কক্সবাংলা ডটকম :: ঋণ প্রদানে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডে (এফএসআইবিএল) পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক আবুল কালামকে আইবিবিএলে ও পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের পরিচালক মোতাসিম বিল্লাহকে এফএসআইবিএলে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
আজ সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত নেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক পর্যবেক্ষক নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মেজবাউল হক বলেন, ‘সম্প্রতি গণমাধ্যমে দুই ইসলামি ব্যাংকের বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। এই কারণে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ সভার সব কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবেন। আর তাঁরা পর্ষদ সভার আলোচ্যসূচি, আলোচনা ও সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রয়োজনীয় মতামত দেবেন এবং তা বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করবেন।’
পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন কেন পড়ল— এমন প্রশ্নের জবাবে মেজবাউল হক বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পর বাংলাদেশ ব্যাংক অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যা এখনো চলমান। বর্তমানে পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবর্তনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সম্প্রতি গণমাধ্যমের সংবাদের কারণে তিন ইসলামী ব্যাংক নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণেও বিষয়টি উঠে এসেছে। তাই ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। কারণ বর্তমান পর্ষদের ওপর আস্থা না পেয়ে অনেক আমানতকারী এসব ব্যাংক থেকে অর্থ তুলে নিচ্ছে।
সূত্র জানায়, নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক থেকে ৭ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ও অবশিষ্ট অর্থ সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়। যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে এসব ভুতুড়ে ঋণ নেওয়া হয় তার মধ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ ইস্যু করা অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নামসর্বস্ব কোম্পানিকে ইসলামী ব্যাংক ঋণ দিয়ে আলোচনায় এসেছে।
ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৩৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের ঘটনা অনুসন্ধানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গত ৭ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘ইসলামি শরিয়াভিত্তিক তিনটি ব্যাংকের ঋণের অনিয়মের বিষয়ে কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার পর এ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
এদিকে গত ৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল), সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এফএসআইবিএল) ঋণ বিতরণে অনিয়মের প্রতিবেদন তদন্তের নির্দেশ দেন।
হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত বিধি জারি করে ঋণ নিয়ে লেনদেন করা কর্মকর্তাদের নাম ও ঠিকানা জমা দেওয়ার জন্যও অভিযুক্ত ব্যাংকগুলোর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) ৫ এপ্রিলের মধ্যে তাদের ফলাফল জমা দিতে বলা হয়েছে।
হাইকোর্ট বেঞ্চ এস আলম গ্রুপপের কাছে আইবিবিএল থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়ার ওপর করা প্রতিবেদনগুলোরর ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
Posted ২:১৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২২
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta