কক্সবাংলা ডটকম(১৯ অক্টোবর) :: একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে চিনের আর্থিক বৃদ্ধি। গত প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের জেরে এই ফল পেতে হয়েছে চিনকে।
সরকারি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এবছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত তিনমাসে চিনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬ শতাংশ। আবার এই মেয়াদের মধ্যেই ৬. ১ শতাংশ বৃদ্ধির আশা করা হয়েছিল সরকারের তরফে।
চিন সরকার কর প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এনে অর্থনীতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করার পরও মোট দেশের মোট উৎপাদনের হারে গতি শ্লথ হতে দেখা দিয়েছে।
চিন সরকারের বার্ষিক বৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে, ৬ থেকে ৬.৫ শতাংশ। এবছর বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ হওয়ার মানে, তা সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। আর ১৯৯২ সালের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায়ও প্রবৃদ্ধির এই হার সর্বনিম্ন।
আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বিশ্বের দ্বীতিয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চিনের অর্থনীতিতে এ শ্লথগতি বিশ্ব অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। তাই চিনের অর্থনীতির দিকটি নিবিড়ভাবে নজরে রেখেছে চিনের বিনিয়োগকারীরা।
চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের (এনবিএস) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) চীনে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। সবশেষ জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা দশমিক ২ শতাংশ কমে ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। ১৯৯২ সালের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের পর এটাই কোনো প্রান্তিকে চীনের সর্বনিম্ন জিডিপি প্রবৃদ্ধি।
বছর শেষেও চীনা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে নিম্নমুখী প্রবণতা বজায় থাকার জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৮ সালে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি বছর শেষে তা ৬ থেকে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করতে পারে বলে মনে করছে চীন সরকার।
চীনা অর্থনীতির শ্লথগতির কারণে চলতি বছর দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে এনেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ)। প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০১৯ সালে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসতে পারে। আগের প্রাক্কলনে তা ৬ দশমিক ২ শতাংশ উল্লেখ করেছিল আইএমএফ।
অর্থনীতির এ শ্লথগতির পেছনে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধকে দায়ী করছেন অনেক অর্থনীতিবিদ। সাংহাইভিত্তিক হুয়াবাও ট্রাস্টের অর্থনীতিবিদ নি ওয়েন বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যন্ত্রাংশসহ অনেক পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এতে সংকটে পড়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং খাত। পড়তির দিকে রয়েছে রফতানি খাতের প্রবৃদ্ধি। মূলত এ দুই কারণে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কমেছে। অর্থনীতির গতি ফেরাতে চীন সরকার নানা ধরনের নীতি পরিবর্তন করছে। তবে তা খুবই সংযত উপায়ে।
যদি রফতানি খাত আরো গতিশীল না হয় এবং আবাসন খাতের শ্লথতা না কাটে, তবে বছরের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেননি ওয়েন। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতি চীনের পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্যও চ্যালেঞ্জের জন্ম দেবে।
তবে এনবিএসের মুখপাত্র মাও শেংওং জানান, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমেই শ্লথ হয়ে আসা, অর্থনীতিতে বাহ্যিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার চাপ বেড়ে যাওয়া, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে কমে আসা—অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এমন অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে চীন সরকার সচেতন রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এখনো চীনা অর্থনীতি সক্ষমতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আর্থিক খাতে তারল্য সংকট এড়াতে ২০ হাজার কোটি ইউয়ান (চীনা মুদ্রা) বা ২ হাজার ৮০০ কোটি ডলার অর্থ ছাড়ের কথা জানিয়েছে সেন্ট্রাল পিপলস ব্যাংক অব চায়না। এ তহবিল থেকে দেশটির বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদে ঋণ সুবিধা পাবে।
তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধির খারাপ খবরের মাঝেও আশার কিছু কথা শুনিয়েছে এনবিএস। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের আগস্টে চীনের শিল্প উৎপাদন ১৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে এসেছিল। সেপ্টেম্বরে এ খাতে দেশটি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, যা প্রত্যাশার তুলনায় বেশ ভালো। এদিকে গত মাসে চীনে খুচরা বিক্রির পরিমাণ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে বলেও জানিয়েছে এনবিএস। আগস্টে এর পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
Posted ৫:২৪ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta