কক্সবাংলা ডটকম(২৩:জুন) :: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটন সফরে বাকি মাত্র দু’দিন। তার আগেই ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করতে একধাপ এগোল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। প্রায় ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে ভারতকে ২২টি অত্যাধুনিক নজরদারি ড্রোন বিক্রি করতে সম্মত হল তারা। মার্কিন বিদেশমন্ত্রকের তরফে বৃহস্পতিবারই দিল্লির কাছে খবর পৌঁছেছে।
ড্রোনগুলি তৈরি করবে ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত সামরিক সরঞ্জাম নির্মাণ সংস্থা ‘জেনারেল অ্যাটোমিকস।’ বরাবরই আমেরিকার থেকে অস্ত্রশস্ত্র কেনে ভারত। কিন্তু আন্তর্জাতিক সামরিক সংগঠন ন্যাটোর সদস্য নয় এমন কোনও দেশকে আজ পর্যন্ত নজরদারি ড্রোন বিক্রি করেনি তারা। ভারতের ক্ষেত্রেই প্রথম ব্যাতিক্রম ঘটল।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন যেভাবে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভারতকে নিজেদের জলসীমা নিশ্ছিদ্র করে ফেলতে হবে। তাই নিরাপত্তায় কোনও খামতি রাখতে চাইছে না ভারতীয় নৌসেনা। উপকূল থেকে দেশের ৭,৫০০ কিলোমিটার জলসীমায় কড়া নজরদারি বাড়াতে চাইছে তারা। মার্কিন নজরদারি ড্রোন তাদের সেই কাজে সাহায্য করবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এই ড্রোনগুলির টানা ২৪ ঘণ্টা আকাশে থাকার ক্ষমতা রয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫০ হাজার ফুট উঁচুতে উড়তে পারে। যার ফলে বিশাল এলাকায় নজরদারি চালাতে সক্ষম। অতি ক্ষুদ্র বস্তুর নড়াচড়াও চোখ এড়ায় না। তবে ভারতকে ড্রোন বিক্রির সিদ্ধান্তে মার্কিন বিদেশ মন্ত্রক নাকি উদ্বিগ্ন ছিল। এতে ভারত–পাকিস্তান কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা ছিল তাদের।
তবে শুধু মার্কিন ওয়াশিংটনই নয়, ড্রোন কেনার প্রস্তাব গৃহীত হবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিল দিল্লিও। কারণ বারাক ওবামা মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্কের অভূতপূর্ব উন্নতি ঘটেছিল। তাঁর মেয়াদ শেষের আগেই, ২০১৬ সালের জুন মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ড্রোন কেনার আর্জি জানায় ভারত। প্রথমে ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়তে সক্ষম ড্রোন কিনতে চেয়ে আর্জি জানানো হয়। ওবামা সরকার তা প্রত্যাখ্যান করলে তখন নজরদারি চালাতে সক্ষম নিরস্ত্র ড্রোন চাওয়া হয়। সেই নিয়ে আলোচনা চলছিল। তারমধ্যেই মার্কিন প্রশাসনে রদবদল ঘটে।
এ বছর জানুয়ারি মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়ায় সাময়িক ছেদ পড়ে। পরমাণু শক্তিধর উত্তর কোরিয়াকে শায়েস্তা করতে, শুরু থেকেই ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে সমঝে চলতে দেখা গিয়েছে ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। এপ্রিল মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ট্রাম্প। জাপান, ব্রিটেন এমনকী ভিয়েতনামের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গেও আলাদা করে সাক্ষাৎ করেন তিনি। কিন্তু ব্রাত্য করে রেখেছিলেন ভারতকে।
মোট তিনবার অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও ড্রোন নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি তাঁর সরকার। বরং এইচ–ওয়ানবি ভিসা এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধে দুরত্ব ক্রমশ বাড়তে থাকে। যা দিল্লির দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রশাসনের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে, তাহলে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর ভারতকে গুরুত্ব দেবে না? তবে গতমাসেই সমস্ত জল্পনায় জল ঢালে হোয়াইট হাউস। ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে উৎসুক বলে জানায় ট্রাম্প প্রশাসন।
সেইমতো রবিবার দু’দিনের ওয়াশিংটন সফরে রওনা দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি। তার দু’দিন আগেই সুখবর এল। ভারতকে ড্রোন বিক্রির সিদ্ধান্তে সমর্থন জানিয়েছে হোয়াইট হাউস এবং মার্কিন কংগ্রেস। মোদির ওয়াশিংটন সফরের সময় যুদ্ধবিমান কেনা নিয়েও দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হবে। তা সফল হলে, গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে টিকে থাকা দুই সামরিক জোটের মধ্যে সবচেয় বড় চুক্তিটি স্বাক্ষর হবে।
এর আগে, গত সোমবারই ভারতের ‘টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস’–এর সঙ্গে ১০০টি এফ–১৬ যুদ্ধবিমান নির্মাণ চুক্তির ঘোষণা করে মার্কিন যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারক সংস্থা ‘লকহিড মার্টিন।’ নরেন্দ্র মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের আওতায় এফ–১৬ যুদ্ধবিমান নির্মাণ প্রক্রিয়া টেক্সাস থেকে ভারতে সরিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। তবে অত্যাধুনিক এফ–৩৫ যুদ্ধবিমানের নির্মাণ নিজেদের দেশে করবে তারা।
Posted ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৩ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta