মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(৩ ডিসেম্বর) :: প্রতিবছরের ন্যায় চলতি মৌসুমে সরকার আমন চাল সংগ্রহ করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী ৩ ডিসেম্বর থেকে উপজেলা পর্যায়ে চাল ক্রয়ের দিক নির্দেশনা দেওয়া হলেও উখিয়া খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেননি।
কৃষকদের অভিযোগ খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ তাদের পুর্বে নির্ধারিত ১২জন মিলারদের সাথে আতাত করে বিগত দিনের ন্যায় এবারও উত্তরবঙ্গ থেকে নি¤œমানের চাল কম দামে ক্রয় করে খাদ্য গুদাম সরবরাহ করবে। এতে স্থানীয় কৃষকেরা সরকার নির্ধারিত ন্যায্যমূল্য থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। যদিওবা মিলারদের নিকট থেকে চাল ক্রয়ের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
কৃষকদের দাবী মিলারেরা স্থানীয় উৎপাদিত চাল সংগ্রহ করে খাদ্য গুদামে সরবরাহ করুক। এতে ক্ষুদ্র,প্রান্তিক ও বর্গাচাষী সহ সব ধরনের কৃষক উপকৃত হবে।
চলতি মৌসুমে সরকার কৃষকদের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে প্রতি কেজি সিদ্ধ চাল ৩৯টাকা ও আতব চাল ৩৮টাকা ক্রয়ের জন্য মূল্য নির্ধারণ করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উখিয়া খাদ্য গুদামে কর্মরত এক কর্মচারী জানান, চাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে যদিওবা মিলারের সাথে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে, তথাপিও উক্ত চাল স্থানীয় কৃষকদের নিকট থেকে ক্রয় করার জন্য বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, ২০১৬সালে ৩৪হাজার মে.টন চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে উখিয়া খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ১২জন মিলারের সাথে চুক্তি বদ্ধ হয়। তখন প্রতি কেজি চালের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩১টাকা।
স্থানীয় ও প্রভাবশালী এসব মিলারেরা তৎকালীন খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সুনীল দত্তের সাথে আতাঁত করে উত্তরবঙ্গ থেকে সরবরাহ এনে নি¤œমানের পঁচা চাল গুদামজাত করতে থাকে। খবর পেয়ে উখিয়া যুবলীগ,ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ খাদ্য গুদামে উপস্থিত হয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে সরবরাহ আনা প্রায় ৮ ট্টাক নি¤œমানের চাল আটক করে।
পরে উভয়ের মধ্যে দফারফার মাধ্যমে উক্ত চাল গুদাম করার ঘটনা নিয়ে উপজেলা কৃষকলীগের নেতাকর্মীরা উখিয়া স্টেশন চত্বরে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ করেন।
সমাবেশে বক্তারা স্থানীয় কৃষকদের নিকট থেকে চাল ক্রয়ের দাবী জানিয়ে নি¤œমানের চাল গুদামজাত করণের অভিযোগে খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষের শাস্তির দাবী জানান। এসময় দায়িত্বরত খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ সুনীল দত্তের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে মূল রহস্য ধামাচাপা দেয়।
দুছড়ি গ্রামের কৃষক আবুল ফজল, ইনানীর কৃষক ছালামত উল্লাহ সহ বেশ কয়েকজন পেশাদার চাষী এসময় অভিযোগ করে বলেন, তারা সরকারী নীতিমালা অনুসরণ করে চাল সরবরাহ করলেও খাদ্য গুদাম কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাত তুলে তাদের চাল গুলো ফেরত দিয়েছে। এভাবে অনেক কৃষক খাদ্য গুদামে চাল বিক্রি করতে এনে ভোগান্তির শিকার হয়েছে।
উখিয়া সদর রাজাপালং কৃষকলীগের সভাপতি সাংবাদিক মোসলেহ উদ্দিন চাল ক্রয়ের ব্যাপারে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, স্থানীয় চাষিদের উৎপাদিত চাল ক্রয় না করে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে পুর্বের মতো উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন স্থান থেকে পঁচা ও নি¤œমানের চাল গুদামজাত করার চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহত করা হবে।
উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ চৌধুরী অনুরূপ মন্তব্য ব্যক্ত করে বলেন, সরকার কৃষকদের স্বার্থে চালের ক্রয়মূল্য বাড়িয়েছে। তা যদি মধ্যস্বত্তভোগীরা কৃষকদের ন্যায্য পাওয়া কেড়ে নেয় তাহলে খাদ্য কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা হবে।
এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উখিয়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মুরশেদুল করিম জানান, তারা এখনো সরকারী ভাবে চাল ক্রয়ের দিকনির্দেশনা পায়নি।
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা এসএম তাহসিমূল হক জানান, ৩ডিসেম্বর থেকে চাল ক্রয়ের ব্যাপারে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা এসেছে। তবে সুনির্দিষ্ট চাল ক্রয়ের নির্দেশনা না পাওয়ার কারনে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করা যায়নি।
Posted ৪:৪৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta