মোসলেহ উদ্দিন,উখিয়া(৩০ ডিসেম্বর) :: কক্সবাজারের উখিয়ায় সেচ সংকটের আশংখায় কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে ৮টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের খাবার ও ব্যবহারের পানি নিশ্চিত করার জন্য প্রায় ৫ হাজার গভীরও অগভীর নলকূল স্থাপন করা হয়েছে।
এতে করে পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় বোরো চাষাবাদের জন্য স্থাপন করা ১৪’শ অগভীর নলকূল পানি শূণ্য হয়ে পড়তে পারে।
গত মৌসুমে স্বাভাবিক থাকার পরও সেচ সংকটের কারণে বোরো চাষাবাদ ব্যাহত হয়। এবার এ আশংখা কৃষকদের আরো ভাবিয়ে তুলেছে।
সরজমিন উখিয়ার রাজাপালং এর কুতুপালং লম্বাশিয়া, মধূরছড়া, বালুখালী, ময়নারঘোনা, হাকিমপাড়া, তাজনিমারখোলা ও শফিউল্লাহ কাটাসহ বিভিন্ন ক্যাম্প এলাকা ঘুরে স্থানীয় কৃষকও রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এ চিত্র ফুটে উঠেছে।
জানাযায়, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় নিশ্চিতকালে বিভিন্ন এনজিও সংস্থা তড়িগড়ি করে যেসব অগভীর যা নলকূল স্থাপন করা হয়েছে তার দুই-তৃতীংশ নলকূল ইতিমধ্যেই অকেজো হয়ে পড়েছে।
ক্যাম্পে কর্মরত আর্ন্তজাতিক এনজিও সংস্থা আইওএম, রেডক্রিসেন্ট,এমএসএফ হল্যান্ড, ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন, ইউএনএইচসিআর, ব্রাক, অক্সফার্ম, পিএইচডি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলা হলে তারা জানান, সুপেয় পানি নিশ্চিত করার জন্য ১৭০ফুট গভীরে প্রায় ৫ হাজার গভীর নলকূপ স্থাপন করা হচ্ছে, যাতে রোহিঙ্গারা পানির অভাবে না পড়ে।
এসব গভীর নলকূপের কারনে চাষাবাদের কোন ক্ষতি হতে পারে কিনা জানতে চাওয়া হলে আইওএম এর প্রোগ্রাম অফিসার সৈকত বিশ^াস জানান, করার কিছু নেই। মানুষ বাচাতে হলে পানির প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বোরো চাষের তেমন কোন ক্ষতির আশংখা করছেন না।
গতকাল শনিবার উখিয়া সদর, দুছড়ি, হরিণমারা, মাছকারিয়া, মধুরছড়া, লম্বাশিয়া, হাঙ্গরঘোনা এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলা হলে তারা জানান, পানির অভাবে তারা বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করতে পারছেনা।
হরিণমারা গ্রামের কৃষক আব্দুল্লাহ (৪৫) জানায়, তার পুকুরের পানি নিষ্কাশন করে বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন করতে হয়েছে। তাও আবার মাটি শক্ত হয়ে যাওয়ার কারনে অনেক চারা নষ্ট হয়ে গেছে। দুছড়ি গ্রামের বর্গাচাষি ছৈয়দ কাশেম (৫০) সে ১ কানি জমি ৫হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে ৭/৮দিন আগে চারা রোপন করেছে।
নলকূপের পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারনে জমিতে সেচ দিতে পারছেনা। যে কারনে চারা লাল বর্ণ হয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
উখিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার শরিফুল ইসলাম চলতি বোরো মৌসুমের সফলতা নির্ভর করছে পানি ও বিদ্যুতের উপর। ৬হাজার ৩শত ২০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা কতটুকু ফলপ্রসু হয় তা এ মুহুর্তে অনুমান করা যাচ্ছেনা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের পানি সরববাহের জন্য যে ভাবে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হচ্ছে, তাতে বোরো চাষের বুমেরাং হওয়ার আশংখা দেখা দিয়েছে।
উখিয়া পল্লীবিদ্যুতের ডিজিএম সালাউদ্দিন জুয়াদ্দারের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, উপজেলার অন্যান্য এলাকা চাইতে পালংখালী এলাকায় বোরো চাষাবাদের উপর গভীর নলকূপের প্রভাব পড়তে পারে। যেহেতু গভীর নলকূপের কারণে পানির স্তর আশংখাজনক ভাবে নিচে নেমে যেতে পারে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন জানান, বর্তমানে পানির স্তর স্বাভাবিকের চাইতে ৫ফুট নিচে নেমে গেছে। সামনে সুষ্ক মৌসুম আরো তীব্রতর হলে পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসানো গভীর নলকূল থেকে পানি ধারণ করা শুরু হলে শুধু বোরো চাষে নয়, বাসা বাড়ীতে পানি সংকট দেখা দিতে পারে।
Posted ২:৫১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta