কক্সবাংলা ডটকম(২৫ জুলাই) :: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবিলায় দেখা মেলেনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের।
মাঠে পাওয়া যায়নি বেশির ভাগ দলীয় সংসদ সদস্য ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের।
ফলে সন্ত্রাসীরা অনেকটা নির্বিঘ্নে বিটিভি, সেতু ভবন, ডাটা সেন্টার, মেট্রোরেলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করতে পেরেছে। হামলা করেছে পুলিশের ওপর।
নাশকতাকারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের মোকাবিলায় বেশ বেগ পেতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
তবে রমনা, পল্টন, মতিঝিল, খিলগাঁও, সবুজবাগ, আদাবর, ওয়ারী ও সূত্রাপুর এলাকায় প্রশাসনের পাশাপাশি লাঠিসোটা হাতে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া করতে দেখা গেছে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের।
কিন্তু গা ঢাকা দিয়েছিল বেশির ভাগ নেতা।
এত বড় ঘটনায় ঢাকার দলীয় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের অনুপস্থিতি বড় ধরনের সাংগঠনিক দুর্বলতা হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগ।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ দলের হাইকমান্ড। মহানগরীর সাংগঠনিক এই দুর্বলতা দূর করে আওয়ামী লীগের সুপার এই ইউনিটটির মূল দলসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করবে দলটি।
পাশাপাশি যেসব নেতা এই সংকটে গা ঢাকা দিয়েছিল, তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে হাইকমান্ড।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার কমপ্লিট শাটডাউন শুরু হলে ওইদিন সকাল থেকেই রাজধানীর রামপুরা, মালিবাগ, বাড্ডা, ভাটারা, যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, রায়েরবাগ, মিরপুর কাজীপাড়া, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ ও ধানমন্ডি এলাকায় শক্ত অবস্থান নেয় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা।
যাদের বেশির ভাগই ঢাকার বাইরে থেকে এসেছিল বলে জানা গেছে।
আক্রমণকারীরা লাঠিসোটা, বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালায়।
রামপুরা এলাকায় বিটিভি ভবনে চারবার আক্রমণ করে তারা। সেখানে অগ্নিসংযোগ চালায়। তছনছ করে ফেলে বিটিভির আর্কাইভসহ ভবনের বেশির ভাগ অংশ।
প্রতিবারই পুলিশকে মোকাবিলা করতে হয়েছে তাদের । একপর্যায়ে পিছুও হটেন র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা। সন্ত্রাসীরা রামপুরা পুলিশ বক্সও জ¦ালিয়ে দিয়েছে।
এছাড়া বনানীর সেতু ভবন, মহাখালীর দুর্যোগ ভবন, ডাটা সেন্টার, মিরপুর ও কাজীপাড়া মেট্রোরেল, যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ সদস্য নির্মমভাবে হত্যার মতো জঘন্য কাজগুলো তারা করে।
তারা সংখ্যায় এত পরিমাণ ছিল যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের মোকাবিলায় বারবার হিমসিম খেতে হয়েছে। হামলাকারীদের ধাওয়ায় তাদের অনেক সময় পিছুও হটতে হয়েছে।
স্থানীয় মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সন্ত্রাসীরা বারবার প্রশাসন ও থানায় হামলা করেছে।
টানা দুই থেকে তিন দিন শক্ত অবস্থান নিয়ে ছিল হামলাকারীরা।
কিন্তু এই সময় এসব এলাকার স্থানীয় সংসদ সদস্য, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের
খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি অনেক নেতা ও জনপ্রতিনিধির ফোন নম্বরও বন্ধ পাওয়া গেছে। হামলাকারীরা মূল সড়কসহ বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে থাকে।
সেখান থেকে দফায় দফায় মিছিল ও সেøাগান নিয়ে বের হয়ে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলা করে।
একপর্যায়ে শুক্রবার রাতে কারফিউ জারি করার পরেও তারা শক্ত অবস্থান নিয়ে ছিল। ধীরে ধীরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ওইসব এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়।
কিন্তু সরকারদলীয় স্থানীয় নেতাকর্মীদের দেখা খুব একটা মিলেনি।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সংকটকালে তারা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনাও পাননি।
বন্ধ পাওয়া গেছে অনেক থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতার ব্যক্তিগত ফোন নম্বর। এই দুটি ইউনিটের যুবলীগকেও খুব একটা মাঠে দেখা যায়নি।
এছাড়া নিষ্ক্রিয় ছিল যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্রলীগের বড় একটি অংশ।
এসব বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে কারফিউ শিথিলকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের শীর্ষ নেতা, ঢাকার দলীয় এমপিদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
বৈঠকে তিনি ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কঠোর বার্তা জানিয়ে দেন নেতাদের।
সেখানে তিনি গত কয়েকদিন ক্রাইসিস মুহূর্তে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা তুলে ধরেন। যা চরম সাংগঠনিক দুর্বলতা বলে উল্লেখ করেন তিনি।
খুব শিগগিরই এ সমন্বয়হীনতা কাটানোর কথা জানান কাদের। সংকটকালে যেসব নেতা দায়িত্বশীল পদে থেকে গা ঢাকা দিয়েছেন, যারা বিদেশ গেছেন তাদের তালিকা করার কথা বলেন।
এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলন হওয়ার অনেকদিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কমিটি না হওয়ায় চরম বিরক্তি প্রকাশ করেন তিনি।
বিশেষ করে যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনিরআখড়া, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, মোহাম্মদপুর, উত্তরা, গাবতলী এলাকার সংসদ সদস্য ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষোভের কথা জানান তিনি।
এদিকে সংকটকালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে দলটির নেতাকর্মীদের।
তাদের অভিযোগ সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় মহানগরীর শীর্ষ নেতাদের কোনো দিকনির্দেশনা পাননি তারা। শীর্ষ নেতারা ফোন বন্ধ করে ঘরে বসে ছিলেন।
যদি তারা দিকনির্দেশনা দিতেন, তাহলে যে যার অবস্থান থেকে সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করা যেত বলে মত দেন অনেকেই।
শুধু সাধারণ নেতাকর্মীরাই নয়, প্রশাসনের বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সন্ত্রাসীদের মোকাবিলায় অনেক এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও দলের নেতাকর্মীদের তারা মাঠে দেখতে পাননি। তারা শক্ত অবস্থান নিয়ে থাকলে নাশকতাকারীরা ধ্বংসাত্মক কাজ করার সুযোগ পেত না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতারাও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা দ্রুত মহানগরীর প্রতিটি সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমরা সব সময় তৃণমূলে আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করে থাকি।
ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে আমাদের সংগঠনকে আরো নতুন করে সাজাতে হবে। দলের প্রতিটি স্তরে পরীক্ষিত সৈনিকদের দলের মূল স্টিয়ারিংয়ে বসাতে হবে।
তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করা হবে, গোছানো হবে, সমৃদ্ধ করতে হবে। সৎ, যোগ্য, সাহসী ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের হাতে দলের নেতৃত্বে নিয়ে আসা হবে।
মোট কথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আমাদের রক্ষা করতে হবে। আর এজন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।
Posted ১২:৫১ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta