শেষ হয়ে গেল গ্রীষ্মের দলবদল। লা লিগায় ৬২ দিনের এ দলবদলে দেখা মিলেছে অনেক নাটকীয়তার। জুলাইয়ে শুরু হওয়া এ দলবদল শেষ হয়েছে ২৯ আগস্ট। নয় বছর পর এ মৌসুমেই রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে পাড়ি জমিয়েছেন দলের স্ট্রাইকার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। শেষ পর্যন্ত রোনালদোর বিকল্প আনতে না পারলেও, গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপের গোল্ডেন গ্লাভস জয়ী থিবো কোর্তোয়াকে দলে এনেছে তারা। আবার ম্যালকমের মতো উদীয়মান তরুণ তুর্কিকে এএস রোমার নাকের ডগা থেকে তুলে কেড়ে নিয়ে এসেছে বার্সেলোনা। বড় লক্ষ্য নিয়ে দল সাজিয়েছে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদও। বার্সাকে নিরাশ করে আতোঁয়া গ্রিজম্যানকে রেখে দেয়ার পাশাপাশি থমাস লেমারের মতো উদীয়মান তারকাকে দলে ভিড়িয়েছে তারা। অবশ্য সবকিছু ছাপিয়ে রোনালদোর ক্লাব ছাড়াই এ মৌসুমে লা লিগার সবচেয়ে বড় ঘটনা।
এছাড়া খরচের দিক থেকে এ বছর স্প্যানিশ ক্লাবগুলো সব মিলিয়ে গত বছরের চেয়ে বেশি খরচ করেছে। এবার ৮৯৭ দশমিক ১২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে ক্লাবগুলো। গতবার সে খরচের পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৭৬ মিলিয়ন ইউরো।
গত মৌসুমে লা লিগা ছেড়ে গিয়েছিল আলভারো মোরাতা, হামেস রদ্রিগেজ ও নেইমারের মতো বড় তারকারা। যেখানে প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি) যাওয়ার সময় নেইমার একাই লা লিগাকে দিয়ে গিয়েছিলেন ২২২ মিলিয়ন ইউরো। অবশ্য এর পরও বিদেশী ক্লাবগুলো থেকে এ মৌসুমে গতবারের চেয়ে বেশি আয় করেছে লা লিগা। গতবারের ৫৫১ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ইউরোর বিপরীতে এবারের আয় ৫৫৫ দশমিক শূন্য ৫ মিলিয়ন ইউরো।
স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ এ মৌসুমে খেলোয়াড় বিক্রি করে পকেটে পুরেছে ১৩৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরো। যেখানে এক ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকেই জুভেন্টাসের কাছে বিক্রি করেছে ১১৭ মিলিয়ন ইউরোতে। এছাড়া তারা ওমাস মাসকারেলকে বিক্রি করেছে ১০ মিলিয়ন ইউরোতে, টেরোকে ছেড়েছে ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরোতে, লেইনহার্টের জন্য রিয়াল পেয়েছে ২ মিলিয়ন ইউরো এবং ডি টমাসকে লোনে পাঠিয়েছে মাত্র ১ মিলিয়ন ইউরোতে। তবে রিয়ালের বিক্রি করা অর্থের চেয়ে কেনার অংকটাই বড়। যেখানে তারা খরচ করেছে ১৪৬ মিলিয়ন ইউরো। ভিনিসিয়াসকে কিনতে রিয়ালের খরচ হয়েছে ৫৪ মিলিয়ন ইউরো। এ মৌসুমে রিয়ালের কেনা সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হলেন ভিনিসিয়াস। ৩৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে রিয়াল কিনেছে থিবো কোর্তোয়াকে। এছাড়া অদ্রিওজোলার জন্য রিয়াল দিয়েছে ৩০ মিলিয়ন ইউরো, মারিয়ানোর জন্য ২১ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরো এবং লুনিনকে পেতে রিয়ালের খরচ করতে হয়েছে ৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরো। তবে এ অংক ছাড়িয়ে গেছে বিক্রি করে পাওয়া অর্থের পরিমাণকে।
একই অবস্থা বার্সেলোনার। তবে বার্সা যে পরিমাণ কেনার জন্য খরচ করেছে, বিক্রি করে পেয়েছে অনেক কম। দলবদলে বার্সা ১২৫ দশমিক ৯০ মিলিয়ন ইউরো ব্যয় করে কিনেছে ম্যালকম, লেনগেট, আর্থার ও ভিদালকে; যা গত মৌসুমে ব্যয় করা ২০৭ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ইউরোর চেয়ে অনেক কম। এবার তারা খেলোয়াড় বিক্রি করেছে ৮২ দশমিক ২ মিলিয়ন ইউরোর। ফলে বার্সার এবার নেগেটিভ ব্যালান্স ৪৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন ইউরো। যেখানে গত বছর তাদের পজিটিভ ব্যালান্স ছিল ১৮ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ইউরো।
গত বছরের চেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেছে ভ্যালেন্সিয়াও। এবার তারা খরচ করেছে ১২৫ মিলিয়ন ইউরো। তারা এবার দলে ভিড়িয়েছে গুয়েদেস, ওয়াস ও গ্যামেইরোর মতো তারকাদের। সেসঙ্গে চেলসি থেকে ধারে নিয়ে এসেছে বেলজিয়ামের মিচি বাতসুায়ই এবং ডেনিশ চেরিশভকে। তবে তারা খেলোয়াড় বিক্রি করে আয় করেছে ৪০ মিলিয়ন ইউরো। যেখানে নেগেটিভ ব্যালান্স দাঁড়ায় ৮৫ মিলিয়ন ইউরো।
দলবদলে এবার চমক নিয়ে হাজির হয়েছে অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ। দলটির সবচেয়ে বড় সাফল্য দলের অন্যতম সেরা তারকা আতোঁয়া গ্রিজম্যানকে রেখে দিতে পারা। একপর্যায়ে অ্যাতলেটিকো ছেড়ে গ্রিজম্যানের বার্সায় যাওয়া মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রিজম্যান অ্যাতলেটিকোতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পাশাপাশি গত গ্রীষ্মের দলবদলে ফিফার নিষেধাজ্ঞার কারণে দলে খেলোয়াড় আনতে পারেনি অ্যাতলেটিকো। সে সময় ভিটোলোকে ৩৬ মিলিয়ন ইউরোতে কিনে তাকে আবার লোনে পাঠাতে হয় লাস পালমাসের কাছে। নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর জানুয়ারিতে মাঠে নামার সুযোগ হয় তার। এ মৌসুমে তাই দল পুনর্গঠনে ১২৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ইউরো খরচ করেছে ডিয়েগো সিমিওনের দল। যেখানে তারা খেলোয়াড় বিক্রি করে পেয়েছে ৪৫ মিলিয়ন ইউরো। গত গ্রীষ্মে কোনো খেলোয়াড়কে দলে আনতে না পারার কারণেই মূলত এবার বেশি অর্থ খরচ করেছে অ্যাতলেটিকো। এ মৌসুমে অ্যাতলেটিকো যেসব তারকাকে দলে ভিড়িয়েছে, তাদের মধ্যে থমাস লেমার, রদ্রি, নিকোলা কালিনিচ, সান্তিয়াগো আরিয়াস ও জনি কাস্ত্রো উল্লেখযোগ্য।
কেবল বড় ক্লাবগুলোয় নয়। লা লিগায় ছোট ক্লাবগুলোও এবার তুলনামূলক বেশি অর্থ খরচ করেছে। যেমন— লেগানেসের মতো ক্লাব এবার গত গ্রীষ্মের চেয়ে ৭ দশমিক ৮ মিলিয়ন ইউরো বেশি খরচ করেছে।
সব লিগ মিলিয়ে অবশ্য হিসাব করলে লা লিগার অবস্থান ৩ নম্বরে। প্রিমিয়ার লিগের ২০ ক্লাব মিলিয়ে এ মৌসুমে খরচ করেছে ১ হাজার ৪১৯ মিলিয়ন ইউরো। এরপর আসে সিরি এ’র নাম। যারা খরচ করেছে ১ হাজার ১৪২ মিলিয়ন ইউরো। ৩ নম্বরে থাকা লা লিগার খরচ ৮৯ লাখ ৩ হাজার ৬২০ মিলিয়ন ইউরো, লিগ ওয়ানের খরচ ৫৬ লাখ ৩ হাজার ৯৩৬ মিলিয়ন ইউরো এবং সর্বশেষ অবস্থানে থাকা বুন্দেসলিগার খরচ ৪৯ লাখ ৫ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ইউরো।
মার্কা