বিশেষ প্রতিবেদক(১৫ অক্টোবর) :: কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করতে যেয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শতাধিক ফলজ ও বনজ গাছ কেটেছে কর্মকর্তারা। কক্সবাজারের ভিআইপি এলাকা বলে পরিচিত সরকারী আরআরআরসি অফিসেই গত কয়েকদিন ধরে প্রকাশ্যে চলে এসব গাছ হত্যা। হঠাৎ করে প্রয়োজন ছাড়া কেন শতাধিক বৃক্ষ কাটা হলো এই নিয়ে কক্সবাজারের পরিবেশ আন্দোলন কর্মী ও সুশীল সমাজের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
জানা যায় পর্যটন শহর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন বড় বড় গাছের সুশীতল ছায়ায় মনোরম পরিবেশে কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়। সুন্দর একটি পরিবেশে সরকারি অফিসটির অন্যরকম একটি আকর্ষন ও সুনাম ছিল। কিন্তু ওই অফিস আঙিনার বড় বৃক্ষগুলোর বেশির ভাগ এখন কেটে ফেলা হয়েছে।
তাদের দাবি নতুন যোগাদানকৃত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কোটি টাকা মূল্যের এই বৃক্ষগুলো কেটে ফেলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে গাছের ডালপালা কাটার নাম দিয়ে শতাধিক বড় বৃক্ষ কাটা হয়েছে। এর বেশির ভাগই মেহগনি জাতের মাতৃগাছ। এই গাছ কাটার জন্য কোন দরপত্র আহবান করা হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্রও নেয়া হয়নি। স্থানীয় বন বিভাগকেও জানানো হয়নি।
মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় অফিসের আঙ্গিনায় শতাধিক বৃক্ষ কেটে তা টুকরো করে স্তুপ করে রাখা হয়েছে। আরো কয়েকটি গাছ কাটার জন্য শ্রমিকরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত একজন শ্রমিক জানান- কর্তৃপক্ষের আদেশে তারা বড় আকারের অর্ধশত মেহগনি গাছ কেটেছে। এছাড়াও ছোট আকারের কিছু গাছও কাটা হয়েছে। গাছের গুড়িগুলো কি করা হবে তা কর্তৃপক্ষ জানে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মাহবুব আলম তালুকদার বলেন- অফিস ভবনের সংস্কার কাজ চলছে। এই কাজের অংশ হিসাবে অফিস আঙ্গিনায় সৌন্দর্য বর্দ্ধনের কাজ করা হবে। তিনি বলেন- অফিস আঙ্গিনায় এতো বেশি গাছ হয়েছে ভবনের উপর সূর্যের আলো পড়ে না। তাই কিছু গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন- আরো কিছু গাছ কাটা হবে। প্রয়োজনে সেখানে নতুন গাছ লাগানো হবে। গাছগুলো কাটা ও বিক্রির জন্য কোন টেন্ডার দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন নিয়ম মেনেই গাছ কাটা হয়েছে। তবে বন বিভাগ ও পরিবেশ ছাড় নেয়া হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন।
এই বিষয়ে কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা(দক্ষিণ) হুমায়ুন কবীর বলেন- নিয়ম অনুযায়ী সরকারি ও বেসরকারি কোন গাছ কাটতে হলে বন বিভাগের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হয়। বন বিভাগের কর্মীরা সরেজমিনে গিয়ে গাছের পরিমাপ করে মূল্য নির্ধারণ করেন। সরকারি একটি ফি নিয়ে গাছ কাটার অনুমতি দেয়া হয়। তিনি বলেন- শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের আঙ্গিনায় গাছ কাটার বিষয়ে বন বিভাগকে অবহিত করা হয়নি।
গাছ কাটার ফলে পরিশেরে ক্ষতি হয়েছে কিনা জানতে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো: নুরুল আমিন জানান,এ বিষয়টি সম্পূর্ণ বনবিভাগের।পরিবেশ অধিদপ্তরের কিছু করার থাকলে তা পরিবর্তীতে ক্ষতিয়ে দেখবে।
এদিকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় প্রাঙ্গনের শতাধিক বৃক্ষ কাটার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কক্সবাজার পরিবেশ ও বন সংরক্ষণ পরিষদ। সংগঠনের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন- ওই স্থানে নতুন কোন ভবন না হলেও শতাধিক মাতৃগাছ এভাবে কেটে ফেলার কোন কারণ নেই। এতে কক্সবাজার শহরের জন্য পরিবেশের ক্ষতির কারণ হবে।
তিনি বলেন- বড় বড় গাছের ছায়ায় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের অফিসটি দর্শনার্থীদের জন্যও আকর্ষন ছিল। এখানে অনেক পাখির আবাসস্থলও ছিল। এখন একজন কর্মকর্তার খামখেয়ালিপনার কারণে শতাধিক মাতৃগাছের প্রাণ গেল। পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
এখানে উল্লেখ্য যে গত ৮ মাস ধরে জাতিসংঘের শরনার্থী সংস্থা ইউএনএইসসিআর এর অর্থায়নে আরআরআরাসি কাযালয়ের বহুতল ভবণ নির্মাণ ও আধুনিকায়নের কাজ চলমান রয়েছে।
Posted ১০:১১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta