতে বিজ্ঞান বিষয়ে ব্যবহারিক শিক্ষাগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকায় দাখিল পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানশিক্ষায় অংশগ্রহণের হার অনেক কম, মাত্র ১০ শতাংশ। এছাড়া ৪২ শতাংশ মাদ্রাসা এখনো মাল্টিমিডিয়া সুবিধার বাইরে। এখনো কম্পিউটার পৌঁছেনি ২৭ শতাংশ মাদ্রাসায়। ইন্টারনেট সুবিধা নেই ৪২ শতাংশ মাদ্রাসায়।
Posted ৮:৪৬ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৭ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta