কক্সবাংলা ডটকম(২৬ জুন) :: সু-প্রাচীনকাল থেকেই পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান হিসেবে গোলাপ জলের ব্যবহার হয়ে আসছে। মিসরীয় অঞ্চলে প্রথম গোলাপ জলের উৎপত্তি বলে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন। বোতলভর্তি গোলাপ জল কিনতে কিনতে অনেকেই বিরক্ত। দেখা যায় অনেক কাজেই গোলাপ ফুল কেনা হয়ে থাকে। কেউ উপহার দিল, কিংবা প্রিয়জনের সাথে বাইরে বের হলে কয়েকটি গোলাপ চুলে গুঁজে দেন অনেকেই। আবার একটু শুকিয়ে গেলে ফেলেও দেন। এগুলো না ফেলে, কিংবা চাইলে নিজেরাই ঘরে চমৎকার গোলাপ জল বানিয়ে রূপচর্চা করতে পারেন।
ঘরেই বানাতে পারেন গোলাপজল
প্রথমে গোলাপের পাঁপড়িগুলি ছিঁড়ে নিন । এবার চুলায় পরিমানমত পানি ফুটতে দিন, পানি ফুটে গেলে তাতে গোলাপের পাঁপড়িগুলি ছেড়ে দিন এবং চুলা বন্ধ করে ডাকনা দিয়ে ঢেকে রাখুন প্রায় ১৫-২০ মিনিট। এর পর ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে পানি বের করে নিলেই গোলাপজল তৈরি হয়ে গেল। বোতল বা এয়ার টাইট বয়াম এ সংরক্ষণ করুন। চাইলে ফ্রিজে অথবা ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায়ও রাখতে পারেন।
রুক্ষ-শুষ্ক চুলের সমাধান
অনেকেই চুল নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকেন, কারণ কারো চুল সিল্কি আবার কারো রুক্ষ। তারা অনায়াসেই গোলাপজল ব্যবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে একটি ছোট বাটিতে গোলাপ জলের সাথে সামান্য গ্লিসারিন মিশিয়ে তার মধ্যে তুলা ভিজিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর্যন্ত মাথার চুলে ম্যাসাজ করুন তার পর ৩০ মিনিট ভাবেই রেখে পরে শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল ঝকঝকে সুন্দর থাকবে।
ফেসিয়াল ক্লিনজার
যারা এখনো পার্লারে যেতে পারেননি তাদের চিন্তার কারণ নেই, কারণ ফেসওয়াস দিয়ে ভালো করে মুখ পরিস্কার করার পর একটি ছোট বাটিতে ১ টেবিল চামচ গোলাপজল নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে নিন। তাছাড়া গোলাপজল যে কোন ধরনের ত্বকের জন্য মাননসই।
ক্লান্ত চোখের স্বস্তি
অনেকক্ষণ একনাগাড়ে কম্পিউটার মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বা কাজ করতে করতে চোখ ব্যথা হয়, জ্বালাপোড়া করে বা ক্লান্তিভাব চলে আসে। সেক্ষেত্রে ঠাণ্ডা গোলাপজলে তুলা ভিজিয়ে চোখে দিলে স্বস্তি পাওয়া যাবে এবং চোখের ফোলাভাবও কমে যাবে।
গরমের দিনে ত্বককে সতেজ ও কোমল রাখে
গরমের তীব্রতা যেভাবে বাড়ছে তাতে ঈদের দিন বাইরে বের হবার আগে সাথে করে অবশ্যই গোলাপজল নিয়ে যাবেন। কারণ গোলাপজল ত্বককে প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ও পুষ্টি দান করে। আর সাথে চেহারাটাও সতেজ দেখায়। সারাদিন সুযোগ পেলেই একবার গোলাপজলে মুখটা ধুয়ে নিতে পারেন।
চুলের কন্ডিশনার হিসেবে গোলাপজল
চুলে শ্যাম্পু করার পর এক মগ পানিতে এক কাপ গোলাপজল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। গোলাপজল দেয়ার পর চুলে পানি লাগাবেন না। এভাবেই চুল মুছে শুকিয়ে ফেলুন। চুলকে গভীর থেকে কন্ডিশনিং এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে গোলাপজলের ভূমিকা অনেক ।
ফেশিয়াল টোনার হিসেবে কাজ করে
ফ্রিজে রাখা ঠাণ্ডা গোলাপজলে তুলা ভিজিয়ে পুরো মুখে লাগান। গোলাপজল মুখের লোমকূপ বন্ধ করতে সাহায্য করে যার ফলে মুখে ব্রণের সমস্যা থাকে না। তাই চাইলে অনেকেই নিয়মিত টোনার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন গোলাপ জল।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে ত্বককে দেয় গোলাপি আভা
একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ বেসন আর তার সাথে গোলাপজল ও লেবুর রস মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এই পেস্টটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে গেছে।
পুরো শরীরকে দিন সতেজতা ও স্নিগ্ধতা
আপনি সাধারণত যে লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করেন তার সাথে সামান্য গোলাপজল মিশিয়ে শরীরে লাগাতে পারেন। এছাড়াও গোলাপজল দিয়ে গোসল করলে এর ঘ্রাণেও আপনি সতেজ অনুভব করবেন।
গোলাপজলে ঘুচবে ব্রণের সমস্যাও
গোলাপজলে আছে ভিটামিন সি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ব্রণের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে আপনার ত্বককে রক্ষা করে। সেক্ষেত্রে একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস আর ১ টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে তা পুরো মুখে দিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পানির ঝাপটায় মুখ ধুয়ে ফেলুন। মুলতানি মাটির সাথে গোলাপজল ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার লোমকূপ পরিষ্কার হবে, মুখের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর হবে এবং ব্রণের সমস্যা কমে যাবে।
ঈদে অনেকেই ভারী মেকআপ করে থাকে আর মেকআপ তুলতে গোলাপজলের চাইতে ভালো কিছু আর হয় না। তাই চটজলদি মেকআপ তুলতে একটি বাটিতে গোলাপজল নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেল মিশিয়ে তুলা ভিজিয়ে মেকআপ তুলে ফেলুন। এই মিশ্রণটি খুব সুন্দরভাবে মেকআপ তুলতে সাহায্য করে এবং ত্বকের গভীর থেকে পুষ্টি যোগায়।
বলিরেখা ও বয়সের ছাপ দূর করতে গোলাপ জল
গোলাপজল নিয়মিত ব্যবহারে চেহারায় বয়সের ছাপ সহজে পড়বে না। কারণ এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন এ-এর গুণ যা বয়সের সাথে সাথে বলিরেখা, চোখের নিচ ফুলে যাওয়া ও বয়সের ছাপের সমস্যাটি এড়াতে বেশ কার্যকরী।
Posted ৮:৫৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৬ জুন ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta