দীপন বিশ^াস :: ঈদ ও বাংলা নববর্ষের টানা ছুটিতে এবার কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে এসেছেন ৪ লাখেরও বেশি পর্যটক। একটানা ছুটি থাকাতে ঘুরতে এসেছেন তারা। ঈদের দিন কিছুটা কম থাকলেও শুক্রবার সকাল থেকে বাড়তে শুরু করে পর্যটকের সংখ্যা যা সোমবার পর্যন্ত লক্ষ্য করা গেছে।
সোমবার এই সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এতে জমে উঠেছে কক্সবাজারে পর্যটককেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য। তবে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনে তাদের হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজে জায়গা দিতে বিপাকে পড়েছেন মালিকরা।
সবগুলো হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউজ এবং কটেজের কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে যাওয়ায় অনেকে ভোগান্তিতে পড়েছেন বলে শোনা গেছে। কেউ কেউ একাধিক হোটেল ঘুরে কক্ষ না পেয়ে ফিরে গেছেন। অনেকে হোটেলে কক্ষ না পেয়ে সৈকতে রাত কাটাচ্ছেন।
আবার অনেকেই মহেশখালীর ঐতিহ্যবাহী আদিনাথ মন্দির দেখতে গেছেন। কেউ কেউ মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় ঘুরেছেন। তবে ভেতরে ঢোকার অনুমতি না থাকায় সমুদ্র সৈকত থেকে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র দেখছেন তারা।
এছাড়া উখিয়ার ইনানী, পাটুয়ারটেক, টেকনাফের সাবরাং ট্যুরিজম স্পট, শামলাপুর নানা রঙের সাম্পানের সৈকত, জাহাজপুরা শতবর্ষী গর্জন ট্যুরিজম, রামুর বৌদ্ধ বিহারসহ নানা স্পটে ঘুরেছেন পর্যটকরা।
সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারে পর্যটকের রাতযাপনের জন্য হোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউজ ও কটেজ আছে সাড়ে চারশতাধিক। এসবে দৈনিক ধারণক্ষমতা এক লাখ ২৮ হাজার। গত শুক্রবার, শনিবার, রোববার ও সোমবার চারদিনে পাঁচ লক্ষাধিক পর্যটক আসায় হোটেল-রিসোর্টে কক্ষ পাননি বেশিরভাগ। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের কারণে ঈদের আগে পর্যটক শূন্য ছিল কক্সবাজার। ঈদের প্রথম দিনেও তেমন কোনো জনসমাগম ছিল না। কিন্তু ঈদের দ্বিতীয়দিন শুক্রবার সকাল থেকে পর্যটন এলাকায় জনসমাগম বেড়েছে।
হোটেল-মোটেলের কক্ষ প্রায়ই ৯০ শতাংশ বুকিং। কোন হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পাইনি। যদি এমন অভিযোগ উঠে তবে ওই হোটেল আমাদের সমিতির অন্তর্ভুক্ত হলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গাজীপুর থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা সরকারি কর্মকর্তা সাইমুন আল মারওয়ান বলেন, ‘কক্সবাজার যতবার আসি না কেন, এর সৌন্দর্য প্রতিবারই মুগ্ধ করে। মন খারাপ থাকলে কখনো একা একা কখনোবা পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি। এবার ঈদ ও নববর্ষে টানা ছুটি পেয়েছি তাই আব্বা-আম্মা, স্ত্রী-সন্তান ও বড় ভাইয়ের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কক্সবাজারে এলাম।’
ইনানীর পাটোয়ারটেক পর্যটন স্পটে বেড়াতে আসা ফারুক হোসেন বলেন, ‘কক্সবাজার কথা উঠতেই সমুদ্রসৈকত ছাড়া কিছু কল্পনা করতে পারে না লোকজন। অথচ কক্সবাজারে সৈকত ছাড়াও অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে। সেখানেই ঘুরছি আমরা। সুবজ সুপারি বাগান আর সুুউচ্চ পাহাড় দেখছি।’
গতকাল সোমবার বিকেলে সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলী, লাবণী ও কবিতা চত্ত্বর পয়েন্টে দেখা গেছে, প্রচুর পর্যটকের ঢল। কবিতা চত্ত্বর থেকে কলাতলি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সৈকতে হাজার হাজার পর্যটক। উত্তর দিকে সিগাল থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটারে ভিড় করেছেন আরও কয়েক হাজার পর্যটক। এর মধ্যে অনেকে সৈকতে গোসলে নেমেছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দে মেতেছেন অনেকে।
এদিকে হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজে ঈদের আগে ছাড় দিলেও এখন দিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেন বেশ কয়েকজন পর্যটক। আবার অনেকেই ভালো মানের রুম না পেয়ে হতাশায় ভোগছেন। রেস্টুরেন্টেও একটু দাম বেশি রাখার অভিযোগ তুলেছেন পর্যটকরা।
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, ‘ঈদের আগে থেকে পর্যটক বরণে প্রস্তুুত ছিলাম আমরা। শুক্রবার থেকে বিপুল সংখ্যক পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে। তাদের সর্বোচ্চ সার্ভিস দিচ্ছি আমরা। অতিরিক্ত দাম কোথাও রাখা হচ্ছে না। যদি এমন হয় তাহলে প্রতিটি রেস্টুরেন্টে আমাদের মোবাইল নম্বর আছে। ফোন করে অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, ‘কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং সেবা দিতে সৈকত ছাড়াও অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকদের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু করেছি আমরা। যেকোনো সমস্যায় পর্যটকরা একটি বাটন চাপ দিয়েই আমাদের সেবা নিতে পারেন।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘ঈদের আগে থেকে আশা করছিলাম পর্যটকে মুখরিত হবে কক্সবাজার। তা ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে হচ্ছে। পর্যটকের সেবা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসন যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। হোটেলে-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত টাকা আদায়, অসাধু ব্যবসায়ীদের হয়রানি বন্ধসহ পর্যটকদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে সমুদ্রসৈকত এবং আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। ভ্রমণ শেষে পর্যটকরা নিরাপদে ফিরুক এটাই আমাদের কামনা।’
Posted ৯:৫৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta