বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ঈদগাঁওতে সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম শুরু

মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯
180 ভিউ
ঈদগাঁওতে সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম শুরু

মোঃ রেজাউল করিম,ঈদগাঁও(১৬ জুলাই) :: কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে সম্পূর্ণ নতুন ও ব্যতিক্রমধর্মী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়েছে। সমাজের অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া শিশু-কিশোরদের জীবনমান উন্নয়নে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বিশেষায়িত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম হচ্ছে ‘সমন্বিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম’, কক্সবাজার।প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করছে জেলা সমাজসেবা বিভাগ, কক্সবাজার। জেলায় এ ধরনের একটি প্রতিষ্টান বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর।

সরেজমিন পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শুধুমাত্র দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন ও বিনোদনের জন্য কার্যক্রম শুরু করা এ প্রতিষ্ঠানের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অর্থায়নে ঈদগাঁওতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ৬ তলা ভিত্তি সম্পন্ন একটি অত্যাধুনিক ভবন। যার দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে কয়েক বছর আগে।

ভবন নির্মাণ শেষ হলেও এতদিন এ ভবনটিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়নি। তবে বিগত জানুয়ারি থেকে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ভর্তি ফরম বিতরণ শুরু করে। চলতি জুলাই মাস থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে কার্যক্রম। প্রতিষ্টানটির অফিস সহায়ক শ্যামল কান্তি পাল জানান, ৬ থেকে ১৩ বছর বয়সি আটজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মোট সিট সংখ্যা ১০ টি। ভর্তিকৃত সকলেই সমাজসেবা বিভাগ কর্তৃক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কার্ড প্রাপ্ত এবং নিবন্ধিত। সমাজসেবা বিভাগের পরিভাষায় ভর্তিকৃতদের নিবাসী বলা হয়।

ভর্তিকৃত নিবাসীরা হচ্ছে ঈদগাঁও দক্ষিণ মাইজ পাড়ার দুইজন, দরগাহ পাড়ার একজন, মেহের ঘোনার একজন, দক্ষিণ মেহের ঘোনার একজন, চান্দের ঘোনার একজন এবং চকরিয়া পহরচাঁদায় একজন। নিবাসীদের নাম হচ্ছে মোঃ বোরহান উদ্দিন, মোঃ আরহান উদ্দিন, মোঃ রবিউল হুসাইন জিসাত, শয়ন মল্লিক, মোস্তফা কায়সার জিহাদ, রাশেদুল ইসলাম, আবসার মিয়া ও রাকিবুল ইসলাম। দেখা গেছে, তিন তলা বিশিষ্ট ভবনের প্রথম তলায় রয়েছে রিসোর্স শিক্ষক ও হাউস প্যান্টের আলাদা কক্ষ, স্টোর রুম, রান্নাঘর, দুইটি গোসলখানা, একটি করে বাংলা ও ইংলিশ কমেট বাথরুম।

দ্বিতীয় তলায় রয়েছে দুইটি নিবাসী কক্ষ। যার একটিতে ৬ টি স্টিলের খাট ও অন্যটিতে চারটি স্টিলের খাট রয়েছে। আরো রয়েছে ডাইনিং রুম, দুইটি গোসলখানা এবং একটি করে বাংলা ও ইংলিশ কমেট বাথরুম। নিবাসী কক্ষে ১০ জন নিবাসীর জন্য সমপরিমাণ স্টিলের পড়ার টেবিল ও চেয়ার। নিবাসী শিক্ষার্থীদের জন্য আরও রয়েছে বালিশ, লেপ তোষক, চাদর, বিছানাপত্র ও স্টিলের আলনা।অফিস সহায়ক জানালেন, চলতি মাসের মধ্যেই একটি ডিপ ফ্রিজ ও ৩২ ইঞ্চি একটি রঙ্গিন টিভি আনা হচ্ছে।

নিজস্ব অর্থায়নে এসব ব্যবস্থা করেছে জেলা সমাজসেবা অফিস। নিবাসীরা জানায়, প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রতিদিন তাদেরকে তিন বেলা ভাত ও দুই বেলা নাস্তা দেয়া হয়। ভাতের সাথে কখনো মুরগি, কখনো চিংড়ি মাছ, কখনো ডিম, আবার কখনো সবজি বা শাক দেয়া হয়। প্রতি বেলায় থাকে ডাল। এসব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষাদানের মাধ্যম হচ্ছে ব্রেইল শিক্ষা পদ্ধতি। তবে এ পদ্ধতির বই পত্র সংগ্রহ এবং রিসোর্স শিক্ষক এখনো নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে কক্সবাজার সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসে কর্মরত কারিগরী প্রশিক্ষক শিমুল শর্মাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে সপ্তাহে তিন দিন তথা রবি, সোম ও বৃহস্পতিবার এ প্রতিষ্ঠানের নিবাসীদের শিক্ষাদান ও দেখাশোনার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

আরো জানা যায়, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে অত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন হাউজ প্যারেন্ট কাম শিক্ষক, একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং একজন বাবুর্চি নিয়োগের জন্য চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে। এদিকে ভর্তিকৃত নিবাসীদের অভিভাবকরা প্রায় সময় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কয়েকদিন পরপর এসে তাদের সন্তানদের খোঁজ খবর নেন বলে জানা গেছে।প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও কার্যক্রমে সন্তুষ্ট বলে জানালেন ঈদগাঁও দক্ষিণ মাইজ পাড়া থেকে ভর্তি হওয়া নিবাসীর পিতা মোস্তাক আহমদ। তিনি বলেন, দেখে শুনেই তারা শিশুদের এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করিয়েছেন।

কর্মরত অফিস সহায়ক শ্যামল কান্তি পাল জানান, তিনি ২০১৫ সালে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদানের পর থেকে এর সার্বিক দেখভাল করে আসছেন। ছাদের উপর তার উদ্যোগে বোতাম, গেজা, মধু, জবা সহ বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। যা থেকে বর্তমানে হরেক রকম ফুল ফুটছে। প্রতিষ্ঠান আঙ্গিনায় তথা সামনের উঠানে শসা, লেবু, পেঁপে, ঝিঙ্গা সহ শাকসবজি ও ফলের গাছ রোপন করেছেন। নিবাসীদের দেখাশুনা, খাওয়া দাওয়া করানো, গোসল- আসল, খেলাধুলা, বিনোদন ব্যবস্থা সহ সবকিছুর দেখ ভালো তাকেই করতে হচ্ছে। এ সমস্ত কাজে তাকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন নিজের স্ত্রী এবং তার স্কুল পড়ুয়া মেয়ে মনি।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ তৈয়ব আলী জানান, নতুন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবন্ধীদের জীবন মান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে সমাজের অবহেলিত ও দরিদ্র পরিবারের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষা দানের মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ জীবন গঠন সম্ভব হবে। তার মতে, নানা প্রতিবন্ধীদের মাঝে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা একশ্রেণীর। তাদেরকে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত করা সম্ভব নয়। কক্সবাজার জেলায় প্রথমবারের মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শিক্ষিত করে তুলতে এই প্রতিষ্ঠান বিরাট ভূমিকা রাখবে। যার মাধ্যমে তারা স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারবে। জেলা সমাজসেবা বিভাগের সহকারি পরিচালক শফি উদ্দিন জানান, প্রতিষ্ঠানটি কক্সবাজারবাসীর জন্য একটি বড় অর্জন।

কক্সবাজারে এ ধরনের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হওয়ায় তিনি বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেন। বলেন, গত ১৪ জুলাই সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাননীয় মহাপরিচালক কক্সবাজার সফরে আসলে তাকে অত্র প্রতিবন্ধী প্রতিষ্ঠানের জন্য রিসোর্স শিক্ষকের পদ সৃষ্টি, জনবল বাড়ানো এবং নিবাসীদের আসন বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবনাও সুপারিশ সহকারে চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি ভবিষ্যতে এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থানীয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের সেবা কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি করা যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক প্রীতম কুমার চৌধুরী জানান, মহাপরিচালকের সাথে কথা বলে এ কার্যক্রমের জন্য সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে একজন কর্মকর্তাকে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভর্তিকৃত নিবাসীরা পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। তবে তাদের সকলের খাওয়া দাওয়া, নাস্তা ও চিকিৎসা খরচ সরকার বহন করবে। তিনি এ ভবনটি ২ বছর পূর্বে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়ে বলেন, পর্যায়ক্রমে এর উন্নয়ন করা হবে।

উল্লেখ্য, বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের একান্ত ইচ্ছাই ঈদগাঁওতে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ঈদগাঁওতে এসে সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করে তাতে প্রতিষ্ঠানটি বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় অনুমোদন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছিলেন। পরিদর্শনকালে তার সাথে ঈদগাঁওতে এসেছিলেন কক্সবাজার জেলা সমাজসেবা অফিসের তৎকালীন উপ-পরিচালক প্রয়াত সুধীর চন্দ্র শুক্লা দাস। মহাজোট সরকারের আমলে এসে প্রতিষ্ঠানটি তার স্বপ্নযাত্রা শুরু করেছে।

180 ভিউ

Posted ৯:২০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com