বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

একজন মহিউদ্দিন চৌধুরী কি আর আসবেন ?

শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭
441 ভিউ
একজন মহিউদ্দিন চৌধুরী কি আর আসবেন ?

তোফায়েল আহমদ(১৫ ডিসেম্বর) :: ২০০৯ সালে পবিত্র হজ্বব্রত পালনের সময়ে পুরো একটি মাস অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে দেখার সুযোগ হয়েছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। সত্যিকারের একজন মানব সেবক তিনি। গতকাল শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠার পর আমার স্ত্রীই জানালেন-আমাদের ‘আরাফাতের বন্ধু’ না ফেরার দেশে চলে গেলেন এমন বিজয়ের মাসটিতে। দিনটিও পবিত্র শুক্রবার। এমন দেশপ্রেমিক মানুষটি চির বিদায় নিলেন নিজ দেশে তথা চাটগাঁর মাটিতে।

আমি স্বস্ত্রীক পবিত্র হজ্বব্রত পালনে গিয়েছিলাম মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ‘মেয়র হজ্ব কাফেলা’র মাধ্যমে। সেই বার চারশ জন হজ্বযাত্রী ছিলেন। তাঁদের বেশীর ভাগই চাটগাঁর বাসিন্দা। হজ্বে যাবার পরেই মরহুম মহিউদ্দিন চৌধুরী খোঁজ নিলেন সাংবাদিক হজ্ব যাত্রীর। আমি তখন দৈনিক জনকন্ঠে সিনিয়র রিপোর্টার হিসাবে কক্সবাজারে কর্মরত। পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে দৈনিক কালের কন্ঠে যোগ দিই।

মহিউদ্দিন চৌধুরী বললেন-তোমার পত্রিকার মালিক কারাগারে। তোমাদের অবস্থাতো কাহিল। এমন দুঃসময়ে তুমি হজ্বব্রত পালন করতে আসছ তাই জানতে চাওয়া। সত্যিই অবাক হলাম- উনি যে কিভাবে আপনজন করতে পারেন সেই পারদর্শিতায়। উনাকে জানালাম এমন অবস্থায়ও জনকন্ঠ কর্তৃপক্ষ আমার দীর্ঘদিনের জমানো প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা হজ্বের জন্য দিয়ে দিয়েছেন। শুনে তিনি বেশ খুশি হলেন।

প্রসঙ্গত বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে ক্ষত বিক্ষত হয়েছিল জনকন্ঠ কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ওয়ান ইলেভেন আসার পর সর্বশেষ দফায় জনকন্ঠ সম্পাদক ও প্রকাশক মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আতিক উল্লাহ খান মাসুদের বিরুদ্ধে কযেকটি মামলা দিয়ে তাঁকেও কারাগারে নিক্ষেপ করেছিল।

মহিউদ্দিন চৌধুরী নিজেও কারাবন্দী ছিলেন ওয়ান ইলেভেনে। কারামুক্তির পর তাঁর বাইপাস সার্জারি করা হয়। তিনি হজ্বের সময় বললেন-আমি কিন্তু লাইফ এক্সটেনশনে রয়েছি। তারপরেও দেখতাম লোকটা আমরা সঙ্গীয় হজ্বযাত্রীদের খোঁজ-খবর নিতেন সবসময়। মক্কা এবং মদীনায় আমাদের একই হোটেলে তিনি ছিলেন। হোটেলে থেকে একই সাথে মসজিদে নবীবী এবং মসজিদে হারামে নামাজে আসা যাওয়াও হত। বাইপাস সার্জারির এই লোকটিকে দেখেছি প্রায় প্রতিদিন আমরা চারশ হজ্বযাত্রীর জন্য রান্নাবান্নার কাজ তদারক করতে।

একদিন দেখি, বুকে গামছা বেঁধে পিতলের বিশাল আকারের ডেকচির মাংশ রান্না করছেন নিজেই। তিনি নিজেই ডেকচির মাংশ নাড়ছেন। সাথে থাকা তাঁর স্ত্রী সহযোগিতা করছিলেন। হোটেলের প্রতিটি রুমেই আমরা হজ্বযাত্রীদের জন্য রান্না করা খাবার পৌঁছে দেয়া হত। দেখি যেদিন তিনি রান্না করেছেন সেটি ছিল উটের মাংশ। যেন আরেক চাটগাঁর ঐতিহ্যবাহী মেজবান। পরের দিন সকালের নাস্তাও দিলেন উটের মাংশ সহ পরটা। মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রায় প্রতিদিনই আমাদের ঠান্ডা শরবত খাওয়াতেন।

পবিত্র আরাফাতের ময়দানে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সেই শরবতের কথা মনে পড়ে। প্রচন্ড গরম। তপ্ত বালুকাময় আর তপ্ত পাথরের পাহাড়ী এলাকা। আমাদের মেয়র হজ্ব কাফেলার তাঁবুটি ছিল বেশ মোটা কাপড়ে আচ্ছাদিত। তাই গরম হয়তোবা একটু কম অনুভব হত। দেখি মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করেও বড় ডেকচি নিয়ে শরবত তৈরি করছেন।

অনেকগুলো ফলের জুসের মিশ্রনে তৈরি করা হত সেই লোভনীয় শরবত। আরাফাতের হজ্বের ময়দানে তিনি নিজ হাতেই বিলিয়েছেন ঠান্ডা শরবত। আরাফাতের আরেক বন্ধু সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খোরশেদ আলম সুজন ভাই জানালেন-প্রতিবারের হজ্বেই যান মহিউদ্দিন চৌধুরী। হজ্বের সময় মহিউদ্দিন চৌধুরী তাঁর বিখ্যাত শরবত নিজ হাতে হাজীদের নিকট বিলি করেই মানুষের সেবা করার জন্য সবাইকে সম্ভবত উদ্ভুদ্ধ করতেন। আবার চাটগাঁর মেজবান দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেয়ার পেছনেও মহিউদ্দিন চৌধুরীর ভুমিকার কথা সবারই জানা। গত কয়েক বছর ধরে টুঙ্গি পাড়ায় জাতির জনকের শাহাদত বার্ষিকীতে তিনি আয়োজন করে আসছিলেন মেজবান।

হজ্ব শেষ হবার পরের দিনই মরহুম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফিরে আসবেন। তাই বেশ তাড়াহুড়ো। এরিমধ্যে তাঁর ভক্তরা বেশ ছুটাছুটি করছেন। মক্কার হোটেল থেকে ফিরতে হচ্ছে জেদ্দার বিমান বন্দরে। শুনলাম মহিউদ্দিন চৌধুরী হোটেল কক্ষেই বেশ রাগান্বিত কন্ঠে চিল্লাচিল্লি করছেন। বিষয়টি জানার লোভ সামলাতে পারছিলাম না। অবশ্য পরে জানলামও।

কোন কোন ভক্ত মিসেস মহিউদ্দিন চৌধুরীকে কিছু বাজার করে দিয়েছিলেন। এসব বাজারের মধ্যে অন্যতম ছিল-তরকারি ও মাংশ কাটার কিছু চাকু (কাটার) এবং আরো অন্যান্য টুকটাক কিছু কাপড় চোপড়। আসলে ফিরার সময় এসব দেখে রেগেছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত জনাব চৌধুরী এসব মালামালের ব্যাগটি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ভক্তদের হাতে। যেভাবে হজ্বব্রত পালনে গিয়েছিলেন সেভাবেই ফিরে আসেন তিনি।

আজ নেই এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরকম একজন মহিউদ্দিন চৌধুরী কি আর আসবেন ? পবিত্র হজ্বে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সেই শরবত এখন কে খাওয়াবেন ? ১৫ আগষ্টে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়াবাসীকে কে খাওয়াবেন চাটগাঁর মেজবান ? চাটগাঁর বন্দর নিয়ে কে দিবেন আন্দোলনের ডাক ? বৃহত্তর চট্টগ্রামের স্বার্থ নিয়ে এখন কে কথা বলবেন ?

-তোফায়েল আহমদ, কক্সবাজারে কর্মরত দৈনিক কালের কন্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার।

441 ভিউ

Posted ১১:৫০ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com