কক্সবাংলা ডটকম(৩১ জানুয়ারি) :: সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যে কোনো নির্বাচনের তুলনায় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের প্রচার ছিল উৎসবমুখর। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা সব মহলের। একই সঙ্গে প্রথমবারের মতো পুরো দুই সিটির ভোটগ্রহণ করা হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম)।
গত এক বছরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে নানা অনিয়মের খবরে সমালোচনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব নির্বাচনে কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট হয়েছিল। এর পর প্রথমবারের মতো পুরো নির্বাচন ইভিএমে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান ইসির জন্য অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সংসদ নির্বাচনসহ গত এক বছরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো বিতর্কমুক্ত ছিল না। এবারের নির্বাচন হচ্ছে শুধু রাজধানীতে, এখানে অনেক মিডিয়া থাকবে, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবেন। এ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে না হলে ফের সমালোচনার মুখে পড়বে কমিশন।
ব্যালটবিহীন ভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিশন তো বলছে তাদের সব প্রস্তুতি আছে। দেখা যাক, তারা কতটুকু সফল ও বিভ্রাটমুক্ত ভোট উপহার দিতে পারে।
ইসি কর্মকর্তারা জনান, এর আগে অনুষ্ঠিত সংসদ ও উপজেলা নির্বাচনে জোর করে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সে ভরার অভিযোগ এসেছে। এবার ইভিএমে সেই সুযোগ নেই। কেউ এবারও পেশিশক্তি দেখাতে চাইলে ভোট কারচুপি করতে পারবে না, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সহযোগিতা ছাড়া। কারণ ভোট হবে ইভিএমে। এখানে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে ৩শ আসনের মধ্যে মাত্র ছয়টিতে ইভিএমে ভোট হলেও এবারই প্রথম ঢাকার দুই সিটিতে শতভাগ ভোটগ্রহণ করা হবে ইভিএমে। শুরু থেকেই এ পদ্ধতির বিরোধিতা করে তা ব্যবহার না করতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে বিএনপি। কিন্তু ইভিএমে ভোট সুষ্ঠু হবেÑ এমন বিশ্বাসে অটল ইসি। ভোটের ফলের পরই ইভিএম পদ্ধতির ভালো-মন্দের দিকটি আরও ভালোভাবে জানা যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ইসি সূত্র জানায়, দুই সিটিতে ভোটের জন্য ৩৫ হাজার ইভিএম প্রস্তুত। কারিগরি সহায়তার জন্য প্রতি কেন্দ্রে সশস্ত্র বাহিনীর দুজন সদস্য থাকবেন। কারিগরি ব্যবস্থাপনার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর পাঁচ হাজার ২৮০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
গত সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে ইভিএমের কেন্দ্রে ভোট পড়ে গড়ে ৫১ শতাংশ। আর গত ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচনে ২৩ শতাংশ ভোটার ইভিএমে ভোট দিয়েছেন। গত ২২ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ইসির আইনশৃঙ্খলা সভায় বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যে ২৯৪টি আসনে ব্যালট পেপারে ভোট হয়েছে, সেখানে ভোটের হার ছিল ৮০ শতাংশ। কিন্তু ইভিএমের কেন্দ্রগুলোয় ভোটের হার ছিল মাত্র ৫১ শতাংশ। এর কারণ ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মনে ভীতি আছে। অন্যদিকে ইভিএমে জাল ভোট প্রদান প্রতিহত করা এক বিরাট সমস্যা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্মিলিতভাবে গোপন কক্ষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন এ কমিশনার।
ইসির হিসাব অনুযায়ী, দুই সিটিতে ভোটার ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ২৮ লাখ ৪৩ হাজার আটজন এবং নারী ২৬ লাখ ২০ হাজার ৪৫৯ জন। ঢাকা উত্তরে ভোটার ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩। তাদের মধ্যে পুরুষ ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭ এবং নারী ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬। দক্ষিণে ভোটার ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৯৪ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪১ এবং নারী ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ জন। দুই সিটিতে ২ হাজার ৪৬৮টি ভোটকেন্দ্র এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৪৫টি। উত্তর সিটিতে ১ হাজার ৩১৮টি ভোটকেন্দ্র ও ৭ হাজার ৮৫৭টি ভোটকক্ষ এবং দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র ও ৬ হাজার ৫৮৮টি ভোটকক্ষ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটারদের একটি বড় অংশই ইভিএম বিষয়ে সচেতন নয়। তারা ইভিএমে সঠিকভাবে ভোট দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। মানুষ যেন ইভিএমে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, সে বিষয়টি ইসিকেই নিশ্চিত করতে হবে।
ইসি জানায়, ইভিএমে ভোট হলে কেন্দ্র দখল, ব্যালট পেপার ছিনতাই, জাল ভোটসহ অন্যান্য অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়ানো সম্ভব। এ জন্য নির্বাচনে প্রযুক্তির সুফল কাজে লাগাতেই তারা ইভিএম নিয়ে এসেছেন। কিন্তু বিএনপির দাবি, এ মেশিন ব্যবহার করে জনগণের ভোটাধিকার হরণের নীলনকশা আঁকা হয়েছে। আর ইভিএমের পক্ষে থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা বরাবরই বলে আসছেন, বিএনপি সারাজীবনই প্রযুক্তির বিরোধিতা করেছে। পরাজয়ের ভয়ে তারা সহজ ও স্বচ্ছ উপায়ে ভোট চায় না।
আগের ইভিএমে নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার হাতে ওভাররাইট করার ক্ষমতা ছিল ২৫ ভাগ ভোট। অর্থাৎ ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে নির্বাচন কর্মকর্তা তার নিজের ফিঙ্গার প্রিন্ট ব্যবহার করে ব্যালট ওপেন করতে পারবেন। কিন্তু ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে এ সুযোগ থাকছে মাত্র ১ শতাংশ।
Posted ২:৫৬ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta