শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দেশে উচ্চশিক্ষায় মান নিশ্চিত না করেই দ্রুত বাড়ছে প্রতিষ্ঠান

সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৭
922 ভিউ
দেশে উচ্চশিক্ষায় মান নিশ্চিত না করেই দ্রুত বাড়ছে প্রতিষ্ঠান

কক্সবাংলা ডটকম(৩০ অক্টোবর) :: গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃজন ও বিতরণ; সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্য সামনে রেখে গত কয়েক বছরে দেশে গড়ে উঠেছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও মানের বিষয়টি রয়েছে অলক্ষ্যেই।

দেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ে সম্প্রতি সিস্টেমস অ্যাপ্রোচ ফর বেটার এডুকেশন রেজাল্টস (এসএবিইআর) কান্ট্রি রিপোর্ট ২০১৭ প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। ছয়টি ক্ষেত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিবেদনটিতে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।

এগুলো হলো— উচ্চশিক্ষার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, সুস্পষ্ট নিয়ন্ত্রণ কাঠামো, আধুনিক পরিচালন ব্যবস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন, কার্যদক্ষতার উন্নয়নে অর্থায়ন, স্বাধীন মান নিয়ন্ত্রণ ও দেশের আর্থসামাজিক প্রয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা। এর প্রত্যেকটিই উচ্চশিক্ষার মানের ওপর প্রভাব ফেলে।

নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আন্তর্জাতিক মান অনুসরণের চেষ্টা করলেও অন্যান্য লক্ষ্যে পিছিয়ে আছে। যদিও কোনো লক্ষ্যেই সন্তোষজনক মানের কাছাকাছিও নেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজগুলো। তার পরও দ্রুত বাড়ছে এসব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যমতে, ২০১০ সালে দেশে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মিলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল ১ হাজার ৫৭২টি। ২০১৬ সাল শেষে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৫৪। অর্থাত্ ছয় বছরে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ২৪ শতাংশ।

এর বাইরে রয়েছে পলিটেকনিক এবং অন্যান্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যেগুলোয় চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা সনদ দেয়া হয়। ২০১৫ সালে এ ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল এক হাজারের বেশি। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে বেসরকারি উদ্যোগে।

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থান বিশ্লেষণে চারটি মানকে ভিত্তি ধরেছে বিশ্বব্যাংক। ল্যাটেন্ট, ইমার্জিং, এস্টাবলিশড ও অ্যাডভান্সডের মাধ্যমে এগুলোকে প্রকাশ করা হয়েছে। যেসব লক্ষ্য সামান্য গুরুত্ব পায় তাকে ল্যাটেন্ট, কিছু কিছু ভালো উদ্যোগ থাকলে তাকে ইমার্জিং, পদ্ধতিগত ভালো চর্চা হলে সেক্ষেত্রে এস্টাবলিশড ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের ভিত্তিতে পরিচালিত হলে তাকে অ্যাডভান্সড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য নির্ধারণের পথে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান আন্তর্জাতিক মানের হলেও কলেজগুলো অনগ্রসর অবস্থানে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক্ষেত্রে ইমার্জিং স্কোর পেয়েছে। নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক স্কোর এস্টাবলিশড। সুশাসনের বিবেচনায়ও কলেজগুলো পিছিয়ে রয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এটি প্রতিষ্ঠিত। এক্ষেত্রে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান ইমার্জিং। অর্থায়নের বিবেচনায় দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক স্কোর ইমার্জিং। শিক্ষার মান নিশ্চিতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক স্কোর ইমার্জিং হলেও কলেজগুলোর স্কোর ল্যাটেন্ট। অর্থাত্ কলেজগুলোয় উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের বিষয়টি মনোযোগের বাইরে রয়ে গেছে।

গুণগত মানে পিছিয়ে থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও। তিনি বলেন, আগে আমাদের ছেলেমেয়েরা উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে অনার্সে ভর্তি হওয়ার জন্য খালি আসন পেত না। অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমাত উচ্চশিক্ষার জন্য। তাই আমরা উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রথমে এর প্রসার ঘটিয়েছি। এখন আমরা মনোযোগ দিচ্ছি গুণগত মান নিশ্চিতে। এ লক্ষ্যে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর বাইরেও প্রতিষ্ঠানগুলোর মানোন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার।

প্রকট শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটে রয়েছে দেশের অধিকাংশ কলেজ। সরকারের পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে বিষয়টি। ব্যানবেইসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, প্রতি একজন শিক্ষকের বিপরীতে সরকারি কলেজগুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৩। এ অনুপাত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড তো বটেই, জাতীয় মানদণ্ডেরও অনেক নিচে। জাতীয় শিক্ষানীতিতেই ৩০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষকের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

তীব্র শিক্ষক সংকটে থাকা এমন একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বরগুনা সরকারি কলেজ। কলেজটিতে উচ্চ মাধ্যমিকের পাশাপাশি ১৩টি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স পড়ানো হয়। অধ্যয়নরত সাত হাজার শিক্ষার্থীর পাঠদানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৩৭ জন। সে হিসাবে কলেজটিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ২১৯। অথচ দীর্ঘদিন ধরে ৪৯টি শিক্ষক পদের ১৭টি শূন্য রয়েছে।

মানের দিক থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তার পরও বেসরকারি পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে অনুমোদনপ্রাপ্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৯৫টি। এর মধ্যে ১৯৯২-২০১১ দুই দশকে অনুমোদন পায় ৫২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ ২০১২-১৬ পাঁচ বছরের মধ্যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৪৩টি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়।

পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবে কোনো ধরনের নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই পরিচালিত হচ্ছে নামে-বেনামে গড়ে ওঠা অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ইউজিসি থেকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন পায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর একই বছরের এপ্রিলে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামের অনুমোদন মেলে।

সে অনুযায়ী চার বছর মেয়াদি ওই প্রোগ্রামের প্রথম ব্যাচের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা ২০১৮ সালে। অথচ প্রোগ্রাম অনুমোদনের ১৭ মাসের মধ্যেই আবদুল মোতালেব হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থীকে বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রির সনদ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অবৈধ সনদ প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগ তদন্তে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে আকস্মিক পরিদর্শনে যায় ইউজিসির একটি দল। পরিদর্শন শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠায় ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি। তদন্তে উঠে আসা বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণার মান উল্লেখ করার মতো নয়। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো ক্যাম্পাস নেই। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নীতিনির্ধারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখেন বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্যরা। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে বোর্ড অব ট্রাস্টির অধিকাংশ সদস্যের প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা ও আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।

এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষাদানের পরিবর্তে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো লাভজনক নাকি অলাভজানক প্রতিষ্ঠান হবে, বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন সাধনের পর যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের দাবি রাখে, তা হলো শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণ। আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা খাতে মানের প্রশ্নটি দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে। সরকার উচ্চশিক্ষা প্রসারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এখন সময় এসেছে এর গুণগত মানে মনোযোগ দেয়ার। কেননা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে না পারলে দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত দুর্বলই থেকে যাবে, যা টেকসই উন্নয়নের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।

922 ভিউ

Posted ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com