কক্সবাংলা ডটকম(২ জুলাই) :: কয়েক বছর ধরে ফুটবলে বিস্ময়ের পর বিস্ময় উপহার দিয়ে আসছে চিলি। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ের মতো ফুটবল পরাশক্তিদের পেছনে ফেলে সর্বশেষ দুটো কোপা আমেরিকা শিরোপা জিতেছে দলটি। সেই স্বপ্নযাত্রা এবারের কনফেডারেশন্স কাপ সেমিফাইনাল পর্যন্তও অব্যাহত রেখেছে চিলি।
ফুটবল সেনসেশন লিওনেল মেসি, ব্রাজিলের ভরসার প্রতীক নেইমার কিংবা উরুগুয়ে গোলমেশিন লুইস সুয়ারেজদের বারবার ‘বাড়া ভাতে ছাই ঢেলে দেয়া’র পর সর্বশেষ ম্যাচে বিশ্বফুটবলের আরেক সমীহ জাগানো নাম ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেও হতাশায় ডুবিয়েছে চিলি।
এ সময়ের বিশ্বফুটবলের সব বড় তারকারই ট্র্যাজেডির রূপকার এই দলটি আজ কনফেডারেশন্স কাপ ফাইনালে শিরোপার লড়াইয়ে মুখোমুখি হচ্ছে জার্মানির। সেন্ট পিটার্সবার্গে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টায়।
বিশ্বফুটবলে সর্বকালের সেরা কে— পেলে না ম্যারাডোনা? কিংবা এ সময়ে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে কে এগিয়ে— মেসি না রোনালদো? এ নিয়ে একমত হওয়া মানুষের সংখ্যা খুবই কম। তবে বিশ্বফুটবলে সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রতীক কী? এর উত্তরে দ্বিমত করার লোকের সংখ্যা খুব কমই পাওয়া যাবে। প্রতিপক্ষ যখন জার্মান জার্সি, তখন কোন দলে কী আছে কিংবা কতটা সফল— এ প্রশ্নগুলো খুব বেশি অর্থ বহন করে না। মহাতারকাদের পতন ঘটানো চিলির সামনে আজ সেই চিরন্তন বাধা— জার্মান জার্সি।
একটা প্রশ্ন অবশ্য উঠতেই পারে। এবারের কনফেডারেশন্স কাপ ফাইনালের জার্মানি তো আর আসল জার্মানি নয়! অনভিজ্ঞ, আনকোরা একটি দল। সর্বশেষ ২০১৪ বিশ্বকাপে এ দলের এক জুলিয়ান ডাক্সলার ছাড়া কেউই ছিলেন না। আর বর্তমান অধিনায়ক ডাক্সলার তিন বছর আগের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছেন কদাচ। সব কথার এক কথা— বিশ্বকাপের মহড়া বিবেচিত এ আসরে খেলছে অনভিজ্ঞ অচেনা জার্মান দল। কিন্তু তাতে জার্মান জার্সির যে গৌরব, তার বিন্দুমাত্র ঘাটতি দেখা যাচ্ছে না। বড় আসরের সেই চিরচেনা জার্মান দলটিকেই দেখছে ফুটবলপ্রেমীরা।
সেমিফাইনালের মতো ম্যাচে শক্তিশালী মেক্সিকোকে ৪-১ গোলের লজ্জায় ডুবিয়েছে দলটি। অনভিজ্ঞ শিষ্যদের সাফল্য সম্পর্কে অভিজ্ঞ কোচ জোয়াকিম লো’র ভাষ্য, ‘আমরা আসলে এ টুর্নামেন্ট থেকে একটা দল তৈরি করতে চেয়েছি। আর তাই কত দূর যেতে পারব, শুরুতে এটা ভাবা সম্ভব ছিল না। এখন অবশ্য বিষয়টা অন্য রকম। ছেলেরা খেলাটা খুবই উপভোগ করছে। সাফল্যের জন্য সবাই ক্ষুধার্ত।’
চিলির প্লাস পয়েন্ট— বড় আসরগুলোয় সাফল্য। আরতুরো ভিদাল-অ্যালেক্সি সানচেজ-এডুয়ার্ডো ভারগাসদের সমন্বয়ে গড়া দলের পেছনে আছে ক্লডিও ব্রাভোর মতো বিশ্বস্ত হাত। সবচেয়ে বড় কথা, অনেক দিন ধরে একই দল নিয়ে খেলছে চিলি। দলটিতে পারস্পরিক বোঝাপড়া চমত্কার। যেকোনো পরিস্থিতি সামলানোর মতো দক্ষ ফুটবলারের অভাব নেই দলটিতে। সর্বশেষ সেমিফাইনালে পর্তুগালের সঙ্গে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচটি তারা শেষ করে গোলশূন্যভাবে।
টাইব্রেকারে কিন্তু রোনালদোদের কোনো সুযোগই দেয়নি চিলি। পরপর তিন পেনাল্টি কিক রুখে দেন ব্রাভো। আর তিন শট থেকেই লক্ষ্যভেদ করে দলটি। শেষ দুই শটের আর প্রয়োজনই পড়েনি। এমন দলকে যে হারানো কঠিন, সেটা অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন জার্মান কোচ লো। তার কথায়, ‘এ টুর্নামেন্টের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ চিলি। আমরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালের আশা করছি।’
ফিফা বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার (৮ বার) ফাইনাল খেলেছে জার্মানি। কিন্তু কনফেডারেশন্স কাপে এই প্রথমবারের মতো ফাইনালের মঞ্চে দলটি। হালে লাতিন শক্তি হয়ে ওঠা চিলিও এ আসরে ফাইনাল খেলছে এই প্রথমবারের মতো, যার অর্থ— আজ দুই দলের সামনেই ইতিহাস গড়ার হাতছানি। তবে এত দূর আসার পর শিরোপাবঞ্চিত থেকে দেশে ফিরতে নারাজ চিলি।
দলটির অধিনায়ক ব্রাভোর ভাষায়, ‘এমন সুযোগ খুব বেশি আসে না আমাদের। আর তাই আমরা এর সদ্ব্যবহার করে দেশের সাধারণ মানুষকে আনন্দ দিতে চাই।’ আত্মবিশ্বাসী ব্রাভো বলেন, ‘আমরা এমন একটা দল, যারা কোনো পরিস্থিতিতেই আশা হারায় না। লক্ষ্যপূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা লড়ে যেতে প্রস্তুত।’
রক্ষণ-মধ্যমাঠ-আক্রমণ এ তিন বিভাগেই চিলি খুবই সুবিন্যস্ত। আর গ্লাভস হাতে ব্রাভোর উপস্থিতি দুর্দান্ত দলে পরিণত করেছে কোপা বিজয়ীদের। অভিজ্ঞতার দিক থেকে তাদের সঙ্গে তারুণ্যনির্ভর জার্মানির তুলনাটাই অবান্তর। তবে গোল করার সক্ষমতার দিক থেকে অভিজ্ঞ প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে জার্মানি। টুর্নামেন্টে চার ম্যাচ থেকে সর্বোচ্চ ১১ গোল করেছে লো ব্রিগেড। বিপরীতে সমান ম্যাচে চিলির গোল সংখ্যা ৪। তিনটি করে গোল করে শীর্ষ গোলদাতা দুই জার্মান টিমো ওয়ের্নার ও লিওন গোরেত্জকার। গ্রুপ পর্বে অবশ্য দুই দলের ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে। জার্মান জার্সি রুখে দেয়ার ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জ ব্রাভোরা কীভাবে সামলায়, আজ সেটাই দেখার অপেক্ষায় ফুটবলবিশ্ব।
এএফপি, বিবিসি
Posted ৩:১১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০২ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta