কক্সবাংলা ডটকম :: অতলান্তিক মহাসাগরের গভীরে টাইটানিক-এর ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া ডুবোযানের এখনও কোনও খোঁজ নেই৷ সাগরের জলরাশিতে হারিয়ে যাওয়া সেই ডুবোযানের সওয়ারি বিশ্বের তিন ধনকুবের৷ তাঁদের মধ্যেই অন্যতম পাকিস্তানের শিল্পপতি শাহজাদা দাউদ৷ তিনি ও তাঁর ছেলে সুলেমান রয়েছেন ওই জলযানে৷
পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে উত্তর অতলান্তিকের গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপ দেখতে গিয়েছিলেন সপুত্র শাহজাদা৷
কিন্তু তাঁদের কোনও সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না৷ যাত্রীদের নিয়ে ডুবোযানটা যেন কর্পূরের মতো উবে গিয়েছে৷ এক অভিযাত্রী সংস্থার পরিচালিত ২১ ফুট বা ৬.৫ মিটারের ডুবোযানটি রবিবার অবতরণ করতে শুরু করে৷ কিন্তু দু’ ঘণ্টার মধ্যে সেটির সঙ্গে সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ যাত্রা শুরুর সময় যানটিতে ৯৬ ঘণ্টার মতো অক্সিজেন মজুত ছিল৷
আমেরিকা ও ইংল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করা শাহজাদা দাউদের সংস্থা ‘এনগ্রো’ পাকিস্তানের নামী কর্পোরেট সংস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম৷ তাঁর বাবা হুসেইন দাউদও নিয়মিত থাকতেন ধনী পাকিস্তানি তালিকায়৷ এছাড়াও ওই যানে আছেন ব্রিটিশ ধনকুবের হ্যামিশ হার্ডিং৷
উড়ান শিল্পে তিনি প্রথম সারির একটি প্রতিষ্ঠান৷ দুঃসাহসিক অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে তাঁর নামের পাশে উজ্জ্বল একাধিক গিনেস রেকর্ড৷ বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যবাসী ৫৮ বছর বয়সি হার্ডিং এর আগে পাঁচ বছর ছিলেন বেঙ্গালুরুতেও৷ তাঁর সংস্থা দুবাই ও লন্ডনে বিমান কেনাবেচা করে৷
এই তিন যাত্রী ছাড়া ওই ডুবো যানে রয়েছেন দুজন ক্রু সদস্য৷ তাঁদের মধ্যে পল অঁরি নার্গিওলেট একজন অভিজ্ঞ ডাইভার এবং টাইটানিক ধ্বংসাবশেষ বিশেষজ্ঞ৷ পঞ্চম ব্যক্তি হলেন ওই অভিযাত্রী সংস্থার সিইও স্টকটন রাশ৷ তাঁদের সকলকে নিয়ে অবতরণ-যাত্রা শুরু দু’ ঘণ্টার মধ্যে ডুবোযান ‘দ্য টাইটান’-এর সঙ্গে সব সংযোগ ছিন্ন হয়ে যায়৷
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ইতিমধ্যে বেশ কিছুটা অক্সিজেন ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে। বুধবার সকালে আনুমানিক তিরিশ ঘণ্টার অক্সিজেন ওই সাবমেরিনে বাকি থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে ‘টাইটান’-এর সন্ধানে অতলান্তিকে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে মার্কিন ও কানাডিয়ান উপকূলরক্ষীবাহিনী৷ তাঁদের তরফে জানানো হয়েছে প্রায় ৭৬০০ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে চলছে তল্লাশি৷ কিন্তু এখনও অধরা ‘টাইটান’৷
মার্কিন টেলিভিশন সাংবাদিক মাইক রিজ গত বছর ‘টাইটান’-এ করে দেখতে গিয়েছিলেন ‘টাইটানিক’-এর ধ্বংসাবশেষ৷ জানিয়েছেন, ‘‘জলের গভীরে যাওয়া মাত্র কম্পাস কাজ করা বন্ধ করে দেয়৷ সেখানে বোঁ বোঁ করে ঘুরতে থাকে কম্পাসের কাঁটা৷ আমরা অন্ধের মতো নামছিলাম সমুদ্রের নীচে৷ শুধু জানতাম এখানে কোথাও একটা টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে৷’’
দ্বিতীয় দিনের মতো ওশানগেটের সাবমেরিন (ডুবোজাহাজ) টাইটান অনুসন্ধান এলাকা থেকে রহস্যজনক শব্দ ও ধাক্কাধাক্কির আওয়াজ শোনা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে এমনটাই জানানো হয়েছে।
তবে কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা বলেছেন, অনুসন্ধান সাইট থেকে কানাডার সামরিক পি৩ বিমান থেকে শনাক্ত হওয়া শব্দগুলোর অবস্থান বের করা কঠিন এবং এখনও নৌবাহিনীর বিশেষজ্ঞরা এগুলো বিশ্লেষণ করে দেখছেন।
বিশেষ করে ধাক্কাধাক্কি বা শোরগোলের বিষয়ে কোস্টগার্ডের ক্যাপ্টেন জেমি ফ্রেডেরিক বুধবার (২১ জুন) সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আপনাদের সঙ্গে খোলামেলা হতেই বলছি, আমরা জানিনা সেগুলো কী।’
ক্যাপ্টেন ফ্রেডরিক জানিয়েছেন, অনুসন্ধানের এলাকা এখন ভূপৃষ্ঠের আয়তনের বিচারে কানেকটিকাট রাজ্যের দ্বিগুণ এবং আটলান্টিক সাগরের ২.৫ মাইল গভীরে পরিচালিত হচ্ছে।
সাবমেরিনের আরোহীদের বেচে ফিরে আশার সম্ভাবনা রহয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্রেডরিক বলেন, ‘একটি শতভাগ একটি অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান। যখন আপনি অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানের মধ্যে থাকবেন, আপনার আশা সব সময়ই থাকবে।’
উড হোল ওশানোগ্রাফিক ইনস্টিটিটিউশনের গবেষক কার্ল হার্টসফিল্ড সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শব্দগুলো সামুদ্রিক ধ্বনিবিদ্যা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আর ওই এলাকায় এখনও প্রচুর জাহাজ হয়েছে। তাই উৎস সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
Posted ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta