কক্সবাংলা ডটকম(২৩ ডিসেম্বর) :: ব্যাংকিং খাতে লুটপাটের তালিকায় সর্বশেষ নাম এবি ব্যাংক। অতি সম্প্রতিক এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বড় পরিবর্তনের পর বেরিয়ে আসে দুর্নীতি-অনিয়মের নানা তথ্য। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার, বিভিন্ন সময়ে বিএনপিকে অর্থ জোগানসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকটির আজকের এ পরিণতির জন্য বিএনপি নেতা মোর্শেদ খান ও তার ছেলে ফয়সল মোর্শেদ খান দায়ী।
সাম্প্রতিক সময়ে নতুন ব্যাংকের পাশাপাশি পুরনো ব্যাংকেরও হরিলুটের অজানা সব তথ্য বেরিয়ে আসছে। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রথম বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে নানা আলোচনা।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হকসহ পরিচালনা পর্ষদের তিন সদস্য পদত্যাগ করেন। শিগগিরই আরো পরিবর্তন হওয়ার আভাস রয়েছে। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিএনপিকে অর্থ জোগান, বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এবি ব্যাংকের সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হককে অপসারণ ও পাচার করা অর্থের প্রকৃত সুবিধাভোগীকে আড়াল করতে এমন নাটকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য মূলত বিএনপি নেতা মোর্শেদ খানের ছেলে ফয়সল মোর্শেদ খান নেপথ্যে কাজ করছেন।
দেশে এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। ফলে এ খাতে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ, লুটপাট ও দুর্নীতির ঘটনাও বেড়েছে। এতে অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় ব্যাংকিং খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বর্তমানে এই খাত বড় ধরনের ঝুঁকিতে আছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনৈতিক বিবেচনায় নতুন নতুন ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকিং খাতের সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে। অবস্থা এমন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করেও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারছে না।
তথ্যমতে, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত ফয়সল মোর্শেদ খান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিদেশে পলাতক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, চট্টগ্রামের জাহাজ ব্যবসায়ী মাহিন লস্করের প্রতিষ্ঠান মাহিন এন্টারপ্রাইজকে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে এবি ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছেন; যার বেশির ভাগই বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এ ছাড়া মাহিন চট্টগ্রাম বিএনপির অর্থ জোগানদাতা হিসেবেও পরিচিত।
সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মাহিন এন্টারপ্রাইজ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা অল্প সময়ের মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছিল, যা বিএনপির আন্দোলনের জন্য ব্যয় করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
এদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়ার এক পর্যায়ে খুনিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ার পরিস্থিতি দেখা দিলে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর ডালিমের মেয়ে স্বস্তি হক তার ৭১৯, সাত মসজিদ রোডের একটি বাড়ি এবি ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেন।
জান যায়, এবি ব্যাংক কর্তৃক প্রচলিত বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দামে ট্রেনিং একাডেমির নামে ভবনটি কেনা হয়। এই অতিরিক্ত অর্থ মেয়ের মাধ্যমে মেজর ডালিমের কাছে পাঠানো হয় বলে ধারণা করা হয়। ব্যাংক কর্তৃক এ জমি কেনার ক্ষেত্রে ফয়সল মোর্শেদ খান বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
শুধু এতেই ক্ষান্ত থাকেননি ফয়সল।
সূত্রমতে, ফয়সল নিজেও অর্থ পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে নানা অভিযোগও রয়েছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে তার অর্থ পাচারের নানা লোমহর্ষক তথ্য।
জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে এবি ব্যাংক থেকে অফশোর ব্যাংকিংয়ের আওতায় প্রায় ৫৪ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন কৌশলে পাচার করেন ফয়সল। মূলত, তার নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানকে এই বিপুল পরিমাণ ঋণ দেয়া হয় অর্থাৎ বিদেশে পাচার করা হয়।
এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের ইউরো কার নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ মিলিয়ন ডলার ও এটিজেড নামের প্রতিষ্ঠানকে ১০ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়। মোর্শেদ খানের সিঙ্গাপুরের ঠিকানার সঙ্গে ওই প্রতিষ্ঠান দুটির ঠিকানার হুবহু মিল পাওয়া যায়। এর বাইরে নামি প্রতিষ্ঠান রহিম আফরোজকে ৪ থেকে ৫ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয় যা ভারতে পাঠানো হয় বলে জানা গেছে।
এদিকে সিমেট সিটি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ মিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদিত হলেও সমালোচনার কারণে ২০ মিলিয়ন ডলার দুবাইতে স্থানান্তরিত করা হয়। বাকি ৯ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ফয়সল নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিদেশে পলাতক থাকেন। শুধু যে ছেলে ফয়সল মোর্শেদ খানই অর্থ পাচারের সঙ্গে যুক্ত তাই নয়। বাবা মোর্শেদ খানও প্রায় একই অভিযোগে অভিযুক্ত বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, সম্প্রতি চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে ২০ মিলিয়ন ডলার পাচারের যে অভিযোগ উঠেছে, তা মূলত মোর্শেদ খানের জামাতা সাইফুল হকের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক এন্টারপ্রাইজের তদারকিতে সম্পন্ন করা হয়।
২০১৩ সালের এবি ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা ঘাটতির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সাইফুল হক এবি ব্যাংকের আবু হেনা মুস্তাফা কামালকে দুবাইর খুররম আবদুল্লাহর সঙ্গে পরিচয় করে দেন। পরবর্তী সময়ে দুবাইতে বিপুল টাকা বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে পাচার করা হয়। দুবাইতে এই বিনিয়োগের সঙ্গে মোর্শেদ খানের পরিবার জড়িত।
মোর্শেদ খান ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে জাপানি নাগরিক মি. কুণ্ডুসহ একটি কোম্পানি গঠন করেন। ওই কোম্পানির নামে হংকংয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৬ মিলিয়ন ডলার স্থানান্তর করা হয়। হংকং পুলিশ ওই টাকা আটকে দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ফেরদাউস খান এবং এটর্নি জেনারেল হংকংয়ে গিয়ে মামলার আলামত সংগ্রহ করেন।
কোনো অজ্ঞাত কারণে ওই মামলা পরিচালনা করতে দুদক নানা গড়িমসি করে। এর বিরুদ্ধে দুদকের আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে আপিল করা হলে হাইকোর্ট মোর্শেদ খানের বিরুদ্ধে রায় দেন। মোর্শেদ খান আপিল করেন যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে যখন ছেলে ফয়সল পলাতক, তখন এম ওয়াহিদুল হককে মোর্শেদ খান তাদের ডেউন্ডি ও নয়াপাড়া চা বাগান থেকে নিয়ে এসে এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে বসান। দীর্ঘ ৩৫ বছরের সুসম্পর্কের মানুষ ওয়াহিদুল হকের দায়িত্ব পালনকালীন বিদেশে অর্থ পাচার করা হলেও ইদানীং অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আরো অর্থ পাচারের জন্য চাপ দিতে থাকেন।
এতে বাধা সৃষ্টি ও অপারগতা প্রকাশ করলে এম ওয়াহিদুল হককে অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। পাচার করা অর্থের প্রকৃত সুবিধাভোগীকে আড়াল করতেই পদত্যাগের কয়েক দিন আগে বেশ কয়েকটি বৈঠক ডেকে বর্তমান চেয়ারম্যানকে পদত্যাগের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন ফয়সল। তিনি একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমেও চাপ সৃষ্টি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১২ এপ্রিল ব্যাংকিং কার্যক্রমের ৩৫ বছর পূর্ণ করেছে এবি ব্যাংক। ২০১৬ সালে ব্যাংকের নেট সম্পদ মূল্য (এনএভি) দাঁড়িয়েছে ২,৩১১ কোটি টাকায়। গত বছরে ব্যাংকের মোট সম্পদ
Posted ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta