আব্দুল কুদ্দুস রানা
ফেসবুকে ঢুকলেই দুটো জিনিস চোখে পড়ে বেশি। (এক)-করোনাভাইরাস নিয়ে নানা রকমের ‘আদেশ-উপদেশ’ সম্বলিত পোষ্ট । দেশে এত করোনা বিশেষজ্ঞ ! আর ম্যাসেঞ্জারেতো কথাই নেই-সারাক্ষণ শুধু টুসটাস আওয়াজ ।
(দুই)-করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মহীন, হতদরিদ্র লোকজনের মাঝে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তার ছবি। মানুষের পাশে মানুষ অবশ্যই দাঁড়াবে, বাড়িয়ে দেবে সহযোগিতার হাত। কিন্তু সেই সহযোগিতা লোক দেখানো হবে কেন ?
আজ ফেসবুকে একটি ছবি দেখে অবাক হলাম। ছবিটি নাকি আফগানিস্তানের। সেখানকার একটি সড়কে হাজারো বস্তা পড়ে আছে। সম্ভবত চালের বস্তা। সঙ্গে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রি। কে দিচ্ছেন, কাকে দিচ্ছেন ? তা দেখা যাচ্ছে না। যার সাহায্য প্রয়োজন তিনি এসে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে নেই ত্রাণসামগ্রী বিতরণের মহড়া-সেলফি, নেই ভিডিও প্রদর্শণী। আমাদের দেশে এরকম আশা করা যায় ? আমরা কখন মানুষ হব ?
দান-মানবিক সহায়তা সামর্থঅনুযায়ী কমবেশি সবাই করেন এবং করেই চলেছেন। তবে সেটা গোপনে। ধর্মীয় নির্দেশনাটাও সেরকম, ডান হাতে দান করলে যেন বাম হাত বুঝতে না পারে।
# ঘরেঘরে ভয়ংকর ক্ষুধা !
সকালে ঘুমটা ভাংলো এক ব্যক্তির মুঠোফোন কলে । কলটা এসেছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে। অভিযোগ ছিল- চার দিন ধরে ওই লোকের ঘরে খাদ্য সংকট চলছে। ত্রাণ নিয়ে কেউ সেখানে যাচ্ছে না।
কিছুদিন আগে সেন্টমার্টিনবাসীর দু:খ-দুর্দশা নিয়ে প্রথম আলোতে একটা প্রতিবেদন করেছিলাম। এতদিনেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। দেড় হাজার পরিবারের ১০ হাজার মানুষের মধ্যে মাত্র হাজার খানেক মানুষ কয়েক দিনের ত্রাণসহায়তা পেয়েছে।
শুধুই কি সেন্টমার্টিন ? কক্সবাজার শহরের নাজিরারটেক, কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, কলাতলী, আদর্শগ্রাম, পাহাড়তলী, লারপাড়াসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে চলছে খাবারের সংকট । জেলার ইউনিয়ন সমূহের দরিদ্র মানুষগুলো ত্রাণের আশায় ছুটছেন এদিক সেদিক । ত্রাণ নিয়ে ফিরছেন কেউ কেউ। কিন্তু বাদ পড়া বেশিরভাগ দরিদ্র লোকজন পড়ছেন মহাবিপদে। না খেয়ে কতক্ষণ থাকা যায় বলুন ?
কক্সবাজার জেলা লকডাউন হয়েছে ৮ এপ্রিল থেকে। লকডাউনের কারণে দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, যানবাহন চলাচল, নির্মাণকাজ, আয়-রোজগার বন্ধ আছে। কোয়ারেন্টিন, লকডাউনে গৃহবন্দী লাখ লাখ মানুষ। প্রাণঘাতী করোনা থাবায় লন্ডভন্ড দেশ। হুমকিতে দেশের অর্থনীতি । অর্থনীতি যেন স্থবির হয়ে না পড়ে তারজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার একগুচ্ছ প্রণোদনা। করোনা সংকটে যারা ইতিমধ্যে পেশা হারিয়েছেন, কাজ হারিয়ে, চাকরি হারিয়ে ঘরে বেকার ও গৃহবন্দী অমানবিক জীবন কাটাচ্ছেন-তাদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবী।
মধ্যবিত্ত যারা, তারা কোথাও যেতে পারছেনা। কোথায়ও গিয়ে হাত পাততে পারছেনা । তাদের সমস্যার কথাও বিচেনায় নিতে হবে।
# সংকটের সময় মানুষের মানবিকতা প্রকাশ পায়। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আমরা কি কেবল নিজের জন্য বাঁচবো, নাকি সবাইকে নিয়ে বাঁচবো ?
লেখক : আব্দুল কুদ্দুস রান (২২ এপ্রিল)
প্রথম আলো
কক্সবাজার অফিস
Posted ৫:৪৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২২ এপ্রিল ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta