কক্সবাংলা ডটকম(৫ জুলাই) :: চীনের সর্বপশ্চিমে জিনজিয়াং প্রদেশে দেশটির অধিকাংশ উইঘুর জনগোষ্ঠীর বসবাস। ধর্মে মুসলমান হলেও এ জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির সঙ্গে মধ্য ও পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতির বেশ মিল রয়েছে।
চীন সরকার উইঘুর শিশুদের পরিবার, বিশ্বাস ও ভাষা থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে বলে বিবিসির সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। একই সঙ্গে এ জনগোষ্ঠীর কয়েকশ বয়স্ক নাগরিককে কয়েকটি বড় ক্যাম্পে আটক রাখারও খবর পাওয়া গেছে। এদিকে এ জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য কয়েকটি বোর্ডিং স্কুল নির্মাণের জোর ও ব্যাপক প্রচারণা চলছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে একই প্রতিবেদনে।
সচরাচর পাওয়া যায়, এমন তথ্য ও এ জনগোষ্ঠীর কয়েক ডজন নাগরিকের সাক্ষাত্কারের ভিত্তিতে বিবিসির জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উইঘুর শিশু নিয়ে কী হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখাই এ সমীক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।
একটি শহরে ৪০০ শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের মা-বাবা কোনো ক্যাম্প বা জেলে অন্তরীণ রয়েছে বলে কয়েকটি পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে। এ শিশুদের আদৌ কেন্দ্রীয় অভিন্ন শিক্ষা দরকার আছে কিনা, তা যাচাই করে দেখার জন্য কয়েকটি আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন পরিচালনা করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে।
চীন সরকারের বড়দের জাতিগত পরিচয় রূপান্তরিত বা বদলে ফেলার উদ্যোগের পাশাপাশি শিশুদের পদ্ধতিগতভাবে নিজস্ব সংস্কৃতির মূল থেকে সরিয়ে ফেলার প্রচারণা বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
জিনজিয়াং প্রদেশে চীন সরকারের কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা রয়েছে। এ অঞ্চলে সাংবাদিকদের সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখা হয়। ফলে সরেজমিনে কোনো তথ্য সংগ্রহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। মধ্য এশিয়ার সঙ্গে এ জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক সম্পর্ক থাকায় তুরস্কে তাদের অনেকের সাক্ষাৎ মেলে। তাদের মাধ্যমে চীনে ওদের পরিবার ও সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে কিছুটা খবর পাওয়া যায়।
ইস্তাম্বুলের একটি হলঘরে বিবিসিকে নিজেদের করুণ গল্প বলতে জড়ো হওয়া কয়েক ডজন উইঘুর মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের অনেককে জিনজিয়াং থেকে নিখোঁজ শিশুর ছবি আঁকড়ে থাকতেও দেখা যায়। ওই প্রদেশ থেকে নিখোঁজ তিন কন্যার ছবি দেখিয়ে এক মা বলেন, এখন তাদের কে দেখভাল করছে, তা আমি জানি না। তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই।
এদিকে তিন পুত্র ও এক কন্যার ছবির জড়িয়ে কান্নারত এক মা বলেন, ‘আমার সন্তানদের এতিমখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে শুনেছি। সন্তান বা স্বজন হারিয়ে শোকসন্তপ্ত ৬০ জনের সাক্ষাত্কার নিয়েছে বিবিসি, যারা জিনজিয়াং প্রদেশ থেকে ১০০ শিশু নিখোঁজ হওয়ার কথা জানিয়েছে।
জাতি ও ধর্মগত মিল থাকায় জিনজিয়াংয়ের অনেক উইঘুর পড়াশোনা, ব্যবসা, আত্মীয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ কিংবা চীন সরকারের জন্মনিয়ন্ত্রণ আইন থেকে বাঁচতে তুরস্কে পালিয়ে আসেন।
এদিকে চীনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ধর্মীয় নিপীড়ন চালাতে নয়, ধর্মীয় চরমপন্থা থেকে দূরে রাখতে উইঘুরদের জন্য দেশটির সরকার কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলেছে। কিন্তু বিবিসির জরিপ বলছে ভিন্ন কথা—শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস তথা প্রার্থনা বা মুখ ঢাকার কারণে বা তুরস্কের মতো আরো কোনো কোনো দেশের সঙ্গে যোগাযোগ থাকায় তাদের অনেককে আটক রাখা হয়েছে বলে সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র: বিবিসি
Posted ১২:৪১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৬ জুলাই ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta