কক্সবাংলা ডটকম(২০ অক্টোবর) :: আফগানিস্তান, ইরাক-সহ একাধিক দেশে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ব্যস্ত আমেরিকা। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত এককালের দাপুটে রাশিয়া। সুনির্দিষ্ট রণকৌশল ও সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার অক্ষমতায় ভুগছে ভারতের মতো দেশ। ফলে এই মুহূর্তে একক শক্তির আসন কার্যত শূন্য।
এবার এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে আমেরিকার আসন টলানোর ছক কষছে চিন। প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য্য, মানব সম্পদ ও বিদ্যুৎ গতিতে দৌড়তে থাকা অর্থনীতিতে ভর করে এমন পরিকল্পনাই করছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
চিনা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিসি) সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দেশের প্রেসিডেন্ট পদে অভিষিক্ত হয়েছেন জিনপিং। দলের অভ্যন্তরে তাঁর ক্ষমতা উত্তরোত্তর বাড়ছে। দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া প্রায় নিশ্চিত। এমনকী, নজিরবিহীনভাবে তিনি তৃতীয় দফাতেও শীর্ষ পদে আসীন হতে পারেন। পাঁচ বছর অন্তর সিপিসি-র কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়।
এবার জিনপিংয়ের মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি, কেন্দ্রীয় স্তরের নতুন নেতাদেরও বেছে নেওয়া হবে। তার আগে বুধবার শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে সাড়ে তিন ঘণ্টার দীর্ঘ বক্তৃতা দেন জিনপিং।
সেখানে সমাজতান্ত্রিক কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে কীভাবে কমিউনিস্ট পার্টি পুনর্গঠন করা যায়, সে বিষয়েই অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন। একই সঙ্গে লালফৌজকে বিশ্বের অন্যতম সেরা সেনাবাহিনী হিসাবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ৬৪ বছরের এই রাষ্ট্রনায়ক।
জিনপিং বলেন, “আমাদের দল, আমাদের জনতা, আমাদের বাহিনী ও আমাদের দেশ নজিরবিহীন উন্নতি করেছে। কিন্তু জাতীয় পুনর্গঠনের লক্ষ্যে আমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে। এবার নিজেদের পরিবর্তিত করার সময় এসেছে। সমস্ত বিশ্বকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক দিশা দেখানোর জন্য তৈরি হতে হবে আমাদের।”
রাজনৈতিক মাপকাঠিতে আপাত নিরীহ মনে হলেও, চিনা প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে বিশাল পরিকল্পনার আভাস পাচ্ছেন কুটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ‘সুপার পাওয়ার’ হিসেবে বিশ্বে নিজের দাপট বাড়ানোর নকশা তৈরি করে ফেলেছে চিন বলেই মনে করছেন তাঁরা।
২০১২-য় জিনপিং ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ক্রমাগত সামরিক শক্তি বাড়িয়ে চলেছে চিন। বর্তমানে তাদের সামরিক বাজেট প্রায় ১৪ হাজার কোটি ডলার, আমেরিকার পর সর্বোচ্চ। ২০৩৫-এর মধ্যে বাহিনীকে বিশ্বের অন্যতম সেরা করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন জিনপিং। কিন্তু তাতে এশিয়া মহাদেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। চিনের সেনা সরাসরি কমিউনিস্ট পার্টির অধীনে।
সেনার হাইকমান্ড হল সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশন, যার চেয়ারম্যান স্বয়ং জিনপিং। গত বছর তাঁকে ‘কোর লিডার’ বা সর্বোচ্চ নেতা হিসাবে মনেনীত করা হয়। চিনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাও জে দং এবং তাঁর উত্তরসূরি দেং জিয়াওপিং ছাড়া যে সম্মান কারও ভাগ্যে জোটেনি। কেন্দ্রীয় কমিটিতেও আধিপত্য সুনিশ্চিত করে ফেলেছেন তিনি।
একাধারে দলের শীর্ষ নেতা, দেশের প্রেসিডেন্ট ও সামরিক বাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার হিসাবে উঠে এসেছেন জিনপিং। ফলে নিজের অ্যাজেন্ডায় চলতে তাঁকে বাঁধা দেওয়ার মতো কেউ থাকছে না।
Posted ৮:১১ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ২০ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta