কক্সবাংলা ডটকম(১৯ সেপ্টেম্বর) :: আরাকানে রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের ঘটনায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। নেদারল্যান্ডসে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌশুলিরা মঙ্গলবার মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গাদের হত্যা, যৌন নির্যাতন এবং জোরপূর্বক বিতাড়নের অভিযোগে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। খবর এএফপি।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের ফলে উত্তরের রাখাইন প্রদেশের প্রায় সাত লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, লুটপাট, অপহরণ আর ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন।
এর মাত্র দুই সপ্তাহ আগে বিচারকরা রায় দেন যদিও মিয়ানমার আইসিসির সদস্য দেশ না, তারপরেও ঘটনার এক অংশ যেহেতু বাংলাদেশে ঘটেছে, এবং বাংলাদেশ যেহেতু আইসিসির সদস্য সেহেতু আন্তর্জাতিক আদালত বিচারকার্য করতে পারবে।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর অভিযান শুরুর পর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ফেলে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। নতুন এবং পুরাতন মিলিয়ে ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা এখন প্রায় ১০ লাখের বেশি। এ অভিযানের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের প্রথম পদক্ষেপ এটাই।
আইসিসির কৌসুলি ফাতৌ বেনসৌদা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই প্রক্রিয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ শুরু করবো এবং পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করবো।’
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, প্রাথমিক তদন্ত পরবর্তীতে আনুষ্ঠানিক তদন্তে রূপ নিতে পারে আইসিসির মাধ্যমে। এর নজির রয়েছে ২০০২ সালে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকারের বিরুদ্ধে অপরাধের যে তদন্ত শুরু হয় সেটা। এই তদন্তের পরে সেটা অভিযোগ গঠন করা যেতে পারে।
ফাতৌ বেনসৌদা বলেছেন প্রাথমিক তদন্ত হতে পারে, দমনমূলক সেসব কাজের বিরুদ্ধে যার ফলে বাধ্যতামূলক স্থানান্তর, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, ধ্বংসযজ্ঞ এবং লুটপাটের বিরুদ্ধে। রোহিঙ্গাদের ওপর অন্য আরো কোন ধরনের অপরাধ যেমন নিপীড়ন বা অমানবিক আচরণ করা হয়েছে কিনা সেটাও বিবেচনা করা হবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগ তদন্ত করার কর্তৃত্ব আদালতের রয়েছে। তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রি-ট্রায়াল চেম্বারের তিনজন বিচারকের মধ্যে দুইজন একমত পোষণ করলেও একজন ভিন্নমত দেখিয়েছেন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌশুলী আদালতের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে রোহিঙ্গাদের যেভাবে মিয়ানমার থেকে বিতাড়ন করা হয়েছে সেটির তদন্ত করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রয়েছে কিনা।
সে প্রেক্ষাপটে আইসিসি’র প্রি-ট্রায়াল চেম্বার রায় দিয়েছে যে মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য না হলেও রোহিঙ্গারা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের কারণে ঘটনার একটি অংশ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে।
ফলে আইসিসি মনে করেছে রোম সনদ অনুযায়ী ঘটনার তদন্ত করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে। এ রায়ের ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌসুলি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের প্রাথমিক তদন্ত চালিয়ে যেতে পারবেন।
Posted ২:৩৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta