কক্সবাংলা ডটকম(২৯ অক্টোবর) :: ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে পাংকাল পিনাংয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা বিধ্বস্ত বিমানটির ১৮৯ জন আরোহীর মধ্যে এখনও কাউকে উদ্ধার করা যায়নি। তবে সাগরে ভেসে উঠছে দেহাবশেষ।১৮৯ জন যাত্রীবোঝাই এই বিমান বিপর্যের পর হতাহতের সংখ্যা ঠিক কত বা আদৌ কেউ বেঁচে রয়েছেন কি না, তা সঠিকভাবে বলতে পারা যাচ্ছে না। এই মুহূর্তে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার কাজে নামা হয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
সোমবার ইন্দোনেশিয়ায় ১৮৯ জন আরোহী নিয়ে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। লায়ন এয়ারের জেটি-৬১০ ফ্লাইটটি জাকার্তা বিমানবন্দর থেকে দেশটির দ্বীপ শহর পাঙকাল পিনাঙয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। কিন্তু উড্ডয়নের কয়েক মিনিটের মাথায় সাগর পাড়ি দেওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণকক্ষের সঙ্গে এর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থল থেকে বিমান যাত্রীদের বিভিন্ন জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া আশেপাশের এলাকায় এসব সামগ্রী ছড়িয়ে পড়ার খবরও পাওয়া গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সমুদ্রের ২০ থেকে ৩০ মিটার গভীরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, লায়ন এয়ার ফ্লাইটের ওই বিমানটি প্রায় নতুন ছিলো। তারা এখনও বেঁচে থাকা কারও সন্ধান পাননি। পাওয়ার কোনও সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। তবে উপকূল থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে দেহাবশেষ উদ্ধার করেছেন তারা।
এক টুইটার বার্তায় ইন্দোনেশিয়ার ন্যাশনাল সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ এজেন্সি জানিয়েছে, যাত্রীদের বিভিন্ন ব্যবহার্য সামগ্রী সাগরে পাওয়া গেছে। এর মধ্যে পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্সও রয়েছে।
সংস্থার প্রধান মুহাম্মদ সাইয়াগু বলেছেন, এই ঘটনায় কেউ জীবিত আছে কিনা আমরা নিশ্চিত নই। আশা করছি, প্রার্থনা করছি, কিন্তু নিশ্চিত না।
লায়ন এয়ারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিধ্বস্ত বিমানটির পাইলট ও কো-পাইলটের ১১ হাজার ঘণ্টারও বেশি উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা রয়েছে। এছাড়া বিমানটিতে শিক্ষানবীশ ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন।
ইন্দোনেশিয়ার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর বেশ কয়েকটি ছবি অনলাইনে প্রকাশ করেছে। সেই ছবিতে ভাঙা স্মার্টফোন, বই, ব্যাগ ইত্যাদি দেখা যাচ্ছে। তবে এই বিমান বিপর্যয়ের কারণ এখনও সঠিকভাবে জানা যায়নি। জাতীয় অনুসন্ধান এবং উদ্ধার সংস্থার সহ-প্রধান নুগ্রহ বুদি উরিয়ান্টো জানিয়েছেন, সেনা, পুলিশ এবং স্থানীয় মত্স্যজীবী-সহ মোট ৩০০ জন এই মুহূর্তে উদ্ধারকার্যে হাত দিয়েছেন এবং এখনও পর্যন্ত কোনও দেহ উদ্ধার হয়নি। তবে কিছু আইডি কার্ড, যাত্রীদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র এবং বিমানের ভাঙা অংশ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
উল্লেখ্য, লায়ন এয়ার ইন্দোনেশিয়ার নবীনতম এবং বৃহত্তম উড়ান সংস্থা। অ্যাভিয়েশন ওয়েবসাইট ফ্লাইটর্যাডার২৪-এর দাবি, দুর্ঘটনাগ্রস্থ বিমানটি একেবারে নতুন বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমান। চলতি বছর অগস্টের মাঝামাঝি এটি হাতে পায় লায়ন এয়ার। এরপর মাত্র কয়েকদিন হল এই বিমানটি বাণিজ্যিকভাবে উড়তে শুরু করেছিল। আর তারপরই এই ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। বোয়িং-এর মুখপাত্র পল লুইস জানিয়েছেন, “আমরা পরিস্থিতি খুঁটিয়ে দেখছি”, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর ১৬২ জন আরোহী নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরগামী এয়ার এশিয়ার একটি উড়োজাহাজ জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয়।
সোমবার সকালে ইন্দোনেশিয় সাগরে ভেঙে পড়া লায়ন এয়ার ফ্লাইটটি চালাচ্ছিলেন এক ভারতীয়, এমনটাই জানা যাচ্ছে। রানওয়ে ছাড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই উধাও হয়ে যাওয়া এই বিমানটি চালাচ্ছিলেন দিল্লির ভাব্য সুনেজা।
সুনেজার লিঙ্কড ইন প্রোফাইল অনুযায়ী, তিনি নয়া দিল্লির বাসিন্দা এবং ২০১১ সাল থেকে লায়ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যুক্ত। এই সংস্থায় যোগ দেওয়ার আগে তিন মাস এমিরিটাসে ট্রেনি পাইলট হিসাবেও কাজ করেছেন সুনেজা। আরও জানা যাচ্ছে, ২০০৯ সালে Bel Air International থেকে তিনি পাইলটের লাইসেন্স পেয়েছিলেন।
এদিকে, লায়ন এয়ারের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সুনেজার ৬ হাজার ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং দুর্ঘটনাগ্রস্থ বিমানটির সহকারী পাইলটেরও ৫ হাজার ঘণ্টা বিমান চালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
Posted ৫:১২ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta